-- বিজ্ঞাপন ---

সূর্যের ভেতরে ঢুকতে চাইছে কি এই পার্কার সোলার প্রোব

১৩৭৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস এ অবস্থান করে পৃথিবীতে জানান দিচ্ছে

কাজী আবুল মনসুর, সাংবাদিক#

মানব ইতিহাসে এ ঘটনা বিরল। সূর্যকে স্পর্শ করতে যাচ্ছে পৃথিবী থেকে কোন মহাকাশযান! চিন্তাও করা যায় না। বিজ্ঞান কোন পর্যায়ে যাচ্ছে। সূর্যের এত কাছাকাছি যাওয়ার প্রথম মহাকাশযান হলো NASA-এর পার্কার সোলার প্রোব। এটি সূর্যের করোণার (corona) গভীরে প্রবেশ করে এবং সৌর বায়ু, তাপ, এবং বিকিরণের তথ্য সংগ্রহ করছে। এই মিশন শুধু বিজ্ঞানীদের দীর্ঘদিনের প্রশ্নগুলোর উত্তর দিচ্ছে না, বরং ভবিষ্যতের মহাকাশ গবেষণায় নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছে।পার্কার সোলার প্রোব বানাতে এবং পরিচালনা করতে মোট খরচ হয়েছে প্রায় ১.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এটি NASA এর অন্যতম ব্যয়বহুল ও উচ্চাভিলাষী প্রকল্পগুলোর একটি। প্রোবটি তৈরির জন্য উন্নত প্রযুক্তি ও উপাদান ব্যবহার করা হয়েছে। থার্মাল প্রটেকশন সিস্টেম (তাপ প্রতিরোধক শিল্ড) তৈরিই ছিল একটি অত্যন্ত ব্যয়বহুল অংশ। আনুমানিক খরচ ৭০০ মিলিয়ন ডলার। প্রোবটি ২০১৮ সালের আগস্ট মাসে ডেল্টা IV হেভি রকেট-এর মাধ্যমে উৎক্ষেপণ করা হয়। উৎক্ষেপণ প্রক্রিয়ায় প্রায় ৩৫০ মিলিয়ন ডলার খরচ হয়েছে। মিশনের পুরো কার্যক্রম পরিচালনা, ডেটা বিশ্লেষণ, এবং ডিপ স্পেস নেটওয়ার্ক পরিচালনার জন্য বাজেট নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রায় ৪৫০ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ রয়েছে মিশনের পুরো সময়কালের (২০২৫ পর্যন্ত)।

মিশনের পরিকল্পনা শুরু হয় ২০০৭ সালে। প্রোবটি বানাতে এবং উৎক্ষেপণের জন্য সময় লেগেছে প্রায় ১২ বছর। এটি ২০২৫ সাল পর্যন্ত কাজ করবে। সূর্যের চারদিকে ২৪টি কক্ষপথ সম্পন্ন করতে এটি ২০২৫ সাল পর্যন্ত কাজ করবে। সূর্যের এত কাছাকাছি যাওয়ার জন্য প্রচণ্ড তাপ ও বিকিরণ সহ্য করতে বিশেষ প্রযুক্তি দরকার ছিল।সূর্যের মহাকর্ষ বল অতিক্রম করতে ডেল্টা IV হেভি রকেট ব্যবহার করা হয়েছে, যা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। এই প্রকল্পে NASA প্রায় দুই দশকের গবেষণা ও উন্নয়ন কাজ করেছে।

