প্রতিটি তরুণের তিন-শূন্য ব্যক্তি হিসেবে বেড়ে ওঠা প্রয়োজন,শূন্য নেট কার্বন নিঃসরণ, শূন্য সম্পদ কেন্দ্রীকরণ এবং শূন্য বেকারত্ব
বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়া বার্ষিক কনফারেন্স এ প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস
‘এশিয়া ইন দ্য চেঞ্জিং ওয়ার্ল্ড’ শীর্ষক সময়োপযোগী থিমের ওপর আমার ভাবনা তুলে ধরার জন্য আপনারা আমাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। আপনাদের আন্তরিক ধন্যবাদ।
এই ফোরামটি খুব গুরুত্বপূর্ণ সময়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। মাল্টিলেটারালিজম বা বহুপাক্ষিকতার অধীনে বিশ্বব্যাপী চলা শাসনব্যবস্থা বর্তমানে প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা বাড়ছে। জলবায়ু পরিবর্তন বাড়ছে। ঋণের বোঝা টেকসই নয়, অনেক দেশ ঋণ পরিশোধে হিমশিম খাচ্ছে। মানবিক সংকট বাড়ছে। উন্নয়ন সহযোগিতার জন্য রাজনৈতিক ইচ্ছাশক্তি কমে যাচ্ছে। বিশ্বজুড়ে যে সম্মিলিত প্রচেষ্টা থাকা উচিত তা উদ্বেগজনকভাবে ঘাটতির দিকে যাচ্ছে।
বিশ্বের জনসংখ্যার ৬০ শতাংশ এবং বিশ্ব জিডিপির ৫৫ শতাংশ মানুষের আবাসস্থল এশিয়া, এই রূপান্তরের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। নতুন নতুন নীতিমালা, নিয়মকানুন এবং প্রযুক্তির কারণে শাসনব্যবস্থা এবং অর্থনৈতিক নীতিমালা পুনর্গঠিত হচ্ছে। এক দশক আগে যে নীতিমালা বিশ্বকে রূপ দিয়েছিল, অনুমান করা যাচ্ছে, সেগুলো এখন আর প্রাসঙ্গিক নয়। আঞ্চলিক ও বিশ্বব্যাপী সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তা আগে কখনো এর চেয়ে বেশি জরুরি ছিল না।
২০০৭ সালে, আমি ক্ষুদ্রঋণ সম্পর্কে আমার বক্তব্য তুলে ধরার জন্য বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়ায় যোগ দিয়েছিলাম।
আজ, আমি আপনাদের সামনে ভিন্নভাবে দাঁড়িয়ে আছি। আমি এখানে এমন এক বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করছি, যে দেশে গত বছরের জুলাই-আগস্টে ঐতিহাসিক পরিবর্তন ঘটেছে। গোটা বিশ্ব নিপীড়ন ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে বাংলাদেশের জনগণের ঐক্যবদ্ধ রূপ দেখতে পেয়েছে।
আমাদের তরুণ শিক্ষার্থী ও জনতা মিলে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ পুনর্নির্ধারণের জন্য ব্যতিক্রমী এক সংকল্প এবং শক্তি প্রদর্শন করেছে। জনসাধারণের আস্থা ফিরিয়ে আনতে আমরা (অন্তর্বর্তী সরকার) গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার শুরু করেছি। নির্বাচন ব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, বেসামরিক প্রশাসন এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো সংস্কারের জন্য স্বাধীন কমিশন গঠন করা হয়েছে। এই সংস্কারগুলো বাস্তবায়িত হলে, আমাদের জাতির মৌলিক রূপান্তর ঘটবে।
সম্মানিত উপস্থিতি,
