বিশেষ প্রতিনিধি, লন্ডন#
বিএনপির তিন সদস্যের প্রতিনিধি দল এবার যুক্তরাষ্ট্রের বার্ষিক আয়োজন ন্যাশনাল প্রেয়ার ব্রেকফাস্ট এ অংশগ্রহণ করবেন। এবার ব্যাতিক্রম হচ্ছে, দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কন্যা ব্যারিস্টার জায়মা রহমানের অংশগ্রহণ। পিতা তারেক রহমানকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও পিতার হয়ে কন্যা প্রতিনিধিত্ব করবেন। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে অনুষ্ঠিতব্য বার্ষিক ন্যাশনাল প্রেয়ার ব্রেকফাস্ট-এ অংশ নিচ্ছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী। এ দু’নেতা বাংলাদেশ থেকে এবং জায়মা রহমান লন্ডন থেকে ওয়াশিংটনে গিয়ে অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন।
জানা গেছে, এই ন্যাশনাল ব্রেকফাস্ট প্রেয়ার ৫-৬ ফেব্রুয়ারি ওয়াশিংটন ডিসিতে অনুষ্ঠিত হবে। গত ১১ জানুয়ারি, ন্যাশনাল প্রেয়ার ব্রেকফাস্ট কমিটি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে অনুষ্ঠানে যোগদানের আমন্ত্রণ জানায়।
এটি হবে জায়মা রহমানের প্রথম কোনো বৈশ্বিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ, যা তার রাজনৈতিক অভিষেক হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। জায়মা রহমান সামাজিক মাধ্যমেও সক্রিয়। তার ফেসবুক পেজে তিনি বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক বিষয়ে মতামত প্রকাশ করে থাকেন। ব্যারিস্টার জায়মা রহমান যুক্তরাজ্যের লন্ডনে আইন বিষয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেছেন। তিনি লন্ডনের লিংকনস ইন (Lincoln’s Inn) থেকে ব্যারিস্টারি সম্পন্ন করেছেন। এর মাধ্যমে তিনি ব্যারিস্টার উপাধি অর্জন করেন।
কি এই ন্যাশনাল প্রেয়ার ব্রেকফাস্ট
ন্যাশনাল প্রেয়ার ব্রেকফাস্ট (National Prayer Breakfast) যুক্তরাষ্ট্রের একটি বার্ষিক আয়োজন, যেখানে রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও সামাজিক নেতারা একত্রিত হয়ে বিশ্বাস, নেতৃত্ব এবং বিশ্বজুড়ে শান্তি ও সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা করেন। এটি মূলত মার্কিন কংগ্রেসের পৃষ্ঠপোষকতায় অনুষ্ঠিত হয় এবং একটি স্বাধীন সংগঠন এই ইভেন্টের আয়োজন করে প্রতি বছর ফেব্রুয়ারির প্রথম বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হয়। ২০২৫ সালে এটি ৫-৬ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে। মার্কিন প্রেসিডেন্টসহ কংগ্রেসের সদস্যরা সাধারণত এতে অংশ নেন। বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক নেতা, ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব, কূটনীতিক এবং সমাজসেবীরা আমন্ত্রিত হয়ে অংশগ্রহণ করেন। এটার মূল উদ্দেশ্য হলো, ভিন্ন ধর্ম ও মতাদর্শের মানুষকে একত্রিত করা। বিশ্ব শান্তি, মানবিকতা, নেতৃত্ব ও সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা করা। এটি কোনো নির্দিষ্ট ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, বরং একটি আন্তঃধর্মীয় ও আন্তর্জাতিক সংলাপের সুযোগ তৈরি করে।
১৯৫৩ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডুইট ডি. আইজেনহাওয়ারের আমলে এটি প্রথমবারের মতো আয়োজন করা হয়। তখন থেকে এটি একটি ঐতিহ্যবাহী ইভেন্টে পরিণত হয়েছে, যেখানে প্রায় সব মার্কিন প্রেসিডেন্ট অংশ নিয়েছেন। এটি মার্কিন রাজনৈতিক ও সামাজিক নীতির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হয়। অনেক নেতা ও নীতিনির্ধারক এখানে বিভিন্ন বৈশ্বিক ইস্যু নিয়ে আলোচনা করেন, যা ভবিষ্যতের কূটনৈতিক সম্পর্কেও প্রভাব ফেলতে পারে। বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাজনীতিবিদ ও বিশিষ্ট ব্যক্তিরাও প্রায়ই আমন্ত্রণ পান। বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান, সরকারপ্রধান, কূটনীতিক ও রাজনৈতিক নেতারা এতে আমন্ত্রিত হন।
এটি আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নের একটি সুযোগ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। যদিও এটি “প্রেয়ার ব্রেকফাস্ট” নামে পরিচিত। মার্কিন প্রশাসনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ নীতি এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এই ফোরামে আলোচিত হয়। এটি বিভিন্ন দেশের রাজনীতিবিদদের জন্য মার্কিন কংগ্রেসের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের একটি সুযোগ।
প্রায় প্রতিটি মার্কিন প্রেসিডেন্ট এই আয়োজনে যোগ দেন ও বক্তব্য রাখেন। মার্কিন কংগ্রেসের সদস্যরা, সেনেট ও হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভসের অনেক সদস্য এতে অংশ নেন। বৈশ্বিক রাজনৈতিক নেতা, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান, বিরোধী দলীয় নেতা ও কূটনীতিকরা আমন্ত্রিত হন। ধর্মীয় ও সামাজিক নেতা, খ্রিস্টান, মুসলিম, ইহুদি, হিন্দু, বৌদ্ধসহ বিভিন্ন ধর্মের নেতারা এতে যোগ দেন। বিভিন্ন দেশের ব্যবসায়ী ও মানবাধিকার কর্মীরা, আন্তর্জাতিক উন্নয়ন, দারিদ্র্য বিমোচন ও মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা ব্যক্তিরাও এতে অংশ নেন।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতাদের আমন্ত্রণ পাওয়ার অর্থ হলো, আন্তর্জাতিক মহলে বাংলাদেশ এবং তার রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আগ্রহ ও কূটনৈতিক সংযোগের ইঙ্গিত। এটি কোনো আনুষ্ঠানিক বৈঠক না হলেও, এখানে অংশগ্রহণকারীরা আমেরিকান নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ পেয়ে থাকেন। ভবিষ্যতের কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে।##
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.