পার্কার সোলার প্রোব মানব ইতিহাসে প্রথম মহাকাশযান, যা সূর্যের করোণায় প্রবেশ করেছে। এটি বর্তমানে সূর্যের মাত্র ৬.২ মিলিয়ন কিলোমিটার দূর দিয়ে অতিক্রম করছে। সূর্যের এত কাছাকাছি গিয়ে ডেটা সংগ্রহের ক্ষমতা আগে কখনো কোনো মহাকাশযানের ছিল না। প্রোবটি সূর্যের চরম তাপমাত্রায় কাজ করছে। এর আশেপাশের পরিবেশের তাপমাত্রা প্রায় ১৩৭৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, তবে এর হিট শিল্ডের কারণে ভেতরের যন্ত্রপাতি মাত্র ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় কাজ করছে। পার্কার সোলার প্রোব ফেরত আসার জন্য ডিজাইন করা হয়নি।এটি সূর্যের কাছাকাছি গিয়ে একসময় সূর্যের মধ্যেই “পুড়ে যাবে” বা ধ্বংস হবে। এর কাজ মূলত ডেটা সংগ্রহ করে পৃথিবীতে পাঠানো। NASA-এর এই মিশনের মূল লক্ষ্য হলো সূর্যের গঠন, কার্যকলাপ এবং সৌর বায়ু সম্পর্কে গভীর গবেষণা করা।  সূর্যের করোণার গঠন ও তাপমাত্রার কারণ বোঝা। সৌর বায়ুর উৎপত্তি এবং এর গতি সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ। সূর্যের চৌম্বক ক্ষেত্রের প্রভাব এবং এটি কীভাবে মহাকাশ আবহাওয়া সৃষ্টি করে তা বিশ্লেষণ। পৃথিবীর উপর সৌর ঝড়ের প্রভাব পূর্বাভাস দেওয়ার প্রযুক্তি উন্নত করা।

থার্মাল প্রোটেকশন সিস্টেম (TPS) এ দেখা যায়, সূর্যের তাপ থেকে মহাকাশযানকে সুরক্ষিত রাখতে ৪.৫ ইঞ্চি পুরু কার্বন-কম্পোজিট হিট শিল্ড ব্যবহার করা হয়েছে। এটি ১৩৭৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা সহ্য করতে পারে। প্রোবটিতে চারটি প্রধান বৈজ্ঞানিক যন্ত্র রয়েছে, যা সৌর বায়ু, তাপ, চৌম্বক ক্ষেত্র এবং সৌর বিকিরণ বিশ্লেষণ করতে সক্ষম।

পার্কার সোলার প্রোব মানব ইতিহাসে প্রথম মহাকাশযান, যা সূর্যের করোণায় প্রবেশ করেছে। এটি সূর্যের মাত্র ৬.২ মিলিয়ন কিলোমিটার দূর দিয়ে অতিক্রম করছে। সূর্যের এত কাছাকাছি গিয়ে ডেটা সংগ্রহের ক্ষমতা আগে কখনো কোনো মহাকাশযানের ছিল না। প্রোবটি সূর্যের চরম তাপমাত্রায় কাজ করছে। এর আশেপাশের পরিবেশের তাপমাত্রা প্রায় ১৩৭৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, তবে এর হিট শিল্ডের কারণে ভেতরের যন্ত্রপাতি মাত্র ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় কাজ করছে। প্রোবটি সৌর বায়ু এবং চৌম্বক ক্ষেত্রের তথ্য সংগ্রহ করছে। এটি NASA’s Deep Space Network ব্যবহার করে পৃথিবীতে ডেটা পাঠাচ্ছে। প্রোবের অবস্থান এবং গতি ট্র্যাক করতে অত্যাধুনিক জিপিএস এবং রেডিও সিগন্যাল ব্যবহার করা হচ্ছে। বিজ্ঞানীরা পৃথিবী থেকে প্রোবের কক্ষপথ পর্যবেক্ষণ করছেন।

যদিও মিশনটি NASA পরিচালিত, তবে বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানীরা গবেষণায় অংশ নিয়েছেন। মিশনের মূল বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলীরা NASA-এর। সৌর বায়ু গবেষণায় ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির বিজ্ঞানীরা সহযোগিতা করেছেন। জাপান ও ভারত সৌর বিকিরণ এবং ডেটা বিশ্লেষণে সাহায্য করেছেন।

NASA-এর মতে, পার্কার সোলার প্রোব এখন পর্যন্ত অত্যন্ত সফল। মিশনটি এমন সব তথ্য দিচ্ছে যা বিজ্ঞানীদের দীর্ঘদিনের অনেক প্রশ্নের উত্তর দিয়েছে। ভবিষ্যতে মহাকাশ আবহাওয়া পূর্বাভাস এবং সৌর শক্তি গবেষণায় এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

পার্কার সোলার প্রোব মিশনটি মানবজাতির জন্য এক ঐতিহাসিক পদক্ষেপ। এটি আমাদের সূর্যের কার্যকলাপ সম্পর্কে জানার নতুন পথ উন্মুক্ত করেছে। এই মিশনের সাফল্য শুধুমাত্র বর্তমান নয়, ভবিষ্যৎ মহাকাশ গবেষণাকেও আরও সমৃদ্ধ করবে।#

 

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.