-- বিজ্ঞাপন ---

‘হ্যান্ডস অফ’ আন্দোলনে উত্তাল আমেরিকা, ট্রাম্প-মাস্ক বিরোধিতায় পথে কমলাও

মাত্র চার মাস আগেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়েছেন রিপাবলিকান নেতা ডোনাল্ড ট্রাম্প। কিন্তু ইতিমধ্যেই তাঁর প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত ও একাধিক নীতির বিরুদ্ধে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে বিক্ষোভের আগুন। ট্রাম্প এবং তাঁর ঘনিষ্ঠ পরামর্শক তথা টেসলা-কর্তা ইলন মাস্কের বিরুদ্ধে পথে নেমেছেন হাজার হাজার মার্কিন নাগরিক।

নতুন এই প্রতিবাদ কর্মসূচির নাম— ‘হ্যান্ডস অফ’। শনিবার থেকে দেশের ৫০টি স্টেটের ১,২০০টিরও বেশি জায়গায় এই কর্মসূচির আওতায় মিছিল, সমাবেশ ও প্রতিবাদ আয়োজিত হয়েছে। এতে অংশ নিয়েছে নাগরিক অধিকার সংগঠন, শ্রমিক ইউনিয়ন, LGBTQ+ গোষ্ঠী, পরিবেশবাদী আন্দোলনের কর্মীসহ নানা রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন।

প্রতিবাদকারীদের দাবি— “আমেরিকার কোনও রাজা নেই। এখানে ফ্যাসিবাদ চলবে না।” নিউ ইয়র্ক, লস অ্যাঞ্জেলেস, হিউস্টন, কলোরাডো ও ওয়াশিংটন-সহ একাধিক শহরের রাস্তায় প্রতিদিনই শয়ে শয়ে মানুষ নামছেন পোস্টার, ব্যানার, স্লোগান নিয়ে।

প্রাক্তন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলার সরাসরি সমর্থন
এই ‘হ্যান্ডস অফ’ আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়েছেন আমেরিকার প্রাক্তন ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং ডেমোক্র্যাট নেত্রী কমলা হ্যারিস। ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পের কাছে পরাজিত হয়েছিলেন কমলা। তবুও তিনি বলেন, “দেশবাসীর স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদই গণতন্ত্রের মূল শক্তি।” কমলা হ্যারিসের বিক্ষোভে সরব উপস্থিতি যেন নতুন আশার বার্তা। রিপাবলিকান শাসনের বিরুদ্ধে ডেমোক্র্যাটিক চেতনার জোরালো প্রতিচ্ছবি হয়ে উঠেছেন তিনি। তাঁর বক্তব্যে উঠে এসেছে গণতন্ত্র, সামাজিক নিরাপত্তা ও শ্রমজীবী মানুষের অধিকারের পক্ষে দৃঢ় অবস্থান। এক্স-এ পোস্ট করে তিনি বলেন, “অনির্বাচিত ধনকুবেরদের নয়, এই দেশ চলবে জনগণের কণ্ঠস্বরেই।”

এই বার্তাই যেন বিক্ষোভের শক্তিকে আরও উদ্দীপ্ত করেছে।

রবিবার নিজের এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে কমলা লেখেন—

“আজ আমাদের দেশের প্রতিটি কোণে কোণে ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছেন আমেরিকানরা। সামাজিক নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য এবং শিক্ষার পক্ষে দাঁড়ানোর জন্য আপনাদের ধন্যবাদ। বিক্ষোভকারী শ্রমজীবী মানুষের কণ্ঠস্বর এই সব ‘অনির্বাচিত ধনকুবেরদের’ কণ্ঠকে ছাপিয়ে যাক।”

ট্রাম্প প্রশাসনের বিতর্কিত সিদ্ধান্ত
ট্রাম্প প্রেসিডেন্টপদে বসেই একের পর এক বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে—

প্রশাসনিক পদে ব্যাপক ছাঁটাই

অভিবাসীদের তাড়ানোর নির্দেশ

রূপান্তরকামী ও তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের অধিকার খর্ব করা

বাণিজ্যে নতুন শুল্কনীতি প্রবর্তন

এইসব সিদ্ধান্ত ঘিরে শুধু আমেরিকায় নয়, আন্তর্জাতিক পরিসরেও অসন্তোষ বাড়ছে। ট্রাম্পের শুল্কনীতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের একাধিক দেশ ও মেক্সিকো প্রকাশ্যে উদ্বেগ জানিয়েছে।

মাস্ককেও নিশানায় বিক্ষোভকারীরা
এদিকে ট্রাম্পের প্রভাবশালী উপদেষ্টা ইলন মাস্কের বিরুদ্ধেও উঠেছে সোচ্চার প্রতিবাদ। তাঁর বিরুদ্ধে মূল অভিযোগ— “মেগা টেক কোম্পানির হয়ে সরকার পরিচালনায় প্রভাব খাটানো”। টেসলা ও এক্স-এ কর্মী ছাঁটাই এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের অভিযোগও উঠেছে মাস্কের বিরুদ্ধে।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও সম্প্রসারিত আন্দোলন
এই বিক্ষোভ এখন শুধু আমেরিকাতেই সীমাবদ্ধ নেই। একাত্মতা প্রকাশ করে যুক্তরাজ্য, বেলজিয়াম, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস, জার্মানি, পর্তুগাল, মেক্সিকো এবং পুয়ের্তো রিকোতেও হয়েছে প্রতিবাদ সমাবেশ।

চাপের মুখে হোয়াইট হাউস, তবু নিরুত্তাপ ট্রাম্প
এই বিরোধিতা যতই বাড়ছে, ততই ট্রাম্প প্রশাসন জবাবে নিজেদের অবস্থানে অনড় থাকার বার্তা দিচ্ছে। হোয়াইট হাউসের তরফে জানানো হয়েছে, “দেশকে সুরক্ষিত ও অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী করতে প্রেসিডেন্ট প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। জনতার মতামত শোনা হবে, তবে সিদ্ধান্ত হবে দেশের স্বার্থে।

শেষ কথা
যদিও এই প্রতিবাদ এখনও পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ, কিন্তু বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে প্রথম বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে উঠে এসেছে এই ‘হ্যান্ডস অফ’ আন্দোলন। এখন দেখার বিষয়, এই আন্দোলন কতদূর গড়ায় এবং তার রাজনৈতিক প্রভাব কতটা পড়ে যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক নীতিতে।#ছবি/আনন্দবাজার

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.