-- বিজ্ঞাপন ---

সাইফ আলী খানকে হামলাকারি ১ কোটি দাবি করে, ধারালো অস্ত্রে ক্ষত-বিক্ষত করে নায়ককে

বিশেষ প্রতিনিধি#

এত নিরাপত্তা সত্বেও ভারতের নায়ক সাইফ আলি খানকে হত্যা চেষ্টার ঘটনা নিয়ে তোলপাড় চলছে সিনেমা জগতসহ গোটা ভারতে। যেখানে এমন একজন মানুষের নিরাপত্তা নেই, সেখানে সাধারন মানুষের বি অবস্থা এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। একইসাথে ভারতের অন্যান্য তারকা মহলেও নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত সবাই। প্রশ্ন উঠেছে ভিডিও ফুটেজ থাকা সত্বেও কেন এখনও এ ঘটনার কুল কিনারা পুলিশ করতে পারছে না এ নিয়েও। জানা গেছে, হামলাকারি নাকি ১ কোটি টাকা দাবি করেছিল। ভারতীয় গণমাধ্যম  সূত্র জানায়, বৃহপতিবার ভোরের ঘটনার পর মুম্বই পুলিশের অপরাধ দমন শাখা তদন্তে নেমেছে। মোট সাতটি দল অভিযুক্তের খোঁজ চালাচ্ছে। প্রাথমিক ভাবে পুলিশ জানিয়েছিল, বাড়ির সমস্ত সিসি ক্যামেরার ফুটেজ খতিয়ে দেখে তারা বুঝেছেন ঘটনার প্রায় ঘণ্টা দুয়েক আগে পর্যন্ত সন্দেহভাজন কোনও ব্যক্তি বাইরে থেকে ওই আবাসনে প্রবেশ করেনি। কিন্তু ঘটনার পর সন্দেহভাজনের পালিয়ে যাওয়ার ফুটেজ পাওয়া গিয়েছে বলে দাবি। এরই মধ্যে প্রকাশ করা হয়েছে সইফের বাড়ির পিছনের সিঁড়ির সিসিটিভি ফুটেজ। স্পষ্ট দেখা গিয়েছে এক ব্যক্তির মুখ। কিন্তু ২৪ ঘণ্টা পরও অধরা দুষ্কৃতী।

সইফ আলি খানের ছেলে জেহ-এর আয়া এলিয়ামা ফিলিপ বৃহস্পতিবার ছুরি হামলায় নিজেও আহত হন। তবে নিজের জীবন ঝুঁকি নিয়েই খুদে জেহ-কে বাঁচাতে গিয়েছিলেন এই নারী। যার বর্ণন তিনি নিজেই দিয়েছেন পুলিশকে। পুলিশের কাছে দেওয়া বয়ানে ওই নারী জানিয়েছেন, হামলাকারী ১ কোটি টাকা চেয়েছিল।

পুলিশ আধিকারিকরা জানিয়েছেন, অনুপ্রবেশকারী জোর করে অভিনেতার ফ্ল্যাটে ঢোকেনি বা কোনো ভাঙচুর করেনি। সম্ভবত ডাকাতির উদ্দেশ্যে রাতের কোনও এক সময়ে লুকিয়ে ঢুকে পড়েছিল। ।

ফিলিপ জানান, তিনি জেহের ঘরে মেঝেতে শুয়ে ঘুমাচ্ছিলেন এবং রাত ২টার দিকে ঘুম ভেঙে যায় একটি শব্দ শুনে। এবং দেখেন একজন লোক ছোট্ট জেহ-র দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আর তা দেখে তিনি দৌড়ে যান জেহর দিকে, তাকে বাঁচাতে। কিন্তু সেই সময় হামলাকারী তাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়।

‘আমি বাথরুমে কে আছে, তা দেখার জন্য উঠে বসলাম… আমি দেখলাম একজন রোগা ও বেঁটে লোক বেরিয়ে এসে জেহের বিছানার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে’, বিবৃতিতে বলেন ফিলিপ। তিনি আরও জানান যে লোকটি তার দিকে আঙুল তোলে এবং তাঁকে সতর্ক করে দেয় মুখ থেকে একফোঁটা আওয়াজ না করতে। লোকটা বলে, ‘কোই আওয়াজ নেহি’।

সেই আয়া পুলিশকে জানিয়েছেন, এরপর তিনি জানতে চান, কী চায় ওই ব্যক্তি। যাতে জবাবে সে ১ কোটি দাবি করে। ‘ধস্তাধস্তির সময় সে ব্লেড দিয়ে আমার ওপর হামলা চালায়। আমার কব্জিতে চোট লেগেছে।’ ৪ বছর ধরে এই তারকা দম্পতির সঙ্গে কাজ করা ফিলিপ বলেন, ‘সে বলেছিল যে সে টাকা চায়, এবং ১ কোটি টাকার দরকার।

