সিরাজুর রহমান#
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নের পাশাপাশি খাদ্য উৎপাদন এবং কৃষি সেক্টরে এক নীরব বিপ্লব ঘটিয়েছে রেড জায়ান্ট চীন। বর্তমানে সারা বিশ্বে ইন্ডাস্ট্রিয়াল এন্ড ম্যানুফ্যাকচারিং হাবে পরিণত হলে চীনের সাধারণ মানুষ কিন্তু তাদের ঐতিহ্যবাহী কৃষি কাজকে একবারে ভুলে যায় নি। দেশটি বর্তমানে কৃষি সেক্টরে নিজস্ব আধুনিক প্রযুক্তি এবং ইনোভেটিভ আইডিয়া প্রয়োগ করার মাধ্যমে এক নতুন যুগের সূচনা করেছে। চীনের জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরো এর ওয়েব সাইতের দেয়া তথ্যমতে, চলতি ২০২৪ সালে চীনের শস্য উৎপাদনের মোট পরিমাণ হচ্ছে প্রায় ৭০০ মিলিয়ন টন।
যা কিনা আগের ২০২৩ সাল অপেক্ষা প্রায় ১.৬% বেশি শস্য উৎপাদন করেছে দেশটি। আর টানা ৯ বছর যাবত গড়ে মোট ৬৫০ মিলিয়ন টন শস্য উৎপাদন করার পর এই প্রথম বারের মতো দেশটিতে রেকর্ড পরিমাণ ৭০০ মিলিয়ন টন খাদ্যশস্য উৎপাদনের মাইলফলক অর্জন করতে যাচ্ছে। গত ২০২৩ সালের হিসেব অনুযায়ী চীনের জাতীয় অর্থনীতিতে (জিডিপি) কৃষি সেক্টরের অবদান মাত্র ৭.১%। যা কিনা ষাটের দশকে প্রায় ৮০% ছিল তবে বর্তমানে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নে দেশটি ব্যাপক অগ্রগতি অর্জন করায় দেশটির জিডিপি-তে শিল্প সেক্টর প্রায় ৩৮.৩% এবং সার্ভিস খাত ৫৪.৬% দখল করে রয়েছে।
তবে সাম্প্রতিক সময়ে চলমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মহামন্দা মুখে চীনের সার্বিক অর্থনীতি কিছুটা চ্যালেঞ্জের মুখে পরলেও বিগত এক দশক থেকে সারা বিশ্বে একক দেশ হিসেবে শীর্ষ স্থানীয় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ গড়ে তুলেছে দেশটি। উইকিপিডিয়া এবং চীনের ফরেন এক্সচেঞ্জের স্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের প্রকাশিত হালনাগাদ প্রতিবেদনের তথ্যমতে, চলতি ২০২৪ সালের ১লা নভেম্বরের হিসেব অনুযায়ী চীনের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৩,৩৮০.৪ বিলিয়ন ডলার। যা থেকে কার্যত চীনের সার্বিক অর্থনৈতিক সক্ষমতার শক্তিশালী চিত্র ফুটে উঠে।
আসলে আমেরিকার সাথে চলমান অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক বিরোধ ও দ্বন্দ্বের কারণে চীনের বৈদেশিক বাণিজ্য গত ২০২৩ সালে অনেকটাই ক্ষতিগ্রস্ত হলেও তা কিন্তু চলতি ২০২৪ সালের শেষের দিকে এসে অবিশ্বাস্যভাবে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে। দেশটির রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত জেনারেল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অফ কাস্টমস কর্তৃক প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্যমতে, চলতি ২০২৪ সালের ১১ মাসে চীনের মোট বৈদেশিক বাণিজ্যের (আমদানি-রপ্তানি) পরিমাণ ছিল ৫.৪৯ ট্রিলিয়ন ডলার। যা কিনা গত ২০২৩ সালের ১২ মাসে ছিল ৫.৮৭ ট্রিলিয়ন ডলার এবং ২০২২ সালে তা ছিল ৬.০৫ ট্রিলিয়ন ডলার।
এদিকে চীনের জেনারেল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অফ কাস্টমসের দেয়া তথ্যমতে, চলতি ২০২৪ সালের প্রথম ১১ মাসে সারা বিশ্বে মোট পণ্য ও সেবা রপ্তানি করে ৩.২ ট্রিলিয়ন ডলার এবং একই সময়ে সারা বিশ্ব থেকে পণ্য ও সেবা আমদানি করে প্রায় ২.৩ ট্রিলিয়ন ডলার। তাছাড়া গত ২০২৩ সালে ১২ মাসে দেশটি মোট পণ্য ও সেবা রপ্তানি করে ৩.৩৮ ট্রিলিয়ন ডলার এবং একই সময়ে সারা বিশ্ব থেকে ২.৫৬ ট্রিলিয়ন ডলারের পণ্য ও সেবা আমদানি করে। যা কিনা তার আগের ২০২২ সাল অপেক্ষা রপ্তানি ৪.৬% এবং আমদানি ৫.৫% কম ছিল।
ইউকিপিডিয়া এবং আইএমএফ এর ২০২৪ সালের হালনাগাদ তথ্যমতে, বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় অর্থনীতির দেশ হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জিডিপির আকার প্রায় ২৯.১৬৮ ট্রিলিয়ন ডলার এবং বিশ্বে দ্বিতীয় বৃহত্তম শক্তিশালী অর্থনীতির দেশ হিসেবে চীনের জিডিপির আকার ১৮.২৭৪ ট্রিলিয়ন ডলার দেখানো হয়েছে। তাছাড়া আইএমএফ এর প্রেডিকশন অনুযায়ী আমেরিকার জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ২.৮% এবং চীনের প্রবৃদ্ধির হার ৪.৮% দেখানো হয়েছে। চলতি ২০২৪ সালের জুন মাসের হিসেব অনুযায়ী চীনের বৈদেশিক উতস থেকে নেয়া মোট ঋণ ও দেনার স্থিতির পরিমাণ হতে পারে প্রায় ২.৫৪৫ ট্রিলিয়ন ডলার।
তবে পশ্চিমা মিডিয়ার দেয়া তথ্যমতে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনের বৈদেশিক ঋণ ও বিনিয়োগ নীতি স্বল্প আয়ের দেশগুলোর জন্য বড় ধরনের অর্থনৈতিক সমস্যার কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে এই দেশগুলোকে দীর্ঘ মেয়াদে একরকম অদৃশ্য বৈদেশিক ঋণের ফাঁদে আটকে ফেলেছে বলে মনে করে পশ্চিমা বিশ্ব। বেল্ট এন্ড রোড ইনেশিয়েটিভ প্রজেক্টে বিনিয়োগের নামে চীন গত ২০১৩ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত মোট ১৫০টি দেশে প্রায় ৬৭৯ বিলিয়ন ডলার ঋণ বিতরণ করেছে। যার অধিকাংশ অনুন্নত দেশের পক্ষে এই ঋণ পরিশোধ করার ক্ষমতা নেই। যদিও অবশ্য পশ্চিমাদের এহেন সমালোচনাকে অনেকটাই একতরফা বা ত্রুটিপূর্ণ প্রচার বলে মনে করে চীন।##তথ্যসূত্র:- ইউএস গভর্নমেন্ট অ্যাকাউন্টিবিলিটি অফিস, সিএমজি বাংলা, আইএমএফ, চায়না কাস্টমস, রয়টার্স ও ইউকিপিডিয়া।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.