বিশেষ প্রতিনিধি#
চীনের তিব্বতে ভয়াবহ ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। রিখটার স্কেলে মাত্রা ৭দশমিক ১। এখন পর্যন্ত ১২৬ জনের মৃত্যু নিশ্চিত করেছে প্রশাসন। সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। মঙ্গলবার স্থানীয় সময় সকাল ৯টা ৪৫ মিনিটে ৭.১ মাত্রার এই ভূমিকম্প তিব্বতের তিংরি প্রদেশে আঘাত হানে। মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ (USGS) জানিয়েছে, ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ছিল মাটি থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার গভীরে। এর প্রভাবে তিব্বত ছাড়াও নেপাল, ভুটান এবং ভারতের উত্তরাঞ্চলের কিছু অংশেও কম্পন অনুভূত হয়।
এখন পর্যন্ত ১২৬ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করা হয়েছে। ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে ১৩০ জনকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। তবে উদ্ধারকাজ চলমান থাকায় মৃত ও আহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। রয়টার্সের রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রায় ৮ লক্ষ মানুষ এই ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, ১,০০০-এরও বেশি ঘরবাড়ি সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়েছে। অনেক গ্রামে পানীয় জল, বিদ্যুৎ ও যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।
তিব্বতের শিগাতসে অঞ্চলে উদ্ধার অভিযান জোরদার করা হয়েছে। চীনা প্রশাসন, সেনাবাহিনী এবং স্থানীয় উদ্ধারকারী দলসমূহ উদ্ধারকাজে নিয়োজিত। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ধ্বংসস্তূপে আটকে পড়া লোকজনকে খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে। আহতদের কাছাকাছি হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। জরুরি চিকিৎসার জন্য মোবাইল মেডিকেল টিম মোতায়েন করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলে খাদ্য, ত্রিপল এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী পাঠানো হয়েছে।
জানা গেছে, তিংরি প্রদেশ, যা এভারেস্টের উত্তরের প্রবেশদ্বার হিসাবে পরিচিত, ভূমিকম্পের সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চল। এটি পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় উদ্ধার কাজ ধীরগতিতে চলছে। বিভিন্ন জায়গায় ভূমিধসের কারণে রাস্তা বন্ধ হয়ে গেছে, যা উদ্ধারকাজের বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। নেপাল এবং ভুটানের কিছু অংশেও শক্তিশালী কম্পন অনুভূত হয়েছে। তবে সেসব অঞ্চলে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। ভারতের উত্তরাঞ্চল, বিশেষ করে সিকিম, পশ্চিমবঙ্গ এবং উত্তরাখণ্ডে হালকা থেকে মাঝারি মাত্রার কম্পন অনুভূত হয়েছে।
ভূতাত্ত্বিকরা জানিয়েছেন, মূল ভূমিকম্পের পর পরই বেশ কয়েকটি আফটারশক (পরবর্তী কম্পন) অনুভূত হয়েছে। এতে স্থানীয় জনগণের মধ্যে আতঙ্ক আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। আবহাওয়ার প্রতিকূলতার কারণে উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রম আরও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে। এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা প্রয়োজন হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। তিব্বতের প্রশাসন ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের জন্য দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার কথা ভাবছে।