একটি নতুন বাংলাদেশ গড়ে তোলার প্রচেষ্টায় আমরা বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছি, অন্যান্য এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গেও এসব চ্যালেঞ্জ জড়িয়ে আছে। বিশেষ করে, আর্থিক বাজারের অস্থিরতা, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, কূটনৈতিক উত্তেজনা এবং বাণিজ্য ব্যাঘাত বিশ্বব্যাপী অস্থিরতা তৈরি করছে। ক্রমবর্ধমান সুদের হার এবং ঋণ পরিশোধের খরচ এশিয়ার ঋণ সংকটকে আরও গভীর করছে।
২০৩০ সালের এজেন্ডার প্রতি বিশ্বব্যাপী প্রতিশ্রুতি থাকা সত্ত্বেও, অগ্রগতি ধীর। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ২৪ শতাংশ অর্জন করা সম্ভব হয়েছে। উন্নয়নশীল এশীয় দেশগুলো বার্ষিক আড়াই থেকে ৪ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার অর্থায়ন ঘাটতির সম্মুখীন হয়। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার অর্থায়নের বাইরেও, এশিয়ার অবকাঠামোগত বিনিয়োগ এবং দায়িত্বশীল অর্থায়নের মাধ্যমে অর্থনৈতিক বৈচিত্র্যের ক্ষেত্রেও বৃহৎ আকারের বিনিয়োগ প্রয়োজন।
বাংলাদেশ দুর্নীতি এবং অবৈধ আর্থিক প্রবাহের ভুক্তভোগী। এই দুর্নীতির কারণে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে বার্ষিক আনুমানিক ১ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ করতে হচ্ছে, যা তাদের মোট সরকারি উন্নয়ন সহায়তার চেয়ে বহুগুণ বেশি।
সম্পদ পুনরুদ্ধার ও প্রাপ্তির জন্য একটি বহুপাক্ষিক মধ্যস্থতা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার উদ্দেশে গোটা এশিয়ার ঐক্যবদ্ধ হওয়া উচিত। খাদ্য নিরাপত্তা ক্রমবর্ধমান চাপের মধ্যে রয়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম ক্রমাগত বাড়ছে যা পরিবারের বাজেটের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে, বিশেষ করে নিম্ন আয়ের পরিবারগুলো মারাত্মক চাপে পড়ছে।
জলবায়ু পরিবর্তন এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ এই সংকটকে আরও বাড়িয়ে তুলছে। এজন্য খাদ্য সরবরাহ শৃঙ্খল শক্তিশালী করা অপরিহার্য।
জ্বালানি নিরাপত্তা অত্যন্ত জরুরি, বিশেষ করে যেসব উন্নয়নশীল দেশগুলো জ্বালানি আমদানি করে তাদের জন্য। জ্বালানি সরবরাহ ব্যাহত হলে মুদ্রাস্ফীতি, অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা এবং ঋণের সংকট দেখা দেয়। আমাদের অবশ্যই টেকসই জ্বালানি সমাধান খুঁজে বের করতে হবে এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।
মানবসম্পদ উন্নয়নের জন্য স্বাস্থ্য ও শিক্ষায় বিনিয়োগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সুশিক্ষিত ও দক্ষ জনবল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও উদ্ভাবনকে এগিয়ে নিয়ে যায়। যেসব দেশ সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবায় বিনিয়োগ করে তারা উন্নত অর্থনীতির উৎপাদনশীলতায় পৌঁছাতে পারে। ভবিষ্যৎ কর্মক্ষেত্রের জন্য আমাদের তরুণদের প্রস্তুত করতে ডিজিটাল শিক্ষা এবং বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ সম্প্রসারণ করতে হবে।
সম্মানিত উপস্থিতি,
