-- বিজ্ঞাপন ---

ইরান ও আমেরিকার মধ্যে যুদ্ধের আশঙ্কা: নতুন পরিস্থিতি এবং সম্ভাব্য প্রভাব

সিরাজুর রহমান#
সাম্প্রতিক সময়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সরাসরি ইরানে সামরিক হামলার হুমকির ফলে আবারো মধ্যপ্রাচ্যে ভয়াবহ যুদ্ধ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী ইতোমধ্যে মধ্যপ্রাচ্যে তাদের সক্ষমতা কয়েকগুণ বৃদ্ধি করেছে। এর আগে ট্রাম্প ঘোষনা দেন যে, আমেরিকার সাথে পরমাণু ইস্যুতে ডিল না করলে ইরানে এমনভাবে বোমা ফেলবে যা ইরান আগে কখনো কল্পনা করেনি।
আমেরিকা কিন্তু ইতোমধ্যে মধ্যপ্রাচ্যে দুটি ক্যারিয়ার স্ট্রাইক ব্যাটল গ্রুপ মোতায়েন করে রেখেছে। কাতারের ইসা এয়ার বেইজে আমেরিকার ১৩ টি সি-১৭ গ্লোবমাস্টার মিলিটারু কার্গো প্লেন ল্যান্ড করেছে এবং সমগ্র মধ্যপ্রাচ্যে সামরিক উপস্থিতি অনেকটাই বৃদ্ধি করেছে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র এখন ভারত মহাসাগরের দিয়েগো গার্সিয়া ঘাঁটিতে নতুন করে তিনটি বি-২ স্পিরিট হেভি বোম্বার বিমান মোতায়েনকে কেন্দ্র করে এক নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতি হিসেবে মনে করেন আন্তর্জাতিক পর্যায়ের সামরিক বিশ্লেষকেরা।
তাছাড়া অতীতে ইরাকের সাদ্দাম হোসেনের সামরিক বাহিনীকে পরাস্ত করতে ঠিক একইভাবে দিয়েগো গার্সিয়া ঘাঁটিতে লং রেঞ্জের হেভি যুদ্ধবিমান মোতায়েন করেছিল আমেরিকা। এর পাশাপাশি বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যে ৪০ হাজারের অধিক সেনাসহ দুটি সুপার এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার মোতায়েন করেছে আমেরিকা। এদিকে ইরান তার সামরিক বাহিনীকে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় মোতায়েন করেছে। আমেরিকার যে কোন বিমান হামলার শক্ত পালটা জবাব দিতে তাদের মিসাইল সিটিকে প্রস্তুত করেছে।
গত ২০২০ সালের এক প্রতিবেদনের তথ্যমতে, ইরানের সামরিক বাহিনীর হাতে খুব সম্ভবত প্রায় ২০ হাজারের অধিক শর্ট ও মিডিয়াম রেঞ্জের ব্যালেস্টিক মিসাইল এবং ৪ হাজারের কাছাকাছি কমব্যাট ড্রোন মজুত রয়েছে। যা কিনা ইতোমধ্যেই সারা দেশব্যাপী ছড়িয়ে থাকা একাধিক গোপন মিসাইল সিটিতে পূর্ণ যুদ্ধকালীন অবস্থায় মোতায়েন সম্পন্ন করেছে ইরানের বিপ্লবী বাহিনী।
তবে ইরানের মূল সমস্যা হল আমেরিকার অত্যন্ত দূরবর্তী দিয়েগো গার্সিয়া ঘাঁটিতে মিসাইল হামলা চালানোর মতো লং রেঞ্জের মিসাইল বাস্তবে না থাকলেও আমেরিকার সম্ভাব্য হামলার পালটা শক্ত জবাব দিতে ডিয়েগো গার্সিয়া ঘাঁটিকে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করার হুমকি দিয়েছে। যদিও অতটা দূরত্বে ইরানের হামলা চালানোর মতো প্রযুক্তিগত সক্ষমতা নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন।
