সিরাজুর রহমান#
এনডিটিভি নিউজের দেয়া তথ্যমতে, আজ ৯ই এপ্রিল ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার দেশটির নৌবাহিনীর আধুনিকায়নের জন্য নতুন করে ২৬টি ৪++ প্রজন্মের রাফায়েল-এম (নেভাল ভার্সন) যুদ্ধবিমান ক্রয়ের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেছে। মূলত এই ২৬টি যুদ্ধবিমান ক্রয়ের জন্য ভারতের সরকার নতুন ২০২৫ অর্থবছরে প্রায় ৬৩ হাজার কোটি রুপি বা ৭.২৬৭ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ দিয়েছে।
আসলে চলতি ২০২৫ সালের এপ্রিল মাসের শেষের দিকে ফ্রান্সের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী সেবাস্তিয়ান লেকোর্নু ভারত সফরে আসলে ২৬টি অত্যাধুনিক রাফায়েল-এম (নেভাল ভার্সন) এই চুক্তি চূড়ান্ত করা হতে পারে। তাছাড়া ভারত খুব সম্ভবত গত ২০২৩ সালের শেষের দিকে এই যুদ্ধবিমান ক্রয়ের আগ্রহ প্রকাশ করে লেটার অব রিকুয়েস্ট পাঠিয়েছিল ভারতের সরকার।
এনডিটিভির প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে যে, চলতি মাসে নতুন এই যুদ্ধবিমান ক্রয়ের চুক্তি সম্পন্ন হলে আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে পর্যায়ক্রমে ভারতের নৌবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত হবে। যা বর্তমানে দেশটির নেভাল ফ্লিটে সার্ভিসে থাকা সবচেয়ে আধুনিক এবং উচ্চ প্রযুক্তির আইএনএস বিক্রান্ত এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ারে মোতায়েন করা হবে। তাছাড়া বর্তমানে ভারতের বিমান বাহিনীর বহরে ৩৬টি রাফায়েল যুদ্ধবিমান অ্যাক্টিভ রয়েছে।
যদিও বর্তমানে ভারতের নৌবাহিনীর হাতে প্রায় ৪০টি রাশিয়ার তৈরি ক্যারিয়ার বেসড মিগ-২৯কে সিরিজের যুদ্ধবিমান অপারেশনাল রয়েছে। মোট ৪৫টি এই জাতীয় ক্যারিয়ার বেসড কমব্যাট এয়ারক্রাফট ক্রয় করা হলেও বিভিন্ন সময়ে এই সিরিজের মোট ৫টি যুদ্ধবিমান ধ্বংস হয়। তবে ভারতীয় নৌবাহিনী মেজর আপগ্রেডিং করে আগামী ২০৩৫ সাল থেকে ২০৪০ সাল পর্যন্ত সার্ভিসে রাখতে চায়।
ভারত নতুন এই ২৬টি রাফায়েল-এম সিরিজের ক্যারিয়ার বেসড কমব্যাট এয়ারক্রাফট ক্রয়ের জন্য ফুল প্যাকেজে মোট প্রায় ৭.২৬৭ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করতে যাচ্ছে। সে হিসেবে প্রতিটি এয়ারক্রাফটের মূল্য হতে পারে হয়ত প্রায় ২৭৯.৫ বিলিয়ন ডলার। তবে চুক্তি মোতাবেক এই ফুল প্যাকেজের আওতায় দীর্ঘ মেয়াদি রক্ষণাবেক্ষণ, লজিস্টিক সাপোর্ট, মিসাইল ও অন্যান্য অস্ত্র, প্রশিক্ষণের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
নতুন এই চুক্তির আলোকে ভারতের বিমান বাহিনীর জন্য মোট ২৬টি ক্যারিয়ার বেসড রাফায়েল-এম (নেভাল ভার্সন) যুদ্ধবিমান ক্রয় করা হচ্ছে। যার মধ্যে সিঙ্গেল সিটের ২২টি এবং টুইন সিটের ৪টি এই জাতীয় যুদ্ধবিমান ক্রয় করা হচ্ছে। তাছাড়া অদূর ভবিষ্যতে ভারতের নিজস্ব প্রযুক্তির তৈরি ৪৫ হাজার টন ওজনের নতুন প্রজন্মের আইএনএস বিক্রান্তে মোতায়েন করা হবে এই রাফায়েল যুদ্ধবিমানগুলো।
