-- বিজ্ঞাপন ---

ধ্বংসের মুখে পৃথিবীর বৃহত্তম হিমশৈল “A23A” আইসবার্গ!

সিরাজুর রহমান#

বর্তমানে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় এবং প্রাচীন হিমশৈল হচ্ছে “A23A” (আইসবার্গ)। যা অ্যান্টার্কটিকার ফিলচনার বরফ সোপান থেকে ১৯৮৬ সালে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। উইকিপিডিয়ার দেয়া তথ্যমতে, “A23A” হিমশৈলের আয়তন প্রায় ৩,৫০০ বর্গকিলোমিটারের হতে পারে। যা কিনা ইউরোপের ছোট্ট দেশ লুক্সেমবার্গ দেশের চেয়ে অনেকটাই বড় বা রোড আইল্যান্ডের সমান হতে পারে। যেখানে লুক্সেমবার্গ এর আয়তন হচ্ছে ২,৫৮৬ বর্গকিলোমিটার।

বিবিসির দেয়া তথ্যমতে, এক সময় “A23A” হিমশৈল (আইসবার্গ) এর আয়তন ছিল ৩,৯০০ বর্গ কিলোমিটার (১,৫০০ বর্গ মাইল)। বর্তমানে এতে ব্যাপক হারে ক্ষয়ের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে এবং আয়তনের দিক দিয়ে এটি ক্রমশ সংকুচিত হচ্ছে। বিশেষ করে উষ্ণ সমুদ্রে প্রবাহিত হওয়ার সাথে সাথে এতে থাকা বিপুল পরিমাণে বরফ প্রতিনিয়ত গলে যাচ্ছে। বর্তমানে এই আইসবার্গের আনুমানিক আয়তন হবে হয়ত ৩,২৩৪ বর্গ কিলোমিটার।

“A23A” হিমশৈলটি ১৯৮৬ সালে অ্যান্টার্কটিকা থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর সমুদ্রতলের শৈলশিরায় আটকে যায় এবং দীর্ঘ প্রায় ৩৭ বছর যাবত সেখানে আটকে ছিল। তবে গত ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে এটি একটি সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড় (সম্ভবত সমুদ্রস্রোত বা এডি) থেকে মুক্ত হয়ে অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশের উত্তর দিকে অগ্রসর হতে শুরু করে।

বিবিসির দেয়া তথ্যমতে, এই আইসবার্গটি এখন কিনা দক্ষিণ জর্জিয়া দ্বীপের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। যা কিনা ব্রিটিশ সামুদ্রিক অঞ্চল ও একটি জীববৈচিত্র্য সমৃদ্ধ হটস্পট হিসেবে বিবেচনা করা হয়। দক্ষিণ জর্জিয়া দ্বীপ হচ্ছে মূলত দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগরের পাহাড়ি অনুর্বর দ্বীপ। ফকল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জের (ইসলাস মালভিনাস) ১,৩০০ কিলোমিটার পূর্ব-দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত।

পরিবেশ বিজ্ঞানীরা আশাঙ্খা করেন যে, “A23A” হিমশৈলটি (আইসবার্গ) দক্ষিণ জর্জিয়া দ্বীপের সাথে সংঘর্ষ হলে এটি একেবারেই টুকরো হয়ে যেতে পারে। যা অত্র অঞ্চলের প্রাকৃতিক পরিবেশে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে পারে। বিশেষ করে এই ধরনের দুর্ঘটনা ঘটলে দক্ষিণ জর্জিয়া দ্বীপ এবং তার আশেপাশের সামুদ্রিক এলাকায় টিকে থাকা সমৃদ্ধ জীববৈচিত্র্যের জন্য হুমকি হয়ে দেখা দিতে পারে।

বর্তমানে দক্ষিণ জর্জিয়ায় পেঙ্গুইন, সিল ও সামুদ্রিক পাখির বিশেষ সংরক্ষিত প্রজনন ক্ষেত্র রয়েছে। হিমশৈলটি যদি দ্বীপের কাছাকাছি আটকে যায়, তা প্রাণীদের খাদ্য শৃঙ্খলে বা সংগ্রহের পথে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। এই হিমশৈলটি ইতোমধ্যেই ভাসমান হওয়ায় এটি গলে গেলেও সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পাওয়ার হয়ত সম্ভবনা নেই। তবে এটি টুকরো টুকরো হয়ে গেলে সমুদ্রপথে জাহাজ চল বিঘ্ন ঘটতে পারে।

বর্তমানে পরিবেশ বিজ্ঞানীরা স্যাটেলাইট ইমেজ এবং অন্যান্য প্রযুক্তিগত সহায়তায় “A23A” হিমশৈলের গতিবিধির নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করে যাচ্ছেন। তবে হিমশৈলের গতিপ্রকৃতি একেবারেই প্রাকৃতিক হলেও জলবায়ু পরিবর্ত এবং বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধিজনিত কারণে অ্যান্টার্কটিকায় বরফের বিচ্ছিন্নতা উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে মনে করেন বিজ্ঞানীরা।

বিজ্ঞানীরা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করে দেখেছেন যে, এই আইসবার্গটি খুব সম্ভবত বরফের তাকের প্রাকৃতিক বৃদ্ধি চক্রের অংশ হিসাবে ভেঙে গেছে। তা কিন্তু জীবাশ্ম জ্বালানি-চালিত জলবায়ু সংকটের কারণে নয়। তবে তাদের মতে, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি কিন্তু অ্যান্টার্কটিকায় উদ্বেগজনক পরিবর্তন আনছে। যার ফলে অদূর ভবিষ্যতে পৃথিবীর সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির জন্য হয়ত ধ্বংসাত্মক পরিণতি ডেকে আনতে পারে।

 

তথ্যসূত্র:- বিবিসি, সিএনএন ক্লাইমেট, ইউকিপিডিয়া।

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.