ইরান থেকে ডিয়েগো গার্সিয়া ঘাঁটির দূরত্ব প্রায় ৩,৮৪৬ কিলোমিটার। বর্তমানে ইরানের হাতে এমন কিছু লং রেঞ্জের কমব্যাট ড্রোন এবং ব্যালেস্টিক মিসাইল রয়েছে, যা কিনা সহজেই এই দূরত্ব অতিক্রম করে আমেরিকার সামরিক ঘাটির উপর পালটা হামলা চালানোর মতো ক্ষমতা রাখে।
বিশেষ করে ইরানের তৈরি ৪ হাজার কিলোমিটার রেঞ্জের শাহিদ-১৩৬বি সুসাইডাল কমব্যাট ড্রোন এবং ৪ হাজার ৩০০ কিলোমিটার রেঞ্জের খোররামশাহর-৪ ব্যালেস্টিক মিসাইল যে কোন এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমকে ফাঁকি দিয়ে তার নির্ধারিত লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালাতে সক্ষম বলে দাবি করা হয়। তবে এই জাতীয় ড্রোন ও মিসাইল খুব একটা বেশি পরিমাণে ইরানের আইআরজিসি বিপ্লবী বাহিনীর হাতে নেই। তবে মধ্যপ্রাচ্যে থাকা আমেরিকার যে কোন সামরিক ঘাটিতে কমব্যাট ড্রোন ও ব্যালেস্টিক মিসাইল হামলা চালানোর মতো সক্ষমতা রয়েছে ইরানের।
ইরান তার বন্ধুভাবাপন্ন দেশ হিসেবে চীন ও রাশিয়ার কাছ থেকে লং রেঞ্জের ব্যালেস্টিক মিসাইল পাওয়ার খবর রটলেও আমার দৃষ্টিতে বাস্তবে তা হওয়ার সম্ভবনা খুবই কম। এদিকে ইরানের বিমান বাহিনীর এয়ার ফ্লিটের আকার ও সক্ষমতা যে পর্যায়ে রয়েছে তা দিয়ে কার্যকরভাবে ইসরাইল ও আমেরিকার বিমান হামলা প্রতিহত করা সম্ভব হবে বলে মনে হয়না।
তবে আশার কথা হলো যে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বারবার ইরানে সামরিক হামলার হুমকি দিয়ে গেলেও, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার ও কুয়েত স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে যে, তাদের ভূমি বা আকাশসীমা ব্যবহার করে আমেরিকা ইরানের উপর হামলা চালাতে পারবে না বা তারা হালমা করতে অনুমতি দিবেনা।
আরব দেশগুলোর এই সিদ্ধান্তকে আমেরিকার জন্য একটি বড় ধাক্কা বলে মনে করা হলেও বাস্তবতা বলছে ভিন্ন কিছু কথা। তার কারণ বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যের আরব দেশগুলোর সাথে ইরান ও তুরস্কের বেশ ভালো কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বজায় থাকলেও আরব দেশগুলো নিজেদের স্বার্থে মধ্যপ্রাচ্যে ইরান ও তুরস্কের প্রভামুক্ত দেখতে চায়।
১৯৯০ সাল থেকে মধ্যপ্রাচ্যে যতগুলো যুদ্ধ হয়েছিল, এসব যুদ্ধে আরব দেশগুলো পশ্চিমা দেশগুলোর পেছনে অত্যন্ত গোপনে হলেও বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ব্যয় করে গেছে। এমনকি বছর খানেক আগে খবর বা গুজব রটে যে, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানকে উৎখাত করতেও নাকি কিছু আরব দেশ গোপনে প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলার খরচ করে। যদিও এর সত্যতা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে এখন আবার ইরানের উপর যে সামরিক আগ্রাসনের মতো ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে সেখানেও আরব দেশগুলো গোপনে অর্থায়ন যে করবে না তা নিশ্চিতভাবে বলা সম্ভব নয়।##

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.