আমাদের সভ্যতা এখন ঝুঁকির মুখে, কারণ আমরা আত্ম-বিধ্বংসী অর্থনৈতিক মূল্যবোধকে আলিঙ্গন করে চলেছি। প্রভাবশালী অর্থনৈতিক মডেল দাঁড়িয়ে আছে সীমাহীন ভোগের ওপরে। এটি গ্রোথ বা বৃদ্ধির নামে সম্পদের অতিরিক্ত উত্তোলন এবং পরিবেশের অবক্ষয়কে ন্যায্যতা দেয়।
আমাদের অবশ্যই টেকসই অর্থনৈতিক মডেলের দিকে ঝুঁকতে হবে, যা অর্থনৈতিক লাভের চেয়ে মানুষ-প্রকৃতি-পরিবেশ তথা গোটা পৃথিবী গ্রহকে অগ্রাধিকার দেয়।
জলবায়ু সংকট মানবতার অস্তিত্বর জন্য হুমকি। এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে জলবায়ু দুর্যোগজনিত অর্থনৈতিক ক্ষতি ইতোমধ্যেই অনেক বড়, প্রায় ৬৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমতুল্য। বাংলাদেশের মতো জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলো উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগ সীমিত করে দুর্যোগ মোকাবেলায় সম্পদ ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছে।
আমাদের নতুন, অতিরিক্ত, সহজলভ্য, ঋণগ্রস্ত করে না এমন অনুদান-ভিত্তিক জলবায়ু অর্থায়ন প্রয়োজন, যেখানে অভিযোজন (adaptation) ও প্রশমনের (mitigation) মধ্যে একটি ন্যায়সঙ্গত বন্টন থাকবে।
জীবন রক্ষাকারী ওষুধ এবং প্রযুক্তির সর্বজনীন সহজলভ্যতা নিশ্চিত করতে হবে। কোভিড-১৯ মহামারি ছিল একটি সতর্ক সংকেত, যা বিশ্ব স্বাস্থ্য ব্যবস্থার গভীর বৈষম্য আমাদের সামনে তুলে ধরেছে। মহামারী চুক্তির চলমান আলোচনায় এশিয়ার উচিত ঐক্যবদ্ধ অবস্থান গ্রহণ করা।
রোবোটিক্স, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মতো যুগোপযোগী প্রযুক্তির দ্রুত অগ্রগতি বিশ্বকে নতুন রূপ দিচ্ছে। উন্নত অর্থনীতির তুলনায় এশিয়ায় কম সক্ষমতা, ক্ষমতা এবং সম্পদ উত্তলন ডিজিটাল বৈষম্যকে আরও বিস্তৃত করতে পারে। ডেটা সার্বভৌমত্ব ( কোনো দেশের ডেটা বা তথ্যের ওপর সেই দেশের আইনি নিয়ন্ত্রণ ও অধিকার) এবং ডেটা সংরক্ষণ– এখন জটিল উদ্বেগের বিষয়। যদি প্রযুক্তি দায়িত্বজ্ঞানহীনভাবে বিকশিত হয়, তাহলে এটি আমাদের জন্য অস্তিত্বগত ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। এশিয়ার অভ্যন্তরে ডিজিটাল বৈষম্য দূর করতে হবে এবং প্রযুক্তি, উদ্ভাবন এবং ইনকিউবেশনে আঞ্চলিক সক্ষমতা তৈরি করতে হবে।
সম্মানিত উপস্থিতি,
ভাষা, ঐতিহ্য, দর্শন এবং রীতিনীতির সমৃদ্ধ পরিসরে এশীয় সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য মানব সভ্যতার স্থিতিশীলতা ও সৃজনশীলতার প্রমাণ। ইসলাম, কনফুসিয়ানিজম, বৌদ্ধধর্ম এবং হিন্দুধর্মের দর্শনসহ এ অঞ্চলের অন্যান্য দর্শন গোটা বিশ্বের চিন্তাভাবনা ও দর্শনকে রূপ দিয়েছে। নৈতিকতা, শাসনব্যবস্থা এবং মানবিক চেতনার ওপর অনন্য দৃষ্টিভঙ্গির প্রচার করেছে।
বৈচিত্র্যকে আলিঙ্গন করেই এশিয়ার সভ্যতাগুলো বিকশিত হয়েছে। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে, সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের প্রাণবন্ত আদান-প্রদান কেবল এই অঞ্চলকেই প্রভাবিত করেনি বরং বিশ্বকে রূপ দিয়েছে।
