-- বিজ্ঞাপন ---

বিধ্বস্ত সিরিয়া, সুন্দরী আসমাও ছাড়তে চাইছেন আসাদকে?

কাজী আবুল মনসুর#

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ‘জেরুজালেম পোস্ট’-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৪৯ বছর বয়সি আসমা রাশিয়ার এক আদালতে বিচ্ছেদের মামলা দায়ের করেছেন। একই সঙ্গে মস্কো ছাড়ার অনুমতির জন্যও আবেদন করেছেন তিনি। তাঁর আবেদন বিবেচনা করে দেখা হচ্ছে।আসমার জন্ম ব্রিটেনে। বাবা ছিলেন সেখানকার কার্ডিয়োলজিস্ট। মা ছিলেন সিরিয়ার দূতাবাসে কূটনীতিবিদ। তবে দু’জনেই সিরিয়ার নাগরিক। পরে কর্মসূত্রে লন্ডনে চলে যান। পড়াশোনা লন্ডনেই। কলেজে পড়ার সময়ে বাশারের সঙ্গে পরিচয় হয় আসমার। ২০০০ সালে আসাদ সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরে তাঁর সঙ্গে গোপনে বিয়ে হয়েছিল আসমার। সে সময়ে আসমার বয়স ছিল ২৫ বছর। সে বছরই লন্ডন ছেড়ে সিরিয়া চলে আসেন তিনি।

সিরিয়া এখন বিদ্রোহীদের দখলে। আসাদ পালিয়ে গেলেও দেশ চালাচ্ছে আসাদেরই তল্পিবাহক এক সরকার। সিরিয়ার দিকে নজর অনেক দেশের। বিশেষ করে ইসরাইল এখন সিরিয়ার বড় অংশের দখল নিতে মরিয়া। ইসরাইল এরই মধ্যে দফায় দফায় হামলা চালিয়েছে। দখল করেছে সিরিয়ার বেশ কিছু অংশও। আসাদ রাশিয়ায় পালিয়ে গেলেও স্বস্তিতে নেই। এরই মধ্যে আসাদের স্ত্রী আসমা আর থাকতে চাইছেন না আসাদের সাথে। আসমার ভালো লাগছে না মস্কোর জীবনযাপন। গুঞ্জন উঠেছে তাদের মধ্যে ছাড়াছাড়ি হবার সময় এসেছ।  বর্তমানে রাশিয়ার আশ্রয়ে মস্কোয় সপরিবার রয়েছেন বাশার। কিন্তু মস্কোর জীবনযাপনে খুশি নন বাশারের স্ত্রী আসমা আল আসাদ! বিভিন্ন আরবীয় এবং তুরস্ক সংবাদমাধ্যমে দাবি করা হচ্ছে, আসমা বিবাহবিচ্ছেদের মামলা করেছেন। বাশারকে বিচ্ছেদ দিয়ে নিজের জন্মভূমি লন্ডনে ফিরে যেতে চান তিনি!

সিরিয়ায় দীর্ঘ দিন শাসন করেছে আসাদ পরিবার। বাশারের বাবা হাফিজ় আল আসাদ টানা ৩০ বছর সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট ছিলেন। বাশার এবং তাঁর বাবা হাফিজ় আল আসাদ, দু’জনে মিলে ৫০ বছরের বেশি সময় সিরিয়া শাসন করেছেন। ২০০০ সালে হাফিজ়ের মৃত্যুর পর ক্ষমতায় আসেন তিনি। টানা ২৪ বছর শাসন করার পর গত ৮ ডিসেম্বর সিরিয়ায় তাঁর সাম্রাজ্যের পতন হয়।

আসমা আল-আসাদ, সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের স্ত্রী, একজন প্রভাবশালী এবং আলোচিত ব্যক্তিত্ব। তিনি ২০০০ সালে বাশার আল-আসাদের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। আসমা আল-আসাদ লন্ডনে জন্মগ্রহণ করেন এবং ব্রিটিশ-সিরিয়ান নাগরিক। তাঁর পিতার নাম ফাওয়াজ আখরাস, যিনি একজন কার্ডিওলজিস্ট, এবং মায়ের নাম সাহার আখরাস, যিনি একজন কূটনীতিক। আসমা আল-আসাদ লন্ডনের কিংস কলেজ থেকে কম্পিউটার সায়েন্স এবং ফ্রেঞ্চ লিটারেচার বিষয়ে গ্র্যাজুয়েশন করেছেন। পড়াশোনা শেষে তিনি লন্ডনে ব্যাংকিং এবং ফিনান্স খাতে কাজ করেন।

