বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনুস আজ থাইল্যান্ডের ব্যাংককে অনুষ্ঠিত ষষ্ঠ BIMSTEC শীর্ষ সম্মেলনে BIMSTEC নেতাদের সঙ্গে যোগ দেন। BIMSTEC সদস্য রাষ্ট্রসমূহের সরকারপ্রধানগণ সর্বসম্মতিক্রমে ‘ব্যাংকক ঘোষণা’ এবং ‘BIMSTEC ব্যাংকক ভিশন’ গ্রহণ করেন, যা সংগঠনটিকে টেকসই উন্নয়ন ও গভীরতর অর্থনৈতিক সংহতির পথে পরিচালিত করার জন্য একটি কৌশলগত রোডম্যাপ হিসেবে বিবেচিত।
বাংলাদেশ আগামী দুই বছরের জন্য BIMSTEC-এর সভাপতিত্ব গ্রহণ করে, যা আঞ্চলিক সহযোগিতা ও উন্নয়নের প্রতি বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতিকে পুনরায় নিশ্চিত করে।
প্রধান উপদেষ্টা তাঁর বক্তব্যে BIMSTEC-এর জন্য বাংলাদেশের ভিশন ও অগ্রাধিকারের দিকগুলো তুলে ধরেন। তিনি তাঁর সরকারের অটল প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে জানান, বাংলাদেশ তার সব নাগরিকের—নারী, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুসহ—সংবিধানপ্রদত্ত অধিকার রক্ষায় অঙ্গীকারবদ্ধ।
তিনি BIMSTEC মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (FTA) বাস্তবায়নের জরুরি প্রয়োজনীয়তার কথা জোর দিয়ে বলেন এবং BIMSTEC পরিবহন সংযোগের মাস্টার প্ল্যান বাস্তবায়নের গুরুত্ব তুলে ধরেন। রোহিঙ্গাদের তাদের নিজভূমিতে প্রত্যাবর্তনের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরির লক্ষ্যে রাখাইন রাজ্যে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে মিয়ানমারকে আরও সক্রিয়ভাবে যুক্ত করার জন্য BIMSTEC-এর দৃশ্যমান ও কার্যকর পদক্ষেপের আহ্বান জানান।
থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে সভাপতিত্ব গ্রহণ করে প্রধান উপদেষ্টা একটি গ্রহণযোগ্যতা বক্তব্য প্রদান করেন, যেখানে তিনি একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও কার্যকর BIMSTEC গঠনের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
এর আগে সকালে মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা থাই বিশিষ্টজনদের সঙ্গে একটি প্রাতঃরাশ বৈঠকে মিলিত হন।
কি এই BIMSTEC
দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে কারিগরি ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে গঠিত হয়েছে BIMSTEC—যার পূর্ণরূপ Bay of Bengal Initiative for Multi-Sectoral Technical and Economic Cooperation। ১৯৯৭ সালের ৬ জুন প্রতিষ্ঠিত এই জোটটি বর্তমানে সাতটি সদস্য দেশ নিয়ে গঠিত: বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, নেপাল, ভুটান এবং মিয়ানমার। এই সদস্য রাষ্ট্রগুলো বঙ্গোপসাগরকে ঘিরে একটি কৌশলগত ও অর্থনৈতিক জোট হিসেবে কাজ করছে।
BIMSTEC-এর মূল লক্ষ্য হলো এই অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে বহুমুখী খাতে—যেমন বাণিজ্য, বিনিয়োগ, জ্বালানি, পরিবহন, প্রযুক্তি, কৃষি, দারিদ্র্য দূরীকরণ ও জলবায়ু পরিবর্তন ইত্যাদি বিষয়ে সহযোগিতা বৃদ্ধি করা। বিশ্বের দ্রুত বিকাশমান এই অঞ্চলে BIMSTEC একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এটি দক্ষিণ এশিয়ার SAARC এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ASEAN-এর মধ্যে এক ধরনের সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করছে, যা বৈশ্বিক অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে।
বাংলাদেশ BIMSTEC-এর একজন প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। আঞ্চলিক সংহতি, পরিবহন সংযোগ, জলবায়ু পরিবর্তন ও রোহিঙ্গা সংকটসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বাংলাদেশ এই প্ল্যাটফর্মে সক্রিয় ভূমিকা রেখে চলেছে।