আজও এশিয়ার সাংস্কৃতিক সমৃদ্ধি এমন একটি শক্তি যার প্রভাব বিশ্বব্যাপী। ঐতিহ্য এবং আধুনিকতার মিশ্রণ, অত্যাধুনিক উদ্ভাবনের সাথে পূর্বপুরুষের জ্ঞানের প্রতি শ্রদ্ধা এমন এক গতিশীল শক্তি তৈরি করেছে যা এই অঞ্চলকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে; গভীর ঐতিহাসিক শেকড়ের প্রতি সম্মান রেখেই সামনের দিকে অগ্রসর হচ্ছে।
এশিয়ার বিপুল কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী অপরিসীম সম্ভাবনা রাখে। বিশেষ করে এ অঞ্চলের তরুণরা উদ্ভাবন ও উৎপাদনশীলতাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। আমাদের অবশ্যই তাদের উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে এবং টেকসই সমাধানের জন্য অর্থায়নের সুযোগ দিতে হবে। মানব পুঁজি এবং ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক চাকরির বাজারের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ শিক্ষা ব্যবস্থায় বিনিয়োগ এশিয়ার ভবিষ্যৎ প্রতিযোগিতায় রূপ দেবে।
এশিয়ায় নারীর শ্রমশক্তিতে অংশগ্রহণ এখনও কম। নেতৃত্ব এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে লিঙ্গ বৈষম্য এখনো বিদ্যমান। আমাদের অবশ্যই নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের পথে বাধাগুলো অপসারণ করতে হবে এবং সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে।
আজকের বিশ্ব বহু-সংকটে জর্জরিত। যুদ্ধ এবং সংঘাতে মানুষের অধিকার ক্ষুণ্ন হচ্ছে এবং অর্থনীতি ব্যাহত হচ্ছে। বিশ্বব্যাপী প্রবল নিন্দা সত্ত্বেও গাজায় গণহত্যা অব্যাহত রয়েছে। ফিলিস্তিনের সংকট কেবল আরব বা মুসলিম উদ্বেগের বিষয় নয়, এটি একটি মানবিক সমস্যা। ইউক্রেনের অব্যাহত উত্তেজনা বিশ্বব্যাপী সরবরাহ শৃঙ্খলের ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলছে। মিয়ানমারের দীর্ঘস্থায়ী সংকট আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকিস্বরূপ।
সাত বছরেরও বেশি সময় ধরে, বাংলাদেশ মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত ১২ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে আসছে। আমরা উল্লেখযোগ্য সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং পরিবেশগত খরচ বহন করে চলেছি।
জাতিসংঘের মহাসচিব সম্প্রতি সংহতি প্রকাশ করে ক্যাম্পগুলো পরিদর্শন করেছেন। যদিও বিশ্বব্যাপী প্রচেষ্টা ব্যাপকভাবে সংকুচিত হচ্ছে কিন্তু অব্যাহত রয়েছে, তবুও রোহিঙ্গাদের নিজ দেশ মিয়ানমারে যাতে নিরাপদ এবং মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসন নিশ্চিত হয় সেজন্য এশিয়ার নেতাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
সম্মানিত উপস্থিতি,
এই পরিবর্তনশীল বিশ্বে, এশীয় দেশগুলোর ভাগ্য একে অপরের সাথে জড়িত। আমাদের অবশ্যই একটি সম্মিলিত ভবিষ্যত এবং সম্মিলিত সমৃদ্ধির জন্য একটি রোডম্যাপ তৈরি করতে হবে। এই ফোরাম থেকে এশিয়ায় চারটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে সহযোগিতা জোরদার করতে হবে।
