-- বিজ্ঞাপন ---

চিন-মার্কিন শুল্কযুদ্ধ চরমে, বিশ্ব অর্থনীতিতে চলছে অস্থিরতা

১৪৫% শুল্ক আমেরিকায় চিনা পণ্যে, পাল্টা ১২৫% চিনে মার্কিন পণ্যে

কাজী আবুল মনসুর#
বিশ্বের দুই বৃহত্তম অর্থনীতির মধ্যে শুল্কযুদ্ধের নতুন অধ্যায় শুরু হল প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষণার মাধ্যমে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এখন চিনা পণ্যের উপর শুল্কের হার দাঁড়িয়েছে ১৪৫ শতাংশ। পাল্টা হিসেবে চিনও মার্কিন পণ্যে শুল্ক বাড়িয়ে করেছে ১২৫ শতাংশ। বিশ্লেষকদের মতে, চীনের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি এখনও বিশাল। ২০২৪ সালের তথ্য অনুযায়ী— যুক্তরাষ্ট্র চীন থেকে পণ্য আমদানি করেছে প্রায় ৫৫০ বিলিয়ন ডলার মূল্যের। অপরদিকে, চীনে যুক্তরাষ্ট্রের রফতানি ছিল মাত্র ১৪০ বিলিয়ন ডলার। এই বাণিজ্য ঘাটতি দীর্ঘদিন ধরেই ট্রাম্প প্রশাসন ও বর্তমান বাইডেন প্রশাসনের কৌশলগত উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।চীন এখন ইউরোপীয় ইউনিয়নের (EU) সাথে বাণিজ্য জোরদারের চেষ্টা করছে। চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ইতোমধ্যেই স্পেন ও ফ্রান্স সফর করেছেন এবং ইউরোপকে “বিশ্ব অর্থনীতির ভারসাম্য রক্ষায় যুক্তরাষ্ট্রনির্ভরতা কমাতে” আহ্বান জানিয়েছেন।

যুক্তরাষ্ট্র অভিযোগ করছে, চীন বাজার বিকৃতিমূলক ভর্তুকি দিয়ে পণ্য রফতানি করছে—বিশেষত ইলেকট্রিক যানবাহন, সৌর প্যানেল ও মাইক্রোচিপে। চীন এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের এই শুল্কনীতি “আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নীতির পরিপন্থী” এবং “রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত”।

এরই মধ্যে নিউ ইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জে (NYSE) প্রযুক্তি খাতের শেয়ারগুলোতে বড় ধস নেমেছে। চীনের সাংহাই কম্পোজিট সূচকও গত ২৪ ঘণ্টায় ৩.২% কমে গেছে। বিশ্ববাজারে জ্বালানি ও কাঁচামালের দাম বেড়ে গেছে, কারণ বাণিজ্য অনিশ্চয়তায় সরবরাহ চেইনে সমস্যা দেখা দিতে পারে।

ট্রাম্প পিছু হটতে রাজি নন, বরং সামাজিক মাধ্যমে শুল্কনীতির প্রশংসা করেছেন। মার্কিন প্রশাসন জানিয়েছে, প্রথমে চিনকেই আলোচনার উদ্যোগ নিতে হবে। যদিও হোয়াইট হাউস ইঙ্গিত দিয়েছে, ভবিষ্যতে সমঝোতার সুযোগ থাকতে পারে।

চিনের অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন, এই নতুন শুল্কনীতি কার্যত আমেরিকা থেকে পণ্য আমদানি অসম্ভব করে তুলবে। এর জেরে চিনে মার্কিন পণ্যের প্রবেশ একপ্রকার বন্ধ হতে বসেছে। একইসঙ্গে আমেরিকার বাজারেও এর প্রতিকূল প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। শেয়ার বাজারে টানা পতন দেখা দিয়েছে।

তবে এই পরিস্থিতিতে কোনও পক্ষই আপাতত নমনীয় হওয়ার ইঙ্গিত দেয়নি। ট্রাম্প নিজের সামাজিক মাধ্যমে লেখেন, “শুল্কনীতি নিয়ে আমরা খুব ভাল কাজ করছি। এটা আমেরিকা এবং সারা বিশ্বের জন্য খুব উত্তেজনাকর সময়।” মার্কিন প্রশাসন স্পষ্ট জানিয়েছে, আলোচনার জন্য প্রথম পদক্ষেপ চিনকেই নিতে হবে।

তবে এক বৈপরীত্যপূর্ণ বার্তায় হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আলোচনায় আগ্রহী। “শি জিনপিং আমার বহুদিনের বন্ধু,” — বলেন ট্রাম্প। “আমার বিশ্বাস, আমরা এমন একটি সমঝোতায় পৌঁছাতে পারব, যা দুই দেশের পক্ষেই লাভজনক হবে।”

চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে বৈঠকে বলেন, “একতরফা শুল্ক আরোপের বিরুদ্ধে চিন ও ইউরোপকে একজোট হয়ে কাজ করতে হবে।” যদিও চিনের প্রস্তাবে অস্ট্রেলিয়া অংশ নিতে অস্বীকার করেছে।

উল্লেখযোগ্যভাবে, গত ৯ এপ্রিল থেকে ট্রাম্পের ঘোষিত বাড়তি শুল্ক কার্যকর হওয়ার কথা ছিল। যদিও বাকি দেশগুলির ক্ষেত্রে ৯০ দিনের স্থগিতাদেশ দেওয়া হলেও, চিনের ক্ষেত্রে বরং শুল্ক আরও বাড়ানো হয়েছে।

বিশ্ব বাজারে এই শুল্ক যুদ্ধের প্রভাব স্পষ্ট। বিনিয়োগকারী ও আন্তর্জাতিক ব্যবসায়ীরা উদ্বিগ্ন। অর্থনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই অস্থিরতা দীর্ঘস্থায়ী হলে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে বড়সড় ধাক্কা লাগতে পারে।##

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.