কাজী আবুল মনসুর#
সম্প্রতি হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাস (hMPV) নিয়ে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আলোচনা হচ্ছে। এই ভাইরাসটি নিয়ে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। তবে, এটি সত্যিই নতুন এবং বিপজ্জনক কি না, তা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের ব্যাখ্যা জানতে হবে।
hMPV: কী এই ভাইরাস?
হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাস (hMPV) একটি শ্বাসযন্ত্রের ভাইরাস যা সাধারণ সর্দি-কাশির মতো উপসর্গ সৃষ্টি করে। ২০০১ সালে নেদারল্যান্ডসে এই ভাইরাস প্রথম সনাক্ত করা হয়। এটি প্যারামিক্সোভাইরাস পরিবারের অন্তর্ভুক্ত এবং বয়স্ক ব্যক্তি, শিশু, এবং দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার ব্যক্তিদের মধ্যে বেশি দেখা যায়।
উপসর্গ কী কী?
এই ভাইরাসের সংক্রমণে সাধারণত নিম্নলিখিত উপসর্গগুলো দেখা যায়:
জ্বর
কাশি
গলা ব্যথা
নাক দিয়ে পানি পড়া বা নাক বন্ধ হওয়া
শ্বাসকষ্ট
বুকে ঘড়ঘড় শব্দ (হুইজিং)
যদিও উপসর্গ সাধারণত মৃদু থাকে, তবে গুরুতর ক্ষেত্রে নিউমোনিয়া বা ব্রংকিওলাইটিস হতে পারে। বিশেষ করে শিশু এবং বয়স্ক ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে এই ঝুঁকি বেশি।
সংক্রমণ কীভাবে ছড়ায়?
hMPV সংক্রমণ সাধারণত শ্বাসযন্ত্রের ড্রপলেটের মাধ্যমে ছড়ায়। একজন সংক্রমিত ব্যক্তি হাঁচি-কাশি দিলে, বা সংক্রমিত পৃষ্ঠ স্পর্শ করার পর চোখ, নাক বা মুখ স্পর্শ করলে এটি ছড়াতে পারে।
চিকিৎসা এবং প্রতিরোধ:
এই ভাইরাসের জন্য কোনো নির্দিষ্ট অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ বা ভ্যাকসিন নেই। চিকিৎসা সাধারণত উপসর্গ উপশমে সীমাবদ্ধ, যেমন:
জ্বর কমানোর ওষুধ ব্যবহার
পর্যাপ্ত বিশ্রাম
পর্যাপ্ত পানি এবং তরল গ্রহণ
সংক্রমণ প্রতিরোধে নিচের পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করা উচিত:
নিয়মিত সাবান দিয়ে হাত ধোয়া
অসুস্থ ব্যক্তিদের থেকে দূরে থাকা
হাঁচি-কাশি দেওয়ার সময় মুখ ঢেকে রাখা
জীবাণুমুক্ত পরিবেশ বজায় রাখা
কেন এত হৈচৈ?
সাম্প্রতিক সময়ে hMPV নিয়ে উদ্বেগের প্রধান কারণ হলো:
কোভিড-১৯ পরবর্তী ভীতি: কোভিড-১৯ মহামারির অভিজ্ঞতা মানুষকে অতিরিক্ত সতর্ক করে তুলেছে। hMPV-এর উপসর্গগুলো COVID-19-এর সাথে মিলে যাওয়ায় মানুষ বিভ্রান্ত হচ্ছে। শীতকাল বা ঋতু পরিবর্তনের সময়ে এই ভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ে, যা খবরের শিরোনাম হচ্ছে। বলা হচ্ছে, কিছু সংবাদমাধ্যম hMPV-কে “নতুন ভাইরাস” বা “বিপজ্জনক রোগ” বলে তুলে ধরছে, যা মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে।
বিশেষজ্ঞদের মতামত:
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, hMPV নতুন কোনো ভাইরাস নয় এবং এটি সাধারণত মৃদু উপসর্গ সৃষ্টি করে। আতঙ্কিত হওয়ার পরিবর্তে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে সংক্রমণ প্রতিরোধ করা সম্ভব। গুরুতর শ্বাসকষ্ট বা জটিল উপসর্গ দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। hMPV নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার প্রয়োজন নেই। এটি একটি পরিচিত শ্বাসযন্ত্রের ভাইরাস যা সাধারণত মৃদু উপসর্গ সৃষ্টি করে। সচেতনতা এবং সতর্কতা থাকলে এই ভাইরাসের সংক্রমণ সহজেই প্রতিরোধ করা সম্ভব।
এদিকে, চিনে নতুন ভাইরাস হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাস (এইচএমপিভি) নিয়ে আতঙ্ক বাড়লেও, এটিকে শুধুমাত্র ‘শীতকালীন সংক্রমণ’ বলেই দাবি করল চিন। পাশাপাশি, নয়া এই ভাইরাস নিয়ে আতঙ্কিত না-হওয়ার পরামর্শও দেওয়া হয়েছে নাগরিকদের। চিনের বিদেশ মন্ত্রকের এক মুখপাত্র মাও নিং জানিয়েছেন, নতুন ভাইরাসের সংক্রমণ বাড়লেও বিষয়টি নিয়ে অযথা আতঙ্কিত হওয়ার প্রয়োজন নেই। তবে এই সংক্রমণের জন্য শীতকালকেই দায়ী করেছে বিদেশ মন্ত্রক।
বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্রের কথায়,শীতকালে শ্বাসযন্ত্রে সংক্রমণের সম্ভাবনা বাড়ে। তবে আশ্বস্ত করতে পারি যে, এই ভাইরাস নিয়ে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। সরকার পুরো বিষয়টির উপর নজরদারি চালাচ্ছে।’’ নয়া ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সম্প্রতি চিনের হাসপাতালগুলিতে উপচে পড়া রোগীদের ভিড়ের যে ছবি সমাজমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে, সেই প্রসঙ্গেও মুখ খুলেছেন বিদেশ মন্ত্রকের ওই মুখপাত্র। তাঁর দাবি, এই ভাইরাস মারাত্মক নয়। সংক্রমণের হারও গত বছরের তুলনায় কম।
কোভিড-১৯ ছড়ানোর ৫ বছর পরে চিনে ফের নতুন ভাইরাসের সংক্রমণের খবরে আতঙ্ক ছড়িয়েছে গোটা বিশ্বে। এই ভাইরাসের খবর প্রকাশ্যে আসার পর ভারতেও উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠা বাড়ছে। এইচএমপিভি-র সংক্রমণ নিয়ে আতঙ্কিত না-হওয়ার বার্তা দিয়েছেন ভারতের ডিরেক্টরেট জেনারেল অফ হেলথ সার্ভিসেস (ডিজিএইচএস)-এর আধিকারিক ড. অতুল গয়াল। শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ প্রতিরোধে সাধারণ সতর্কতা অবলম্বন করার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। বলেছেন, “বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।”##সুত্রঃআনন্দবাজার
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.