-- বিজ্ঞাপন ---

কি এই নাসার ড্রাগনফ্লাই মিশন, শনি গ্রহের টাইটানের খোজেঁ যাত্রার প্রস্ততি নিচ্ছে!

কাজী আবুল মনসুর#

সূর্য থেকে শনি গ্রহ। নাসা এর আগে সূর্য এর কাছাকাছি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করেছে। এবারের মিশন আরও দূর্দান্ত। নাসা ঘোষণা করেছে তাদের অত্যাধুনিক ড্রাগনফ্লাই মিশন শুরু করতে যাচ্ছে, যা শনি গ্রহের বৃহত্তম উপগ্রহ টাইটান অন্বেষণ করবে। এই মিশনের লক্ষ্য হলো জীবনের উপাদানগুলো অনুসন্ধান করা এবং টাইটানের গোপন রহস্য উদ্ঘাটন করা। এটি ২০২৮ সালের জুলাই মাসে একটি স্পেসএক্স ফ্যালকন হেভি রকেটে উৎক্ষেপণ করার পরিকল্পনা রয়েছে।

টাইটান, যা প্রায়শই “বরফাচ্ছন্ন পৃথিবী” হিসাবে পরিচিত, এতে রয়েছে একটি ঘন নাইট্রোজেন-সমৃদ্ধ বায়ুমণ্ডল, তরল মিথেনের নদী ও হ্রদ, এবং একটি বরফময় পৃষ্ঠের নীচে তরল জলের সমুদ্র। এটি জৈব রাসায়নিক এবং সম্ভাব্য বাসযোগ্যতার গবেষণার জন্য একটি আদর্শ স্থান।

একটি বিপ্লবী রোটরক্রাফ্ট ল্যান্ডার
ড্রাগনফ্লাই একটি রোটরক্রাফ্ট যা আটটি রোটর দিয়ে সজ্জিত। এটি টাইটানের বৈচিত্র্যময় ভূখণ্ডের উপর দিয়ে উড়তে সক্ষম। এটি নাসার প্রথম আন্তঃগ্রহ অনুসন্ধান যা একটি ড্রোন-জাতীয় মহাকাশযান ব্যবহার করছে। “ড্রাগনফ্লাই এলিয়েন জগৎ অন্বেষণে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে,” বলেছেন নাসার বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী প্রশাসক ড. থমাস জুরবুচেন। “উড়তে পারার ক্ষমতা আমাদের এমন এলাকা অন্বেষণ করতে দেবে যেখানে কোনো রোভার পৌঁছাতে পারত না।”

মিশনের লক্ষ্য
নির্ধারিত ২.৫ বছরব্যাপী মিশনে ড্রাগনফ্লাই নিম্নলিখিত বৈজ্ঞানিক গবেষণা চালাবে। রাসায়নিক বিশ্লেষণ, টাইটানের জৈব-সমৃদ্ধ পৃষ্ঠে জটিল অণু এবং প্রাক-জীবনের রাসায়নিক শনাক্ত করা। বাসযোগ্যতার সন্ধান, টাইটানের পরিবেশ জীবাণু জীবনের জন্য উপযুক্ত কিনা তা মূল্যায়ন করা। সেল্ক ক্রেটার অধ্যয়ন মিশনের মূল লক্ষ্য, যেখানে অতীতে তরল পানি, তাপ, এবং জৈব পদার্থ উপস্থিত ছিল বলে ধারণা করা হয়। বায়ুমণ্ডল এবং ভূতাত্ত্বিক প্রক্রিয়া, টাইটানের মিথেন চক্র এবং এর বায়ুমণ্ডল ও পৃষ্ঠের মিথস্ক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করা।
প্রযুক্তিগত বৈশিষ্ট্য এবং যন্ত্রপাতি
ড্রাগনফ্লাই একটি মাল্টি-মিশন রেডিওআইসোটোপ থার্মোইলেকট্রিক জেনারেটর (MMRTG) দ্বারা চালিত, যা টাইটানের শীতল পরিবেশে নির্ভরযোগ্য শক্তি সরবরাহ করবে। এর উল্লেখযোগ্য যন্ত্রপাতির মধ্যে রয়েছে,ড্রাগনফ্লাই মাস স্পেকট্রোমিটার (DraMS): জৈব পদার্থ বিশ্লেষণ করার জন্য। ড্রাগমেট (DraGMet), বায়ুমণ্ডলীয় চাপ, তাপমাত্রা এবং ভূকম্পন পর্যবেক্ষণের জন্য। ক্যামেরা, টাইটানের ভূদৃশ্যের উচ্চ রেজোলিউশনের ছবি ধারণ করবে। ড্রাগনফ্লাই প্রায় ১১০ মাইল (১৮০ কিলোমিটার) দূরত্ব পাড়ি দেবে এবং বৈজ্ঞানিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে নমুনা সংগ্রহ করবে।

টাইটান কেন গুরুত্বপূর্ণ?
টাইটান জৈব রাসায়নিক গবেষণার জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ কারণ: এতে একটি ঘন বায়ুমণ্ডল রয়েছে যা প্রাচীন পৃথিবীর মতো। এর পৃষ্ঠে তরল মিথেনের নদী এবং হ্রদ প্রবাহিত হয়। জৈব যৌগ এবং একটি বরফময় পৃষ্ঠের নীচে তরল জলের সমুদ্র রয়েছে, যা জীবনের জন্য অনুকূল পরিবেশ নির্দেশ করে।
সময়সীমা এবং বৈশ্বিক প্রভাব
ড্রাগনফ্লাই টাইটানে ২০৩৪ সালে পৌঁছানোর কথা রয়েছে এবং এই মিশনের মাধ্যমে বৈজ্ঞানিকরা টাইটানের জীবনের সম্ভাব্যতার উপর গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করবেন। বিজ্ঞানীদের বিশ্বাস, ড্রাগনফ্লাই-এর ডেটা শুধু টাইটানে নয়, পৃথিবীর জীবনের উৎপত্তি সম্পর্কেও নতুন দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করবে। “টাইটান জীবনের উপাদানগুলোর অধ্যয়নের জন্য একটি প্রাকৃতিক গবেষণাগার,” বলেছেন মিশনের প্রধান গবেষক ড. এলিজাবেথ টার্টল। “ড্রাগনফ্লাই আমাদের অসীম সম্ভাবনার জগৎ অন্বেষণ করতে সাহায্য করবে।”

মহাকাশ অন্বেষণে এক বড় পদক্ষেপ
ড্রাগনফ্লাই নাসার নিউ ফ্রন্টিয়ার্স প্রোগ্রাম-এর অংশ, যা এর আগে নিউ হরাইজনস (প্লুটো) এবং জুনো (বৃহস্পতি) মিশনের মতো আইকনিক প্রকল্প সরবরাহ করেছে। $১ বিলিয়ন ডলারের এই মিশন আন্তঃগ্রহ গবেষণায় একটি সাহসী পদক্ষেপ এবং ভবিষ্যতে বহির্জাগতিক গবেষণার পথ প্রশস্ত করবে।##

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.