তিনি পুলিশকে আরও জানান যে, অনুপ্রবেশকারীর বয়স প্রায় ৪০ বছর। তার চিৎকার শুনে সইফ ও করিনা নিজেদের বেডরুম থেকে ছুটে আসে। আর সইফ স্বভাবতই ছেলেকে বাঁচাতে ছুটে যান। সইফ খালি হাতে ছিলেন, ওই হামলাকারীর হাতে ছিল ধারালো অস্ত্র। অভিনেতা মারাত্মকভাবে জখম হন। বাড়ির লোকেরা জেগে উঠেছে বুঝতে পেরে, পালিয়ে যায় ওই আততায়ী। সিসিটিভি ফুটেজে হামলাকারীকে ফায়ার এক্সিট সিঁড়ি দিয়ে পালাতে দেখা গিয়েছে।

এদিকে, মারধরের পর সইফকে যেখানে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, সেখানকার চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, অভিনেতা খুব শীঘ্রই পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠবেন। করিনা আপাতত দুই ছেলেকে নিয়ে রয়েছেন দিদি করিশ্মার বাড়িতে। বিপদের দিনে বলি দম্পতির পাশে গোটা বলিউড।
বুধবারে মাঝরাতে সইফ ও করিনার বাড়িতে ডাকাতির উদ্দেশে প্রবেশ করে এক ব্যক্তি। সেইসময় গোটা পরিবার ছিল গভীর ঘুমে। এখানেই শেষ নয়, আটকাতে গেলে ছুরি নিয়ে হামলা করা হয় সইফ আলি খানের উপরে। এরপর বাড়ির অন্য সদস্যরা জেগে উঠলে, সেই ব্যক্তি পালিয়ে যান বলেই খবর পাওয়া যাচ্ছে। আপাতত লীলাবতী হাসপাতালে সইফ আলি খান। প্রায় ৫ ঘণ্টা ধরে চলে তাঁর অপারেশন।

এদিকে, ইতিমধ্যেই ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। মুম্বই পুলিশের পাশাপাশি, মুম্বই ক্রাইম ব্রাঞ্চও তদন্তে। অভিনেতার বাড়ির নীচে এনকাউন্টার স্পেশালিস্ট দয়াকে দেখা গিয়েছে, পুলিশ কুকুরও নিয়ে আসা হয়েছে। খতিয়ে দেখা হচ্ছে সিসিটিভি ফুটেজ।

একাধিক রিপোর্টে দাবি করা হয় যে, জেহের তত্ত্বাবধায়ক চোরকে প্রথম দেখেন এবং চিৎকার করে ওঠেন। আর সইফ তাঁর সেই চিৎকার শুনেই ছুটে যান জেহের ঘরে। এরপর দুজনের মধ্যে হাতাহাতি হয়। এবং ছুরি দিয়ে আঘাত করে পালিয়ে যায় সে। যদিও সইফ-করিনার গৃহকর্মী এলিমা ফিলিপস ওরফে লিমা যিনি সেইসময় বাড়িতে উপস্থিত ছিলেন এবং তিনিই প্রথমে অভিযুক্তকে ফ্ল্যাটে প্রবেশ করতে দেখেন। তিনি অভিযুক্তকে থামানোর চেষ্টা করেন এবং হাতাহাতিতে তাঁর হাতে আঘাত লাগে। তার চিৎকার শুনে সইফ আলি খান এসে ওই হামলাকারীর সঙ্গে ধস্তাধস্তি শুরু করে। অভিযুক্ত তার সঙ্গে ধারালো অস্ত্র বস্তু বহন করছিল এবং তা দিয়েই সইফকে ছুরিকাঘাত করেছিল বলে পুলিশ জানিয়েছে।

পুলিশ আগেই নিশ্চিত করেছিল যে, ঘটনাটি ঘটার সময় করিনা কাপুর, তৈমুর, জেহ এবং বাড়ির সমস্ত সদস্য বাড়িতেই ছিলেন। প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার ভোর ৪টার দিকে ডাকাতির চেষ্টার ঘটনা ঘটে।

সইফকে নিয়ে হাসপাতালে ছুটে যান করিনা কাপুর খান। ইতিমধ্যেই বন্ধুকে দেখতে হাসপাতালে পৌঁছে গিয়েছেন শাহরুখ খান। লীলাবতী হাসপাতালে পৌঁছে গিয়েছেন সইফের প্রথমপক্ষের দুই সন্তান সারা আলি খান ও ইব্রাহিম আলি খান।

কেমন আছেন সইফ আলি খান বর্তমানে?
লীলাবতী হাসপাতালের নীরজ উত্তমানি বলেন, সাইফের অস্ত্রোপচার শেষ হয়েছে এবং পরিবার শীঘ্রই একটি বিবৃতি জারি করতে চলেছে। লীলাবতী হাসপাতালের সিওও আরও জানান যে ছুরির ভাঙা অংশ সইফ আলি খানের মেরুদণ্ডের কাছে পাওয়া গিয়েছে এবং সেটি বের করে আনা হয়েছে। উত্তমানি জানান যে, সেটি পুলিশের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। সাইফকে আইসিইউ-তে স্থানান্তরিত করা হয়েছে এবং একদিনের জন্য আইসিইউ-তে পর্যবেক্ষণে রাখা হবে।## হিন্দুস্তান টাইমস/আনন্দবাজার

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.