ফার্স্ট লেডি হিসেবে তিনি সিরিয়ার সমাজকল্যাণ ও উন্নয়নমূলক কার্যক্রমে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, এবং স্থানীয় উদ্যোক্তাদের উন্নয়নে তার বিশেষ অবদান রয়েছে। তবে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন সম্পর্কিত বিভিন্ন অভিযোগে আসমা আল-আসাদ আন্তর্জাতিকভাবে সমালোচিত হয়েছেন। যুদ্ধের সময় সাধারণ জনগণের দুর্ভোগ উপেক্ষা করে বিলাসবহুল জীবনযাপন করার অভিযোগ তাকে বিতর্কিত করে তুলেছে।

আসমা আল-আসাদের তিন সন্তান রয়েছে—এইচ, জাইন এবং করিম। ২০১৮ সালে আসমার স্তন ক্যান্সার ধরা পড়ে। তবে উন্নত চিকিৎসার পর তিনি পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ওঠেন। আসমা আল-আসাদের জীবন এবং কর্ম একদিকে মানবকল্যাণমূলক কাজের জন্য প্রশংসিত হলেও, সিরিয়ার রাজনৈতিক পরিস্থিতি তাকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিতর্কিত করেছে।

আসমা আল-আসাদ এবং বাশার আল-আসাদের সম্পর্ক নিয়ে সম্প্রতি বিভিন্ন গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। কিছু আন্তর্জাতিক এবং মধ্যপ্রাচ্যের সংবাদ মাধ্যমের মতে, আসমা আল-আসাদ বাশার আল-আসাদের সাথে থাকায় আর আগ্রহী নন এবং ডিভোর্স চাচ্ছেন। এমনকি তিনি সিরিয়া ছেড়ে অন্যত্র থাকার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন বলেও দাবি করা হয়েছে।

গুঞ্জন অনুযায়ী, বাশার আল-আসাদ এবং তার সরকারের ওপর রাশিয়ার প্রভাব ক্রমেই বাড়ছে। আসমা আল-আসাদ নাকি এ প্রভাব নিয়ে সন্তুষ্ট নন এবং মস্কোতে থাকার সম্ভাবনা নিয়েও অস্বস্তি প্রকাশ করেছেন। এছাড়া, সিরিয়ার যুদ্ধপরবর্তী পুনর্গঠন এবং সরকারের রাজনৈতিক নীতির ওপর তার ব্যক্তিগত মতবিরোধও থাকতে পারে।

যদিও আসমা এবং বাশারের সম্পর্ক নিয়ে এমন গুজব ছড়ালেও, সিরিয়ার সরকার বা তাদের কোনো ঘনিষ্ঠ সূত্র থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। গোপনীয়তার কারণে এই বিষয়টি নিয়ে পরিষ্কার তথ্য পাওয়া কঠিন।

