কাজী আবুল মনসুর#
ব্লু অরিজিন মহাকাশ সংস্থা সোমবার সকালে ইতিহাস গড়েছে, যখন তাদের নিউ শেফার্ড (NS-31) রকেটের মাধ্যমে ছয়জন নারীর একটি সর্ব-মহিলা মহাকাশযাত্রা সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। অংশগ্রহণকারী দলের মধ্যে ছিলেন জনপ্রিয় মার্কিন পপ তারকা কেটি পেরি, যা এই যাত্রাকে বিশেষভাবে নজরকাড়া করে তোলে।
১১ মিনিটের একটি ঐতিহাসিক ভ্রমণ
ব্লু অরিজিন জানিয়েছে, ফ্লাইটটি তাদের Launch Site One থেকে সোমবার সকাল ৮:৩০টা সিডিটি সময়ে পশ্চিম টেক্সাসে উৎক্ষেপণ করা হয়। যাত্রাটি ছিল মোট ১১ মিনিট দীর্ঘ, যেখানে রকেটটি পৃথিবী থেকে ৬০ মাইলের বেশি উচ্চতায় উঠে কারমান রেখা অতিক্রম করে। কারমান রেখা হচ্ছে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১০০ কিমি বা ৬২ মাইল উচ্চতায় একটি কাল্পনিক সীমারেখা, যা পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল ও মহাকাশের সীমানা হিসেবে বিবেচিত হয়।
অংশগ্রহণকারী ছয় সাহসী নারী
এই ফ্লাইটে যাঁরা অংশ নিয়েছেন, তাঁদের প্রত্যেকেই নিজ নিজ ক্ষেত্রে পরিচিত মুখ: কেটি পেরি – পপ সংগীতশিল্পী, যিনি আগে থেকেই মহাকাশ ভ্রমণের স্বপ্ন দেখতেন। তিনি সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, “আমি ১৫ বছর ধরে এই স্বপ্ন দেখে এসেছি, আর এখন সেটি বাস্তব।” মিশনে আরো ছিলেন, লরেন সানচেজ একজন সাংবাদিক ও হেলিকপ্টার পাইলট, ব্লু অরিজিনের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোসের বাগদত্তা। গেইল কিং ,জনপ্রিয় মার্কিন সাংবাদিক ও টিভি উপস্থাপক, যিনি বহু বছর ধরে সংবাদমাধ্যমে কর্মরত, আইশা বোউ, প্রাক্তন নাসা রকেট বিজ্ঞানী, STEM শিক্ষার একজন উদ্দীপক এবং তরুণীদের বিজ্ঞান চর্চায় উদ্বুদ্ধ করেন,আমান্ডা গুয়েন – বায়োঅ্যাস্ট্রোনটিকস গবেষক, নাগরিক অধিকার কর্মী এবং যৌন সহিংসতার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে আইন পরিবর্তনের অন্যতম উদ্যোক্তা ও কেরিয়ান ফ্লিন , স্বাধীন চলচ্চিত্র নির্মাতা ও মহাকাশভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণে আগ্রহী।
কি রকম ছিল তাদের অভিজ্ঞতা
কেটি পেরি বলেছেন,”এটা ছিল এক জীবনের অভিজ্ঞতা” । মহাকাশ থেকে ফিরে এসে কেটি পেরি বলেন, “এটা ছিল এক জীবনের অভিজ্ঞতা।” তিনি মহাকাশযাত্রার সময় “What a Wonderful World” গানটি গেয়েছেন এবং পৃথিবীতে ফিরে এসে মাটিতে চুমু খেয়েছেন ।
লরেন সানচেজ বলেছেন, “পৃথিবীকে নতুন দৃষ্টিতে দেখেছি” জেফ বেজোসের বাগদত্তা লরেন সানচেজ বলেন, “মহাকাশে ভেসে থাকার সময় পৃথিবীর নিঃশব্দ সৌন্দর্য আমাকে মুগ্ধ করেছে।” তিনি এই অভিজ্ঞতাকে “পরিবর্তনশীল” এবং “অসাধারণ” বলে বর্ণনা করেছেন ।
গেইল কিং বলেন, “ভয়কে জয় করে নতুন দিগন্তে পা রেখেছি” সিবিএস নিউজের উপস্থাপক গেইল কিং বলেন, “আমি ভয় পেয়েছিলাম, কিন্তু এই অভিজ্ঞতা আমাকে সাহসী করেছে।” তিনি আরও বলেন, “এই যাত্রা তরুণীদের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে” ।
আমান্ডা গুয়েন বলেন, “নারীদের জন্য গবেষণার নতুন দিগন্ত” বায়োঅ্যাস্ট্রোনটিকস গবেষক ও নাগরিক অধিকার কর্মী আমান্ডা গুয়েন মহাকাশে একটি বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা পরিচালনা করেছেন, যা মহাকাশে নারীদের স্বাস্থ্য সম্পর্কিত গবেষণায় নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে ।
১৯৬৩ সালের পর প্রথম সর্ব-মহিলা মহাকাশ মিশন
ব্লু অরিজিন জানিয়েছে, এই মিশনটি ১৯৬৩ সালের পর প্রথমবারের মতো একটি পূর্ণাঙ্গ সর্ব-মহিলা মহাকাশযাত্রা। এর আগে, মাত্র একজন নারী – সোভিয়েত নভোচারী ভ্যালেন্তিনা তেরেশকোভা – এককভাবে মহাকাশে গিয়েছিলেন। সেই ইতিহাসের পর এই মিশন নতুন করে একটি নজির স্থাপন করল।
রিইউজেবল প্রযুক্তিতে ভবিষ্যতের মহাকাশ পর্যটন
নিউ শেফার্ড রকেটটি একটি সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় ও পুনঃব্যবহারযোগ্য (reusable) সাব-অরবিটাল যান। এটি মহাকাশ পর্যটনের জন্য তৈরি করা হয়েছে, যেখানে সাধারণ মানুষও ভবিষ্যতে মহাকাশে ঘুরে আসতে পারবেন। রকেটের ক্যাপসুলটি ফ্লাইট শেষে প্যারাসুটের মাধ্যমে নিরাপদে পৃথিবীতে ফিরে আসে।
ব্লু অরিজিনের ভবিষ্যত পরিকল্পনা
ব্লু অরিজিন, যার প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোস, ধীরে ধীরে মহাকাশ পর্যটনকে সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে আনতে চাচ্ছে। ভবিষ্যতে তাদের লক্ষ্য রয়েছে চাঁদে অবতরণ, মহাকাশ স্টেশন নির্মাণ এবং মঙ্গল অভিযানে অংশ নেওয়া।
ব্লু অরিজিনের NS-31 মিশন শুধু প্রযুক্তির দিক থেকে নয়, বরং সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকেও একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত। এটি নারীদের মহাকাশে অংশগ্রহণের গুরুত্ব এবং সক্ষমতাকে বিশ্ববাসীর সামনে নতুনভাবে তুলে ধরেছে। কেটি পেরির মতো একজন পপ তারকার অংশগ্রহণ সাধারণ মানুষের আগ্রহকেও বাড়িয়ে দিয়েছে।##
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.