-- বিজ্ঞাপন ---

ইস্তাম্বুলের মেয়র একরেম ইমামোগলুর গ্রেপ্তারের পর উত্তাল তুরস্ক

কাজী আবুল মনসুর#
​তুরস্কে সাম্প্রতিক সরকারবিরোধী বিক্ষোভের মূল কারণ ইস্তাম্বুলের মেয়র একরেম ইমামোগলুর গ্রেপ্তার। তিনি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে পরিচিত। ইমামোগলুর বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও সন্ত্রাসবাদে সহায়তার অভিযোগ আনা হয়েছে, যা তিনি অস্বীকার করেছেন। তার সমর্থকরা এই অভিযোগগুলোকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মনে করছেন। ​
ইমামোগলুর গ্রেপ্তারের পর, ইস্তাম্বুলসহ তুরস্কের বিভিন্ন শহরে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়। ইস্তাম্বুলে প্রায় ৩ লাখ মানুষ বিক্ষোভে অংশ নেন, যেখানে পুলিশ রাবার বুলেট ও পিপার গ্যাস ব্যবহার করে তাদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে। আঙ্কারা ও ইজমিরেও একই ধরনের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ​

সরকার বিক্ষোভ দমনে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। শুক্রবার রাতে ৩৪৩ জন বিক্ষোভকারীকে আটক করা হয়। তুরস্কের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা জনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে এই পদক্ষেপ নিয়েছে এবং বিশৃঙ্খলা ও উসকানি বরদাশত করা হবে না। ​ এই পরিস্থিতি তুরস্কের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। ইস্তাম্বুল স্টক এক্সচেঞ্জে বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুদ্রার মান রক্ষায় হস্তক্ষেপ করতে বাধ্য হয়েছে, এবং মুদ্রাস্ফীতি বেড়েছে। ​
ইমামোগলুর গ্রেপ্তার ও এর পরবর্তী বিক্ষোভ তুরস্কের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ও রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। অনেকেই আশঙ্কা করছেন, এরদোয়ানের এই পদক্ষেপ দেশকে স্বৈরতন্ত্রের দিকে নিয়ে যেতে পারে।
একরেম ইমামোগলু (Ekrem İmamoğlu) একজন তুর্কি রাজনীতিবিদ এবং ইস্তাম্বুলের বর্তমান মেয়র। তিনি রিপাবলিকান পিপলস পার্টি (CHP)-এর নেতা এবং প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে পরিচিত। ২০১৯ সালের ইস্তাম্বুলের মেয়র নির্বাচনে তিনি এরদোয়ানের সমর্থিত প্রার্থী বিনালি ইয়িলদিরিমকে পরাজিত করেন। এই নির্বাচনে প্রথমে তার জয়কে বাতিল করে পুনরায় ভোট গ্রহণ করা হয়, কিন্তু পুনর্নির্বাচনেও তিনি প্রায় ৮ লাখ ভোটের ব্যবধানে জয়ী হন। তার এই জয়কে এরদোয়ানের রাজনৈতিক জীবনের সবচেয়ে বড় ধাক্কা হিসেবে ধরা হয়, কারণ ইস্তাম্বুল দীর্ঘদিন ধরে এরদোয়ানের দল একে পার্টির নিয়ন্ত্রণে ছিল।

তিনি কেন জনপ্রিয়?
এরদোয়ানের বিকল্প নেতৃত্ব ইমামোগলু একজন উদারপন্থী নেতা এবং জনগণের মধ্যে তার গ্রহণযোগ্যতা বেশি। তাকে নতুন প্রজন্মের নেতা বলা হয়। তিনি তুরস্কের তরুণদের মধ্যে জনপ্রিয়, কারণ তিনি গণতন্ত্র, নাগরিক স্বাধীনতা, এবং স্বচ্ছ প্রশাসনের পক্ষে কথা বলেন। তিনি শহরের পরিবহন, পানি সরবরাহ, এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়ে কাজ করেছেন। অনেকেই তাকে তুরস্কের ভবিষ্যৎ প্রেসিডেন্ট হিসেবে দেখছেন এবং তিনি ২০২৩ সালের নির্বাচনে এরদোয়ানের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সম্ভাব্য প্রার্থী ছিলেন।

তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যা তার সমর্থকরা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মনে করছেন। তিনি এখন তুরস্কের রাজনৈতিক পরিবর্তনের প্রতীক হয়ে উঠেছেন এবং এই গ্রেপ্তার তাকে আরও জনপ্রিয় করতে পারে। তুরস্কে তার জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকলে, তিনি আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এরদোয়ানের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারেন।
২০২৩ সালের তুরস্কের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে একরেম ইমামোগলুর এরদোয়ানের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হওয়ার সম্ভাবনা ছিল, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি প্রার্থী হননি। এর কারণ ছিল কিছু রাজনৈতিক কৌশল এবং তার বিরুদ্ধে চলমান মামলাগুলো। ইমামোগলু ২০১৯ সালের ইস্তাম্বুল মেয়র নির্বাচনে বড় জয় পাওয়ার পর অনেকেই তাকে এরদোয়ানের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছিলেন। তুরস্কের বিরোধী দলসমূহ (বিশেষ করে তার দল CHP – রিপাবলিকান পিপলস পার্টি) তার জনপ্রিয়তা দেখে তাকে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে বিবেচনা করছিল। ২০২৩ সালের নির্বাচন সামনে রেখে অনেক জরিপে দেখা গেছে,ইমামোগলু এরদোয়ানের বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হতে পারেন। কিন্ত নানা কারনে তিনি পিছিয়ে যান। এরদোয়ানের সরকার ইমামোগলুর বিরুদ্ধে মামলা করেছিল এবং তার রাজনীতি করা নিষিদ্ধ হতে পারে এমন আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল। আদালত তাকে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে ২ বছরের বেশি কারাদণ্ড দেয়, যা তার নির্বাচনে দাঁড়ানোর পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। বিরোধী দলগুলোর জোট (ন্যাশনাল অ্যালায়েন্স) শেষ পর্যন্ত কেমাল কিলিচদারওগলুকে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে বেছে নেয়। ইমামোগলু দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে তার মেয়রের পদে থেকে কাজ চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
যদিও তিনি ২০২৩ সালের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেননি, কিন্তু তিনি এখনো তুরস্কের সবচেয়ে জনপ্রিয় বিরোধী নেতা। অনেকেই মনে করছেন, ২০২৮ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তিনি এরদোয়ানের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হতে পারেন। তার বর্তমান গ্রেপ্তার এবং এরদোয়ানের বিরুদ্ধে চলমান সরকারবিরোধী আন্দোলন তাকে আরও শক্তিশালী নেতা হিসেবে গড়ে তুলতে পারে। ##

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.