অনুসন্ধান মতে, সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের উপর তার দেশের মানুষের এত ক্ষোভের পেছনে বিভিন্ন রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, এবং মানবিক কারণ রয়েছে। বাশার আল-আসাদের সরকারকে দীর্ঘদিন ধরে স্বৈরাচারী হিসেবে দেখা হয়। ২০০০ সালে তার ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে তিনি বিভিন্ন রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ এবং বিরোধীদের বিরুদ্ধে কঠোর দমনপীড়ন চালিয়েছেন। তার পরিবারের শাসন আমলে জনগণের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং গণতান্ত্রিক সংস্কার প্রায় অনুপস্থিত। ২০১১ সালে আরব বসন্তের ঢেউ সিরিয়ায় পৌঁছালে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদকারীদের বিরুদ্ধে তার সরকার কঠোর ব্যবস্থা নেয়। বিক্ষোভ দমনে ব্যাপক সহিংসতা এবং নিপীড়ন শুরু হয়, যা পরবর্তীতে গৃহযুদ্ধে রূপ নেয়। এতে লক্ষাধিক মানুষ প্রাণ হারায় এবং লক্ষ লক্ষ মানুষ শরণার্থী হতে বাধ্য হয়। সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ দীর্ঘ এক দশকেরও বেশি সময় ধরে চলেছে, যা দেশের অর্থনীতি, অবকাঠামো, এবং সমাজকে ধ্বংস করে দিয়েছে। অনেকেই মনে করেন যে আসাদের একগুঁয়ে নেতৃত্ব এবং আলোচনায় অনীহা এই যুদ্ধকে দীর্ঘায়িত করেছে। যুদ্ধের সময় তার বাহিনী এবং মিত্ররা (বিশেষ করে রাশিয়া এবং ইরান) ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। হাজার হাজার বিরোধী নেতা এবং বেসামরিক মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, এবং অনেককে বিচার ছাড়া হত্যা করা হয়েছে।
যুদ্ধ এবং শাসন ব্যবস্থার ব্যর্থতার কারণে সিরিয়ার অর্থনীতি প্রায় সম্পূর্ণরূপে ভেঙে পড়েছে। দেশটির মুদ্রার মান ব্যাপকভাবে কমে গেছে, এবং জনগণ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের সংকটে ভুগছে। সরকার এবং ক্ষমতাসীন পরিবারের বিরুদ্ধে দুর্নীতি এবং সম্পদের অপব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে। আসাদের সরকারকে আলাউইট সম্প্রদায়ের পক্ষপাতী হিসেবে দেখা হয়, যা সিরিয়ার অন্যান্য সম্প্রদায়ের (বিশেষ করে সুন্নি মুসলমান) মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি করেছে। এই সাম্প্রদায়িক বিভাজন আসাদের সরকারের প্রতি জনগণের ক্ষোভকে বাড়িয়ে তুলেছে।
আসাদ সরকারের টিকে থাকার পেছনে রাশিয়া এবং ইরানের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। তবে এই মিত্রতার কারণে দেশের ওপর তাদের প্রভাব বেড়েছে, যা অনেক সিরীয় নাগরিকের কাছে জাতীয় স্বার্থের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা বলে মনে হয়। গৃহযুদ্ধের পর সিরিয়াকে পুনর্গঠন করার মতো কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিতে আসাদের সরকার ব্যর্থ হয়েছে। দেশের পুনর্গঠনের পরিবর্তে সরকার তার ক্ষমতা ধরে রাখতে বেশি মনোযোগী বলে সমালোচনা রয়েছে। সিরিয়ার লাখ লাখ শরণার্থী, যারা তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে, তারা আসাদের সরকারকে তাদের দুর্দশার জন্য দায়ী করে।
বাশার আল-আসাদের বিরুদ্ধে এই ক্ষোভের ফলে বহু সিরীয় নাগরিক তাকে আর প্রেসিডেন্ট হিসেবে দেখতে চান না। কিন্তু শক্তিশালী মিত্রদের সহায়তায় এবং সামরিক ক্ষমতার ওপর নির্ভর করে তিনি এখনও ক্ষমতায় টিকে আছেন। সিরিয়ার জনগণের এই ক্ষোভ কেবল রাজনৈতিক পরিবর্তনের দাবিই নয়, বরং তাদের শান্তি, নিরাপত্তা, এবং জীবনের অধিকারের লড়াইও প্রতিফলিত করে।