২০২৫ সালের ৬ষ্ঠ BIMSTEC শীর্ষ সম্মেলনে বাংলাদেশ সভাপতিত্ব গ্রহণ করে। এই সময় দেশের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনুস সংগঠনের সামনে বাংলাদেশ সরকারের অগ্রাধিকার ও ভিশন তুলে ধরেন। তিনি BIMSTEC মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (FTA) দ্রুত বাস্তবায়ন এবং BIMSTEC পরিবহন মাস্টার প্ল্যান কার্যকর করার ওপর জোর দেন। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ইস্যুতে মিয়ানমারের সঙ্গে আরও কার্যকরভাবে কাজ করার আহ্বানও জানান।
যদিও BIMSTEC একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তবে এর অগ্রগতি কিছুটা ধীর গতির। সদস্য দেশগুলোর মধ্যে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিভেদ, এবং বাস্তবায়নের ঘাটতি এখনো একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
তবুও, আঞ্চলিক সংযোগ, প্রযুক্তিগত উন্নয়ন, মানবসম্পদ উন্নয়ন এবং জলবায়ু মোকাবেলায় BIMSTEC-এর ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা উজ্জ্বল বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
দুর্নীতি বিরোধী লড়াইয়ে একসঙ্গে কাজ করতে বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ডের মধ্যে সমঝোতা স্মারক সই
বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এবং থাইল্যান্ডের ন্যাশনাল অ্যান্টি-করাপশন কমিশন (NACC) শুক্রবার দুর্নীতি প্রতিরোধ ও মোকাবেলায় যৌথভাবে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা জোরদারের লক্ষ্যে একটি সমঝোতা স্মারক (MoU) সই করেছে।বাংলাদেশের পক্ষে দুদক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন এবং থাইল্যান্ডের পক্ষে NACC-এর প্রেসিডেন্ট সুচার্ট ত্রাকুলকাশেমসুক নিজ নিজ সংস্থার পক্ষ থেকে এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।
এই চুক্তি সইয়ের সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনুস এবং থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী পেতংতার্ন চিনাওয়াত্রা। তাঁরা ব্যাংককে অনুষ্ঠিত BIMSTEC শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে এ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন।
দুদক চেয়ারম্যান ড. আবদুল মোমেন আশা প্রকাশ করেন, এই সমঝোতা স্মারক বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ডকে দুর্নীতিবিরোধী লড়াইয়ে আরও কার্যকরভাবে সহযোগিতা করতে সাহায্য করবে। তিনি বলেন, “বাংলাদেশের অনেক দুর্নীতিবাজ প্রতিবেশী কিছু দেশে আশ্রয় নিয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি, এই চুক্তির মাধ্যমে তাদের শনাক্ত করা ও বিচারের আওতায় আনা সহজ হবে।”
চুক্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, এটি জাতিসংঘের দুর্নীতিবিরোধী কনভেনশনের ৪৮ নম্বর অনুচ্ছেদের আলোকে সই করা হয়েছে, যা আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর মধ্যে দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক সহযোগিতা বৃদ্ধির ওপর জোর দেয়।
এই সমঝোতা স্মারকের আওতায় বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ড দুর্নীতি প্রতিরোধে প্রাসঙ্গিক প্রাথমিক তথ্য আদান-প্রদান করবে, তথ্য সংগ্রহের সর্বোত্তম পদ্ধতিগুলো ভাগাভাগি করবে, যৌথ প্রকল্প গ্রহণ করবে, গবেষণা শেয়ার করবে এবং প্রয়োজনবোধে অন্যান্য সহযোগিতামূলক কর্মসূচি পরিচালনা করবে । ##
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.