ভারতের গণমাধ্যম আনন্দবাজার জানায়, তিব্বতের ভূমিকম্পে এখনও পর্যন্ত ১২৬ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। আহতদের উদ্ধার করা হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে হাজারেরও বেশি ঘরবাড়ি। ভূমিকম্পের ধাক্কা কাটিয়ে শুরু হয়েছে উদ্ধারের চেষ্টা। মৃত এবং আহতের সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। মঙ্গলবার সকালে ৭.১ তীব্রতার জোরালো ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে তিব্বত। যার প্রভাব পড়ে নেপাল, ভুটান এবং ভারতেও। সংবাদ সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, শিগাতসের এই ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন অন্তত আট লক্ষ মানুষ। ভূমিকম্পের উৎসস্থল তিব্বতের তিংরি প্রদেশে। এই অঞ্চলটিকে এভারেস্টের উত্তরের প্রবেশদ্বার হিসাবে দেখা হয়।
প্রথম জোরালো ভূমিকম্পের ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে না-উঠতে পর পর কম্পন (আফটারশক) হতে থাকে ওই অঞ্চলে। সংবাদমাধ্যম ‘দ্য গার্ডিয়ান’ জানিয়েছে, প্রথম ভূমিকম্পের পর ৪০টিরও বেশি কম্পন হয়েছে সেখানে। তার মধ্যে ১৬টি কম্পনের মাত্রা ছিল ৩-এর বেশি। ভূমিকম্পের পর বেশ কিছু ভিডিয়োও সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে, যার সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন। তবে একটি ভিডিয়ো প্রকাশ করেছে রয়টার্স। তারা জানিয়েছে, ওই ভিডিয়োটি তিব্বতের লাৎসে শহরের কাছে। ভিডিয়োয় দেখা যাচ্ছে, রাস্তার ধারে দোকান ভেঙে পড়েছে। ধ্বংসাবশেষ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে রাস্তার উপর। সংবাদমাধ্যম ‘দ্য গার্ডিয়ান’-এর এক প্রতিবেদন অনুসারে, ভূমিকম্পের উৎসস্থলের কাছাকাছি অঞ্চলে প্রচুর ভবন ভেঙে পড়েছে।
সাধারণত এই ধরনের জোরালো মাত্রার কোনও ভূমিকম্পের জেরে মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা থাকে। চিনের সরকারি সংবাদ সংস্থা জিনহুয়া জানিয়েছে, সরকারি আধিকারিকেরা ভূমিকম্পের জেরে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাপ জানার চেষ্টা করছেন। ক্ষতিগ্রস্ত শহরগুলির মৃত এবং আহতের সংখ্যা জানার চেষ্টা চালাচ্ছে প্রশাসন।
তিব্বতে ভূমিকম্পের উৎসস্থল থেকে প্রায় ৪০০ কিলোমিটার দূরে নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডু। সেখানেও কম্পন অনুভূত হয়েছে। প্রাণভয়ে বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে আসেন কাঠমান্ডুর বাসিন্দারা। প্রভাব পড়েছে এভারেস্টের পাদদেশে অবস্থিত নেপালের সোলুখুম্বু জেলাতেও। সেখানকার মুখ্য জেলা আধিকারিক অনোজ রাজ ঘিমিরে রয়টার্সকে জানিয়েছেন, সোলুখুম্বুতে জোরালো কম্পন অনুভূত হয়েছে। তবে এখনও পর্যন্ত কারও মৃ্ত্যু বা আহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। নেপালের স্থানীয় পুলিশ, নিরাপত্তা বাহিনী এবং স্থানীয় প্রশাসন ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানার চেষ্টা করছে। ভুটানের রাজধানী থিম্পু এবং উত্তর-পূর্ব ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে, বিশেষ করে বিহার, উত্তরবঙ্গ, সিকিমের মতো জায়গাগুলিতে কম্পন অনুভূত হয়েছে।
এর আগে ২০২৩ সালের নভেম্বরেও ৬.৪ মাত্রার জোরালো ভূমিকম্প হয় নেপালে। সেই বারের ভূমিকম্পে শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয় হিমালয়ের কোলে থাকা এই পাহাড়ি দেশে। ২০০৮ সালে দক্ষিণ পশ্চিম চিনের সিচুয়ান প্রদেশে এক ভূমিকম্পে প্রায় ৭০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। ২০১৫ সালে নেপালের কাঠমান্ডুর কাছেও ৭.৮ মাত্রার এক জোরালো ভূমিকম্প হয়। তাতে প্রায় ৯ হাজার মানুষ প্রাণ হারান। আহত হন কয়েক হাজার মানুষ। ক্ষয়ক্ষতির হিসাবে সেটিই নেপালের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ভূমিকম্প। নেপাল, উত্তর-পূর্ব ভারত এবং দক্ষিণ-পশ্চিম চিনে মাঝেমধ্যেই ভূমিকম্পের খবর পাওয়া যায়। বিজ্ঞানীদের একাংশের মতে, ভারতীয় পাতের সঙ্গে ইউরেশীয় পাতের সংঘর্ষের প্রবণতার কারণে এই অঞ্চলে ভূমিকম্পের আশঙ্কা বেশি থাকে।##
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.