সিরিয়ার বর্তমান অবস্থা অত্যন্ত জটিল এবং অনেক দিক থেকে উদ্বেগজনক। যুদ্ধ, অর্থনৈতিক সংকট, মানবাধিকার লঙ্ঘন, এবং আন্তর্জাতিক রাজনীতির চাপ দেশটিকে এক গভীর সংকটে ফেলে দিয়েছে। সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ না হলেও সংঘাতের তীব্রতা কমেছে। তবে দেশটির বড় একটি অংশ এখনো বিভিন্ন শক্তির নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
বাশার আল-আসাদের সরকার দেশের বেশিরভাগ শহর এবং কেন্দ্রীয় অঞ্চল নিয়ন্ত্রণে রেখেছে। বিদ্রোহী এবং জঙ্গি গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণ: দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল বিশেষ করে ইদলিব প্রদেশ এখনো বিদ্রোহী ও জঙ্গি গোষ্ঠী যেমন হায়াত তাহরির আল-শাম-এর দখলে। উত্তর-পূর্বাঞ্চলে কুর্দি নেতৃত্বাধীন Syrian Democratic Forces (SDF) এর দখল রয়েছে, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন পায়। সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলের কিছু অংশ তুরস্ক নিয়ন্ত্রণ করছে।
সিরিয়ার অর্থনীতি ধ্বংসপ্রায়। যুদ্ধ, আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা, এবং দুর্নীতির কারণে দেশের মুদ্রার মান উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের ঘাটতি: খাদ্য, ওষুধ, জ্বালানি, এবং অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সংকট তীব্র। দেশে বেকারত্বের হার অত্যন্ত বেশি, এবং বহু মানুষ তাদের পরিবার চালাতে ব্যর্থ হচ্ছে। সিরিয়ায় প্রায় ৬৮ লক্ষ মানুষ অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত, এবং প্রায় ৬০ লক্ষ মানুষ দেশ ছেড়ে শরণার্থী হিসেবে অন্যান্য দেশে আশ্রয় নিয়েছে। জাতিসংঘের মতে, সিরিয়ার ৯০% মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করছে। তাদের মধ্যে অনেকেই পর্যাপ্ত খাবার এবং বিশুদ্ধ পানি পাচ্ছে না। যুদ্ধ এবং নিষেধাজ্ঞার ফলে দেশটির স্বাস্থ্যখাত ভেঙে পড়েছে। হাসপাতালে ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জামের অভাব মারাত্মক।
সিরিয়ার সরকার এবং বিরোধী দলগুলোর মধ্যে কোনো কার্যকর আলোচনা বা সমঝোতার উদ্যোগ নেই। বাশার আল-আসাদ আন্তর্জাতিকভাবে বেশিরভাগ দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন থাকলেও রাশিয়া, ইরান, এবং কিছু আরব দেশ তার পাশে রয়েছে। পশ্চিমা দেশগুলো আসাদ সরকারের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় দেশটির পুনর্গঠনে তহবিল সংগ্রহ করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
সিরিয়ার প্রধান সামরিক এবং রাজনৈতিক মিত্র। তারা আসাদ সরকারের ক্ষমতায় থাকার অন্যতম কারণ। সিরিয়ার শিয়া সম্প্রদায় এবং সরকারের প্রতি সমর্থন দিয়ে আসছে। সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে তাদের সামরিক কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে, যা কুর্দি গোষ্ঠী এবং সিরীয় সরকার উভয়ের জন্য সমস্যা তৈরি করছে। সিরিয়ার কুর্দি অঞ্চল এবং জঙ্গি দমন কার্যক্রমে জড়িত। তবে তাদের উপস্থিতি সীমিত।দীর্ঘমেয়াদী যুদ্ধের ফলে সিরিয়ার শিক্ষা এবং সামাজিক কাঠামো ধ্বংস হয়ে গেছে। একটি প্রজন্ম স্কুল থেকে বঞ্চিত হয়েছে এবং তারা ভবিষ্যতে পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে সক্ষম হবে কিনা, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। মানসিক স্বাস্থ্য সংকট: যুদ্ধ এবং বাস্তুচ্যুত হওয়ার কারণে সাধারণ মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যের অবস্থা ভয়াবহ।
পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা আসাদের সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করলেও, এর প্রভাব সাধারণ মানুষের ওপর বেশি পড়ছে। নিষেধাজ্ঞার কারণে সিরিয়া আন্তর্জাতিক তহবিল এবং উন্নয়ন সহায়তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। পুনর্গঠনের জন্য সিরিয়ার প্রায় ২৫০ বিলিয়ন ডলারের প্রয়োজন বলে ধারণা করা হয়, যা বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রায় অসম্ভব।
আসাদের শাসন এবং সরকারের অযোগ্যতা জনগণের মধ্যে ব্যাপক হতাশা এবং ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে। অনেকেই মনে করেন যে আসাদ ক্ষমতায় থাকলে দেশটির সংকট কখনোই সমাধান হবে না।
কার্যত সিরিয়া এখন এক ধ্বংসপ্রায় রাষ্ট্র। যুদ্ধ, অর্থনৈতিক সংকট, এবং রাজনৈতিক অচলাবস্থার কারণে দেশটি চরম মানবিক সংকটে রয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতি উন্নতির জন্য আন্তর্জাতিক সমর্থন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, এবং অর্থনৈতিক পুনর্গঠন অত্যন্ত জরুরি। তবে আসাদের শাসন এবং আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা এই উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করছে।

