-- বিজ্ঞাপন ---

তাইওয়ান পেল প্রথম এফ-১৬ (ভাইপার) ব্লক-৭০/৭২ যুদ্ধবিমান, এশিয়ায় সামরিক ভারসাম্য কি বদলাবে?

সিরাজুর রহমান#

গত ২৯শে মার্চ তাইওয়ান প্রথম ব্যাচে আমেরিকার লকহিড মার্টিন কর্পোরেশনের কাছ থেকে একটি এফ-১৬ (ভাইপার) ব্লক-৭০/৭২ সিরিজের অ্যাডভান্স যুদ্ধবিমান হাতে পেয়েছে। মূলত গত ২০১৯ সালে বিমান বাহিনীর আধুনিকায়নের অংশ হিসেবে তাইওয়ান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ৮ বিলিয়ন ডলার মূল্যে ৬৬টি সিঙ্গেল ইঞ্জিনের এফ-১৬ (ভাইপার) ব্লক-৭০/৭২ সিরিজের অ্যাডভান্স যুদ্ধবিমান ক্রয়ের চুক্তি করেছিল।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এভিয়েশন জায়ান্ট লকহিড মার্টিন তাদের গ্রিনভিল সাউথ ক্যারোলিনা ফ্যাসিলিটি প্লান্টে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ৬৬টি নবনির্মিত এফ-১৬ যুদ্ধবিমানের প্রথমটি তাইওয়ান সরকারের কাছে হস্তান্তর করে। যাকে বিমান বাহিনীর আধুনিকায়নের এক মাইলফলক অর্জন হিসেবে মনে করছে তাইওয়ান। বর্তমানে তাইওয়ানের বিমান বাহিনীতে মোট প্রায় ১৪১টি বিভিন্ন সিরিজের এফ-১৬ ফাইটিং ফ্যালকন যুদ্ধবিমান অপারেশনাল রয়েছে।

তাইওয়ানের বিমান বাহিনীতে বর্তমানে মোট প্রায় ৪৯০টি এয়ারক্রয়াফট অপারেশনাল রয়েছে। যার মধ্যে কমব্যাট এয়ারক্রাফট রয়েছে ২৯০টি। প্রথম সারির যুদ্ধবিমান হিসেবে তাইওয়ানের হাতে এ মুহুর্তে ১৪১টি আপগ্রেডেড এফ-১৬এ/বি সিরিজের ব্লক-৭০/৭২ ফাইটিং ফ্যালকন (২৬টি এফ-১৬বি ব্লক-৭২ ট্রেইনার ভেরিয়্যান্ট) যুদ্ধবিমান রয়েছে। তাছাড়া মিরেজ-২০০০ যুদ্ধবিমান ৪৬টি এবং নিজস্ব প্রযুক্তির তৈরি এআইডিসি এফ-সিকে-১ চিং কু মাল্টিরোল এয়ারক্রাফট রয়েছে মোট ১০৩টি।

এদিকে চীনের বিমান বাহিনীতে মোট প্রায় ২,৯৮৯টি কমব্যাট এয়ারক্রাফট থাকলেও চীন কিন্তু ১৯৫৮ সালের পর কখনোই তাইওয়ানের মূল ভুখন্ডে এয়ারকমব্যাট মিশন পরিচালনা করার মতো সাহস করেনি। মূলত ১৯৫৮ সালের ২৪শে সেপ্টেম্বর চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মি এয়ার ফোর্সের ১২৫টির অধিক মিগ-১৫ ও মিগ-১৭ যুদ্ধবিমান একযোগে তাইওয়ানের আকাশে ঢুকে পড়লে এক ভয়াবহ আকাশ যুদ্ধ শুরু হয়।

তবে আমেরিকার সহায়তায় তাইওয়ানের বিমান বাহিনী খুব দ্রুত চীনের যুদ্ধবিমানকে ইন্টারসেপ্ট করার জন্য আমেরিকার তৈরি এআইএম-৯ সাইডউইন্ডার এয়ার টু এয়ার মিসাইল সজ্জিত প্রায় অর্ধ শতাধিক এফ-৮৬ স্যাবার জেট ফাইটার পাঠায়। এ যুদ্ধে চীনের বিপুল সংখ্যক যুদ্ধবিমান অংশগ্রহন করলেও আমেরিকার নতুন উদ্ভাবিত এআইএম-৯ সাইডউইন্ডার এয়ার টু এয়ার মিসাইলের কাছে শোচনীয়ভাবে পরাজয় বরণ করে।

