সিরাজুর রহমান#
গবেষকরা উদ্ভিদের পরাগায়ন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে সক্ষম ক্ষুদ্র রোবট পোকা তৈরি করেছেন। এই অত্যাধুনিক রোবট পোকাগুলো প্রাকৃতিক পরাগায়নের বিকল্প হিসেবে কাজ করবে। এগুলো মূলত ছোট ড্রোনের মতো যন্ত্র, যা ফুলের পরাগ সংগ্রহ করে তা সঠিক স্থানে ছড়িয়ে দিতে সক্ষম। পরাগায়নের জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন উপাদান যেমন: ফুলের উপর নির্ভুলভাবে অবস্থান করা, পরাগ ধূলিকণা সংগ্রহ করা, এবং সেগুলো অন্য ফুলে পৌঁছে দেওয়া—এগুলোর জন্য রোবটগুলোতে অত্যাধুনিক সেন্সর ও সফটওয়্যার ব্যবহার করা হয়েছে।
গবেষকদের মতে, পরিবেশ দূষণ, কীটনাশকের অত্যধিক ব্যবহার, এবং প্রাকৃতিক পরাগায়নকারী পোকামাকড়ের সংখ্যা হ্রাস পাওয়ার কারণে উদ্ভিদের পরাগায়ন প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টি হচ্ছে। এই সমস্যা সমাধানে এই রোবটগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে আমেরিকার সরকারের সাম্রাজ্যবাদী এবং ভয়ংকর যুদ্ধনীতির কারণে ব্যাপক কুখ্যাতি অর্জন করলেও বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নে শতাব্দী ব্যাপী দেশটির অবদান কিন্তু এড়িয়ে যাওয়া যায় না। বিশেষ করে আমেরিকার আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নির্ভর উচ্চস্তরের শিক্ষা ব্যবস্থা এবং গবেষণাগার গড়ে তোলা এবং এক্ষেত্রে শত বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগকে কিছু ছোট করে দেখার কোন সুযোগ নেই।
বিশ্বের সেরা এবং প্রথম স্থানীয় উচ্চস্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে দেশটির ম্যাসাচুসেট্স ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি (এমআইটি) বর্তমানে বৈশ্বিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নের এক বাতিঘর হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। বর্তমানে ম্যাসাচুসেট্স ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি (এমআইটি) বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক বিভিন্ন কীটপতঙ্গের মতো ফুল থেকে ফুলে ঘুরে বেড়িয়ে পরাগায়ন ঘটাতে সক্ষম এমন ক্ষুদ্র রোবট নিয়ে গবেষণা করছেন।
গবেষকদের তৈরি এই উড়ন্ত মাইক্রো রোবটিক পোকা কিন্তু পাখি বা পোকামাকড়ের মতো ডানা ঝাপটাতে পারে। এর দৈর্ঘ্য এবং প্রস্থ ৪ সেমি, উচ্চতা ০.৯ সেমি এবং ওজন মাত্র ৭৫০ মিলিগ্রাম। এর চারটি ঝাঁকুনিযুক্ত ডানা সব দিকে সংযুক্ত করা হয়েছে। তাদের তৈরি এই রোবটিক মৌমাছিটি এখনো পর্যন্ত প্রায় ১ হাজার সেকেন্ড যাবত বাতাসে ঘোরাফেরা করতে সক্ষম হয়েছে। যা কিনা পূর্বে প্রমাণিত পরীক্ষার চেয়েও কিন্তু ১০০ গুণ বেশি ছিল।
এই রোবোটিক পোকাটি, একটি কাগজের ক্লিপের চেয়েও হালকা এবং এটি ০.৩৫ মি/সেকেন্ড গতিতে উড়তে পারে। তাছাড়া এটি একই ধরনের উড়ন্ত রোবটের চেয়ে অনেক দ্রুত, ডাবল এরিয়াল ফ্লিপের মতো অ্যাক্রোবেটিক কৌশল প্রদর্শন করতে সক্ষম। এই রোবটিকে সর্বাধিক ৫০০ মিলিগ্রাম পর্যন্ত ওজন বহন করার উপযোগী করে ডিজাইন করা হয়েছে। তাছাড়া এটিতে ভবিষ্যতে অতি ক্ষুদ্র আকারের উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন ইমেজিং সেন্সর বা ক্যামেরা স্থাপন করা হবে।
আসলে অনেকটাই ছোট আকারের মৌমাছির মতো দেখতে পরাগায়ন করতে পারে এমন ক্ষুদ্র আকারের উচ্চ প্রযুক্তির এআই রোবটিক পোকা তৈরি করে এক নতুন যুগের সূচনা করতে যাচ্ছে এই গবেষক দলটি। এমনও হতে পারে ভবিষ্যতে হয়ত পরিবেশ দূষণ এবং প্রাকৃতিক কিংবা মানব সৃষ্ট বিপর্যায়ের ফলে পৃথিবী থেকে পাখি এবং কীট পতঙ্গের একটি বড় অংশ বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে। যার ফলে চরমভাবে বিঘ্নিত হতে পারে উদ্ভিদের পরাগায়ন এবং বংশ বৃদ্ধি এবং ফসল উৎপাদন।
বর্তমানে এসব রোবট পোকা অনেকটা পরীক্ষামূলক বা প্রোটোটাইপ পর্যায়ে থাকলেও অদূর ভবিষ্যতে হয়ত মানব জাতির খাদ্য সুরক্ষা এবং উদ্ভিদের কার্যকর পরাগায়ন নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। তার পাশাপাশি ‘মাল্টিলেভেল ইনডোর’ খামারে ফসল ফলানোর বড় ধরনের সুযোগ করে দিতে পারে। তাছাড়া যা ফসলের ফলন বাড়াতে ও কৃষির ওপর পরিবেশগত প্রভাব কমিয়ে আনতে সহায়ক হবে বলে মনে করেন গবেষকেরা।
তথ্যসূত্র: Chosun Biz, আর্থ ডটকম, এমআইটি, নিউ সায়েন্টিস্ট।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.