প্রথমত, আর্থিক সহযোগিতা। এশিয়ায় একটি টেকসই অর্থায়ন ব্যবস্থা তৈরি করতে হবে। আঞ্চলিক এমডিবি এবং অনুরূপ প্রতিষ্ঠানগুলোকে এই প্রচেষ্টায় নেতৃত্ব দিতে হবে। আমাদের এমন নির্ভরযোগ্য তহবিল প্রয়োজন যা আমাদের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে এবং আমাদের ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণ করে।
দ্বিতীয়ত, বাণিজ্য সহযোগিতা। এশিয়া এখনও সবচেয়ে কম সুসংহত অঞ্চলগুলোর মধ্যে একটি। এর ফলে বিনিয়োগ এবং বাণিজ্য বাধাগ্রস্ত হয়। আমাদের অবিলম্বে বাণিজ্য সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্য কাজ করতে হবে।
তৃতীয়ত, খাদ্য ও কৃষি সহযোগিতা। আমাদের সম্পদ-সাশ্রয়ী কৃষিকাজকে উৎসাহিত করতে হবে। খাদ্য নিরাপত্তার জন্য অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বৃদ্ধি করতে হবে। আমাদের আমদানি নির্ভরতা কমাতে হবে এবং স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে হবে।
পরিবেশের ক্ষতি না করে কৃষিকে টিকিয়ে রাখতে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানো এবং নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবন করা খুবই জরুরি।
চতুর্থত, প্রযুক্তি সহযোগিতা। এশিয়াকে একটি শক্তিশালী প্রযুক্তিগত বাস্তুতন্ত্র হিসেবে গড়ে তুলতে হবে, যা পুনরুদ্ধারমূলক (restorative), বিতরণমূলক (distributive) এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক (inclusive) হওয়া উচিত। আমাদের জ্ঞান, তথ্য নিজেদের মধ্যে বিনিময় করে নিতে হবে এবং প্রযুক্তির বিকাশ ও উদ্ভাবনে তা কাজে লাগাতে হবে। ডিজিটাল সমাধানের ক্ষেত্রে পারষ্পরিক সহযোগিতা অগ্রগতিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
পরিশেষে, আমাদের সম্মিলিত কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা উচিত বুদ্ধিমত্তার সম্প্রসারণ এবং তরুণদের শক্তিকে একত্রিত করা। আমাদের একটি নতুন সভ্যতার ভিত্তি স্থাপন করতে হবে; যা হবে আত্ম-সংরক্ষণমূলক (সেলফ প্রিসার্ভিং) এবং আত্ম-শক্তিশালীমূলক (সেলফ রেইনফোর্সিং) সমাজের জন্য। আমাদের অবশ্যই একটি শূন্য-অপচয় (জিরো ওয়েস্ট) জীবনধারার ওপর ভিত্তি করে একটি কাউন্টার-কালচার তৈরি করতে হবে।
ভোগ বা কনসাম্পশন কেবলমাত্র অপরিহার্য চাহিদার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখতে হবে। সামাজিক ব্যবসাকে আমাদের অর্থনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে আনতে এর ওপর মনোনিবেশ করা প্রয়োজন।
বোয়াও ফোরাম এবং এশিয়ার অন্যান্য অনুরূপ উদ্যোগের মাধ্যমে তরুণ ও উদ্যোক্তাদের সহযোগিতা বৃদ্ধি করা উচিত যাতে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এশিয়াকে আরও উন্নত অঞ্চল হিসেবে করে তোলা যায়।
আমি সবসময় যেমনটা বলে এসেছি, প্রতিটি তরুণের তিন-শূন্য ব্যক্তি হিসেবে বেড়ে ওঠা প্রয়োজন। সামাজিক ব্যবসায় উদ্যোক্তা হওয়ার মাধ্যমে শূন্য নেট কার্বন নিঃসরণ, শূন্য সম্পদ কেন্দ্রীকরণ এবং শূন্য বেকারত্ব। এটিই হলো আমাদের সকলের সম্মিলিত ভবিষ্যতের লক্ষ্য, যা এশিয়ায় আমাদের সকলের একসঙ্গে মিলে তৈরি করতে হবে।
সবাইকে ধন্যবাদ।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.