-- বিজ্ঞাপন ---

তুরস্কের স্কি রিসোর্টে আগুন। ঘুমের ঘোরে রাশিয়া,জার্মানিসহ বিভিন্ন দেশের ৭৬ পর্যটক নিহত

বিশেষ প্রতিনিধি#
তুরস্কের উত্তর-পশ্চিমের বোলু প্রদেশের কারতালকায়া শহরে অবস্থিত একটি জনপ্রিয় স্কি রিসর্টে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে কমপক্ষে ৭৬ জন নিহত হয়েছে এবং ৫০ জন আহত হয়েছে। মঙ্গলবার ভোররাতে রিসর্টের রেস্তোরাঁ থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। কয়েক মিনিটের মধ্যেই আগুন পুরো হোটেল ভবনে ছড়িয়ে পড়ে, যেখানে তখন ২৩৮ জন পর্যটক অবস্থান করছিলেন। আগুন ছড়িয়ে পড়ার সময় পর্যটকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। অনেকেই জানালা দিয়ে লাফিয়ে প্রাণ বাঁচানোর চেষ্টা করেন, তবে তাতেও অনেকে মৃত্যুর হাত থেকে রেহাই পাননি। প্রায় ৫০ জন আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়, যাদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর।

তুরস্কের দমকল বাহিনী এবং উদ্ধারকর্মীরা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে কাজ শুরু করেন। আহতদের স্থানীয় হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে এবং মৃতদেহ শনাক্ত করার জন্য ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা কাজ করছেন। এখন পর্যন্ত নিহতদের মধ্যে ৫২ জনের পরিচয় নিশ্চিত করা হয়েছে। অগ্নিকাণ্ডের কারণ অনুসন্ধানে তদন্ত চলছে। তুরস্কের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলি ইয়েরলিকায়া জানিয়েছেন, এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে নয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, রিসর্টের রেস্তোরাঁর রান্নাঘরে গ্যাস লিকের কারণে আগুন লেগে থাকতে পারে। তবে দমকল বাহিনীর মতে, সঠিক কারণ নির্ধারণ করতে আরও সময় লাগবে।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেচেপ তাইয়েপ এরদোয়ান নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন এবং আহতদের চিকিৎসায় সর্বোচ্চ সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

এই মর্মান্তিক ঘটনার পর রিসর্টটি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তুরস্কের বোলু প্রদেশের কারতালকায়া স্কি রিসর্টে ঘটে যাওয়া এই মর্মান্তিক অগ্নিকাণ্ডে নিহত এবং আহত পর্যটকদের মধ্যে বেশিরভাগই বিদেশি ছিলেন। নিহতদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পর্যটক রাশিয়ার। কারতালকায়া স্কি রিসর্ট রাশিয়ান পর্যটকদের মধ্যে বিশেষভাবে জনপ্রিয়। কয়েকজন জার্মান পর্যটকও এই ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন। ইরান থেকেও বেশ কয়েকজন পর্যটক রিসর্টে অবস্থান করছিলেন এবং তাদের মধ্যে কয়েকজন নিহত ও আহত হয়েছেন। স্থানীয় পর্যটকরাও এই অগ্নিকাণ্ডের শিকার হয়েছেন।
নিহত এবং আহতদের বিভিন্ন দেশের দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের পরিবারের কাছে তথ্য পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। আহতদের মধ্যে বেশ কয়েকজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আঙ্কারা এবং ইস্তাম্বুলে পাঠানো হয়েছে। তুরস্কের সরকারের পক্ষ থেকে নিহতদের পরিবারকে সহায়তা এবং আহতদের চিকিৎসায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

জানা গেছে, অধিকাংশ পর্যটক তখন ঘুমিয়ে ছিলেন। ঘটনাটি ঘটে মঙ্গলবার ভোররাতে, যখন রিসর্টের অতিথিদের বেশিরভাগই তাদের কক্ষের ভেতরে ঘুমাচ্ছিলেন। আগুন প্রথমে রিসর্টের রেস্তোরাঁর রান্নাঘরে শুরু হয় এবং দ্রুত পুরো ভবনে ছড়িয়ে পড়ে। এই সময়ে, অনেকেই ধোঁয়ার কারণে জেগে উঠতে পারেননি, ফলে তাদের জন্য বের হওয়া অসম্ভব হয়ে পড়ে। প্রাথমিক তদন্তে ধারণা করা হচ্ছে, রেস্তোরাঁর রান্নাঘরে গ্যাস লিকেজ থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছিল। রান্নাঘরের গ্যাস লাইন পুরনো এবং সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়নি বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। অন্য একটি সম্ভাবনা হিসেবে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিটের কথা বলা হচ্ছে, কারণ রান্নাঘরের বৈদ্যুতিক সরঞ্জামগুলোও ঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়নি। রিসর্টে অগ্নি সনাক্তকরণ ব্যবস্থা ও অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র ছিল অপ্রতুল। অ্যালার্ম সিস্টেম ঠিকমতো কাজ না করায় অনেক অতিথি আগুনের খবর পেতে দেরি করেছেন।

ধোঁয়ার কারণে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে অনেকের মৃত্যু হয়েছে। যারা জানালা দিয়ে লাফ দিয়েছিলেন, তাদের মধ্যে কয়েকজন গুরুতর আহত হন এবং কয়েকজন ঘটনাস্থলেই মারা যান। রিসর্টের স্টাফরাও আতঙ্কে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হন।
তুরস্কের সরকার এই ঘটনার জন্য দায়ীদের শনাক্ত করতে একটি উচ্চ-পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। রিসর্টের মালিক এবং পরিচালকদের বিরুদ্ধে অবহেলার অভিযোগ আনা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যাদের মধ্যে রিসর্টের ম্যানেজার এবং রক্ষণাবেক্ষণ কর্মীরা অন্তর্ভুক্ত।

রিসর্টটি ৫ তলা বিশিষ্ট একটি আধুনিক স্থাপনা, যেখানে বিলাসবহুল কক্ষ, রেস্তোরাঁ, স্পা, এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা ছিল।অগ্নিকাণ্ডের সময় আগুন রেস্তোরাঁর রান্নাঘর থেকে শুরু হয়ে দ্রুত উপরের তলাগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে। ভবনে জরুরি নির্গমনের ব্যবস্থা থাকলেও তা পর্যাপ্ত ছিল না বা সঠিকভাবে ব্যবহার করা সম্ভব হয়নি। উপরের তলায় থাকা অতিথিরা ধোঁয়ার কারণে নিচে নামতে পারেননি এবং জানালা দিয়ে লাফ দেওয়ার চেষ্টা করেন।#

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.