সিরিয়ায় বর্তমানে একটি সরকার আছে, এবং সেই সরকার বাশার আল-আসাদের নেতৃত্বে পরিচালিত হচ্ছে। আসাদ সরকার ২০০০ সাল থেকে ক্ষমতায় রয়েছে এবং তার পরিবার ১৯৭০ সাল থেকে সিরিয়ার রাজনীতিতে আধিপত্য বিস্তার করে আসছে।তবে, সিরিয়ার সরকার এখন পুরো দেশ নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। দেশটি বিভিন্ন শক্তির মধ্যে বিভক্ত হয়ে পড়েছে, যার ফলে একাধিক অঞ্চল ভিন্ন ভিন্ন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আসাদ সরকার সিরিয়ার রাজধানী দামাস্কাসসহ দেশের প্রধান শহরগুলো এবং দক্ষিণ ও মধ্যাঞ্চলের অধিকাংশ এলাকা নিয়ন্ত্রণ করে। রাশিয়া এবং ইরানের সমর্থনে আসাদ সরকার টিকে আছে। বিশেষ করে রাশিয়ার সামরিক উপস্থিতি এবং ইরানের অর্থনৈতিক ও সামরিক সহযোগিতা সরকারকে শক্তিশালী করেছে। সরকার আন্তর্জাতিকভাবে পশ্চিমা দেশগুলো থেকে বিচ্ছিন্ন, তবে রাশিয়া, ইরান এবং কিছু আরব দেশের সমর্থন পায়।
সিরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল, বিশেষ করে ইদলিব প্রদেশ, এখনো বিদ্রোহীদের দখলে রয়েছে। এখানে প্রধানত হায়াত তাহরির আল-শাম (HTS) নামক একটি ইসলামপন্থী জঙ্গি গোষ্ঠীর শক্তিশালী উপস্থিতি রয়েছে। এ অঞ্চলটি তুরস্কের মদতপ্রাপ্ত বিদ্রোহীদেরও নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। উত্তর-পূর্ব সিরিয়ায় Syrian Democratic Forces (SDF) কুর্দি নেতৃত্বাধীন একটি শক্তিশালী সামরিক দল, যারা এই অঞ্চলের বড় অংশ নিয়ন্ত্রণ করে। এই গোষ্ঠী যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা পায় এবং তারা আইএস (ISIS)-এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। তবে, কুর্দি গোষ্ঠী এবং তুরস্কের মধ্যে সংঘাত চলমান, কারণ তুরস্ক কুর্দি গোষ্ঠীকে হুমকি হিসেবে দেখে। সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলের কিছু অংশ তুরস্ক সরাসরি সামরিক অভিযান চালিয়ে নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। তুরস্কের প্রধান লক্ষ্য কুর্দি গোষ্ঠীকে দুর্বল করা এবং সীমান্ত অঞ্চলে তাদের প্রভাব বিস্তার করা। তুরস্ক তাদের নিজস্ব মদতপুষ্ট বিদ্রোহীদেরও সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। যদিও আইএস আনুষ্ঠানিকভাবে পরাজিত হয়েছে, তাদের অবশিষ্টাংশ এখনো সিরিয়ার কিছু অঞ্চলে সক্রিয়। বিশেষ করে মরু এলাকাগুলোতে তারা গেরিলা হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।

গোলান মালভূমি একটি কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল যা সিরিয়া এবং ইসরাইলের মধ্যে বহু বছর ধরে বিতর্কিত। এটি ১৯৬৭ সালের ছয় দিনের যুদ্ধে ইসরাইল দখল করে নেয়, এবং ১৯৮১ সালে ইসরাইল এই অঞ্চলে নিজেদের আইন প্রয়োগ করে। তবে সিরিয়া এখনও এই অঞ্চলকে নিজেদের বলে দাবি করে। গোলান মালভূমি থেকে ইসরাইলের নজর একটি বৃহত্তর ভূ-রাজনৈতিক এবং কৌশলগত দিক নির্দেশ করে। এই অঞ্চলটি উঁচু ভূমি হওয়ায়, তা ইসরাইলের জন্য নিরাপত্তার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান। ইসরাইল বিভিন্ন সময় সিরিয়ার ইরানী সমর্থিত মিলিশিয়া এবং হেজবোলাহ-এর অবস্থান লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালিয়েছে। ইসরাইলের অভিযোগ, ইরান সিরিয়ায় অস্ত্র পাঠাচ্ছে এবং এর মাধ্যমে ইসরাইলের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য আক্রমণের প্রস্তুতি নিচ্ছে।ইসরাইলের সামরিক হামলার লক্ষ্য মূলত সিরিয়ায় ইরানি অস্ত্রাগার এবং মিলিশিয়া গোষ্ঠীকে ধ্বংস করা, যাতে তাদের ইসরাইলের সীমান্তে শক্তি বৃদ্ধি না পায়।

সিরিয়ার একটি সরকার আছে, তবে সেটি পুরো দেশ নিয়ন্ত্রণ করতে অক্ষম। দেশটি এখন কার্যত বিভিন্ন অংশে বিভক্ত। বাশার আল-আসাদের সরকার (প্রধান অঞ্চল), বিদ্রোহী ও জঙ্গি গোষ্ঠী,কুর্দি গোষ্ঠী ও তুরস্কের নিয়ন্ত্রিত অঞ্চল। এই বিভক্তির ফলে সিরিয়ার রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক পরিস্থিতি অত্যন্ত জটিল হয়ে পড়েছে।##

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.