গত ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসের হিসেব অনুযায়ী বর্তমানে আমেরিকা, ইউক্রেন এবং আর্জেন্টিনাসহ সারা বিশ্বের ২৭টি দেশ বিভিন্ন সিরিজের মোট ২,১৪৫টি এফ-১৬ যুদ্ধবিমান অপারেট করে। যার মধ্যে সবচেয়ে আধুনিক ও আপগ্রেড ভার্সন হচ্ছে এফ-১৬ (ভাইপার) ব্লক-৭০/৭২ সিরিজের ফাইটিং ফ্যালকন যুদ্ধবিমান। যদিও খুব কম দেশই এই সিরিজের যুদ্ধবিমান অপারেট করে। এমনিক আমেরিকার নিজের বিমান বাহিনীতে এখনো পর্যন্ত ভাইপার সিরিজের যুদ্ধবিমান সার্ভিসে আসেনি।

১৯৭৪ সালে এফ-১৬ যুদ্ধবিমান প্রথম আকাশে উড্ডয়ন করলেও এটি ১৯৭৮ সালের ১৭ই আগস্ট প্রথম সার্ভিসে আসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিমান বাহিনীতে। তাছাড়া গত ১৯৭৪ সাল থেকে গত ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত মোট প্রায় ৪,৮০০টি বিভিন্ন সিরিজে এবং ব্লকে এফ-১৬ ফাইটিং ফ্যালকন যুদ্ধবিমান তৈরি করে। তবে একক দেশ হিসেবে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মার্কিন বিমান বাহিনী এবং নৌবাহিনী সর্বোচ্চ সংখ্যক ৮৯৭টি বিভিন্ন সিরিজের এফ-১৬ যুদ্ধবিমান অপারেট করে।

আমেরিকার পাশাপাশি মিশর ২১৮টি, তুরস্ক ২৪৩টি, ইসরাইল ২২৪টি, দক্ষিণ কোরিয়া ১৬৭টি, গ্রিস ১৫৪টি এবং তাইওয়ান ১৩৭টি (৬৬টি নতুন অর্ডার দেয়া আছে) এবং পাকিস্তান ৭৫টি বিভিন্ন সিরিজের এফ-১৬ যুদ্ধবিমান অপারেট করে। তাছাড়া এফ-১৬ যুদ্ধবিমান ব্যবহারকারী অন্যান্য দেশগুলোর মধ্যে ইন্দোনেশিয়া ৩৩টি, সিঙ্গাপুর ৬০টি, জর্ডান ৫৯টি, বেলজিয়াম ৫৩টি, থাইল্যান্ড ৫০টি, পোল্যান্ড ৪৮টি, চিলি ৪৬টি, নেদারল্যান্ডস ২৬টি, পর্তুগাল ২৫টি, ওমান ২৩টি, মরক্কো ২৩টি ডেনমার্ক ৪৩টি, ইরাক ৩৪টি, সংযুক্ত আরব আমিরাত ৭৬টি এফ-১৬ই (ব্লক-৬০) যুদ্ধবিমান অপারেট করে।

তাছাড়া মার্কিন বিরোধী শিবিরের একমাত্র দেশ হিসেবে ভেনিজুয়েলার বিমান বাহিনীতে এফ-১৬এ/বি সিরিজের যুদ্ধবিমান রয়েছে ১৫টি। বর্তমানে এফ-১৬ ফাইটিং ফ্যালকন যুদ্ধবিমান আমেরিকা ছাড়াও নেদারল্যান্ডস, বেলজিয়াম, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান এবং তুরস্ক নিজস্বভাবে ম্যানুফ্যাকচারিং বা অ্যাসেম্বলি করে থাকে। বিশেষ করে দক্ষিণ কোরিয়ার স্যামসাং কোম্পানি ও জাপানের মিতসুবিশি হেভি ইন্ডাস্ট্রিজ তাদের নিজস্ব প্রযুক্তির সমন্বয়ে নিজ দেশেই এই জাতীয় যুদ্ধবিমান উৎপাদন করে।##তথ্যসূত্র:- উইকিপিডিয়া, দ্য ডিফেন্স পোস্ট, বুলগেরিয়ান মিলিটারি, ইউরোএশিয়ান টামস।

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.