বর্তমানে সারা বিশ্বে ৪++ প্রজন্মের যুদ্ধবিমান হিসেবে ইউরোফাইটার তাইফুন, রাশিয়ার এসইউ-৩৫ এবং মার্কিন এফ-১৫এক্স সিরিজের যুদ্ধবিমানের পাশাপাশি সবার উপরে রয়েছে ফ্রান্সের তৈরি রাফাল নাম। তাছাড়া ফ্রান্স কিন্তু অনেক আগেই ইউরোফাইটার তাইফুন প্রজেক্ট থেকে বের হয়ে গিয়ে একেবারে নিজস্ব প্রযুক্তির এবং হাইলি অ্যাডভান্স রাফাল জেট ফাইটার সার্ভিসে আনে।
রাফায়েল সিরিজের যুদ্ধবিমানের মোট ১৩টি হার্ড পয়েন্টে প্রধান অস্ত্র হিসেবে এমবিডিএ কর্পোরেশনের তৈরি ৪ ম্যাক গতির ১১০ কিলোমিটার পাল্লার মেটওর ও মিকা এয়ার টু এয়ার (বিভিআর) মিসাইলের পাশাপাশি ম্যাজিক-২ এয়ার টু এয়ার মিসাইল ব্যবহার করে। এদিকে আকাশ থেকে ভূমিতে হামলা চালানোর উপযোগী এসসিএএলপি-ইজি ও হাম্মার এয়ার টু গ্রাউন্ড মিসাইল সিস্টেম ব্যবহার করা হয়।
হাম্মার বা Highly Agile Modular Munition Extended Range (HAMMER) হচ্ছে একটি মধ্যম পাল্লার গ্রাউন্ড অ্যাটাক ফ্যাসালিটির মিসাইল সিস্টেম। তাছাড়া এয়ার লঞ্চড বেসড স্ক্যাল্প ক্রুজ মিসাইল এতে ইনস্টল করা হয়েছে। প্রয়োজনে এতে এএসএমপি-এ নিউক্লিয়ার ওয়ারহেড ক্যাপবল মিসাইল বহন করার উপযোগী করে ডিজাইন ও তৈরি করেছে ফ্রান্স।
তাছাড়া অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে জিইউবি-১২/২৪ লেজার-গাইডেড বোম্বস, এএস-৩০এল, মার্ক-৮২ জিইউবি-৪৯ জিপিএস গাইডেড বোম্বস ব্যবহার করে। তাছাড়া মেরিটাইম স্ট্রাইক মিশনের জন্য রাফালে-এম যুদ্ধবিমান এয়ার লঞ্চড বেসড এক্সোসেট এএম-৩৯ ব্লক-২ অ্যান্টি-শিপ মিসাইল বহন করতে পারে।
এদিকে রাফাল যুদ্ধবিমানের ক্যারিয়ার বেসড ভার্সন রাফাল-এম সিরিজের ফাইটার জেটের ম্যাক্সিমাম পে-লোড ক্যাপাসিটি ৯.৫ টন। তাছাড়া বর্ধিত রেঞ্জের এয়ার কমব্যাট মিশন পরিচালনা করার জন্য এতে অতিরিক্ত ৬.৭ টন ওজনের তিনটি ৫২৪ গ্যালন (২ হাজার লিটার) জ্বালানি ট্যাংকও বহন করে। এই জ্বালানি ট্যাংকগুলো আবার অন্যান্য এরিয়াল সিস্টেমে রিফুয়েলিং এ ব্যবহার করা যেতে পারে।
বর্তমানে ডাসাল্ট রাফাল-এম সিরিজের (নেভাল ভার্সন) অ্যাডভান্স যুদ্ধবিমানের একমাত্র ব্যবহারকারী দেশ হচ্ছে ফ্রান্স। ফ্রান্সের নৌবাহিনীর একমাত্র নিউক্লিয়ার পাওয়ারড এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ারে মোট ৪১টি এই জাতীয় যুদ্ধবিমান অপারেট করা হয়। তাছাড়া দেশটির নৌবাহিনী নতুন করে আরো ১২টি এই যুদ্ধবিমানের অর্ডার দিয়ে রেখেছে। আর এবার হয়ত এই ডেডিকেটেড যুদ্ধবিমানের আন্তর্জাতিক ক্রেতা দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে ভারত।##তথ্যসূত্র: এনডিটিভি, উইকিপিডিয়া।
-- বিজ্ঞাপন ---
পরবর্তী র্সবাদ
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.