-- বিজ্ঞাপন ---

চাঁদকে কেন্দ্র করে ইউএই-র মহাকাশ অভিযান চূড়ান্ত লক্ষ্য মঙ্গল গ্রহ!!

আলী রশিদ,দুবাই থেকে#

মঙ্গল গ্রহে বসতি স্থাপন সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) মহাকাশ অভিযানের প্রধান লক্ষ্য হলেও, বর্তমানে দেশটির ৭০ শতাংশ মনোযোগ চাঁদকে কেন্দ্র করে রয়েছে বলে জানিয়েছেন মোহাম্মদ বিন রশিদ স্পেস সেন্টারের (এমবিআরএসসি) মহাপরিচালক সালেম হুমাইদ আল মারি।
ওয়ার্ল্ড গভর্নমেন্টস সামিটে এক আলোচনায় আল মারি বলেন,চাঁদ অন্বেষণ মঙ্গল গ্রহে জীবন আবিষ্কারের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। ২১১৭ সালের মধ্যে মঙ্গলে মানব বসতি স্থাপনের সাহসী লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে ইউএই।
তিনি ব্যাখ্যা করেন, চাঁদ থেকে প্রাপ্ত তথ্য মঙ্গলের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। আগামী পাঁচ বছর চাঁদকেন্দ্রিক উন্নয়ন পরবর্তীতে মঙ্গল অভিযানে কাজে লাগানো হবে। ইউএই স্পেস এজেন্সির মহাপরিচালক সালেম আল কুবাইসি বলেন, মঙ্গল মিশনের তথ্য পৃথিবীতে জলবায়ু পরিবর্তন বোঝার জন্য গুরুত্বপূর্ণ হবে। মহাকাশ অভিযানে নেতৃত্বদানকারী প্রথম আরব দেশ হিসেবে আগামী ১০ বছরের মধ্যে একজন আমিরাতি নাগরিক চাঁদে পা রাখবেন বলে আশা প্রকাশ করেন আল মারি।
স্বল্প সময়ে বিশাল সাফল্য
মাত্র ৫৩ বছর বয়সী দেশ হলেও, নেতৃত্বের দূরদর্শিতার কারণে ইউএই মহাকাশ অন্বেষণে অগ্রগামী অবস্থান অর্জন করেছে। ২০০৫ সালে মাত্র তিন-চার জনের ছোট দল নিয়ে যাত্রা শুরু করা এমবিআরএসসি(MBRSC), আজ সফলভাবে স্যাটেলাইট এবং মঙ্গল মিশন পরিচালনা করছে। শেখ মোহাম্মদ বিন রশিদ আল মাকতুমের উক্তি আল কুবাইসির মনে দাগ কেটেছে: “যেদিন আমরা চ্যালেঞ্জ নেওয়া বন্ধ করবো, সেদিনই ইউএই এগিয়ে যাওয়া বন্ধ করবে।” MBRSC হলো Mohammed Bin Rashid Space Centre (মোহাম্মদ বিন রাশিদ মহাকাশ কেন্দ্র), যা সংযুক্ত আরব আমিরাতের (UAE) প্রধান মহাকাশ গবেষণা ও উন্নয়ন কেন্দ্র।

MBRSC-এর মূল কাজ ও প্রকল্পসমূহ
আমিরাত মঙ্গল মিশন (Hope Probe): মঙ্গল গ্রহের আবহাওয়া ও জলবায়ু নিয়ে গবেষণা করার জন্য UAE-এর প্রথম মহাকাশ অভিযান।
রাশিদ রোভার: চাঁদে পাঠানো UAE-এর প্রথম রোভার, যা চাঁদের পৃষ্ঠে বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা চালাবে।
মঙ্গল ২১১৭ প্রকল্প: ২১১৭ সালের মধ্যে মঙ্গল গ্রহে মানব বসতি স্থাপন করার জন্য একটি উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা।
কৃত্রিম উপগ্রহ প্রকল্প: সংযুক্ত আরব আমিরাতের কৃত্রিম উপগ্রহ যেমন খলিফাস্যাট, যা স্থানীয়ভাবে তৈরি এবং পরিচালিত।
MBRSC কেন গুরুত্বপূর্ণ?
এটি মধ্যপ্রাচ্যে মহাকাশ গবেষণার পথপ্রদর্শক। আমিরাতের তরুণ প্রজন্মকে মহাকাশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে উৎসাহিত করছে। আন্তর্জাতিক মহাকাশ সংস্থাগুলোর সঙ্গে সহযোগিতা করছে, যেমন NASA, ESA এবং JAXA। UAE-কে বৈশ্বিক মহাকাশ মানচিত্রে প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে। Mohammed Bin Rashid Space Centre (MBRSC)-এ স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা কাজ করেন। এখানে প্রধানত কাজ করেন:

১. বিজ্ঞানী এবং প্রকৌশলীরা:
আমিরাতি বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলীরা: UAE-এর তরুণ প্রতিভাবানরা মহাকাশযান, রোভার, উপগ্রহ এবং ডেটা বিশ্লেষণের কাজ করে।
আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা: বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আসা অভিজ্ঞ বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলীরা সহযোগিতা করছেন।
২. গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব:
সালেম হুমাইদ আল মারি: MBRSC-এর মহাপরিচালক।
হাজ্জা আল মনসুরি: প্রথম আমিরাতি নভোচারী যিনি ২০১৯ সালে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে (ISS) গিয়েছিলেন।
সুলতান আল নেয়াদি: দ্বিতীয় আমিরাতি নভোচারী, যিনি ২০২৩ সালে ৬ মাসের জন্য মহাকাশে অবস্থান করেন।
৩. বিভাগের কাজ:
মহাকাশ প্রকল্প ব্যবস্থাপনা: উপগ্রহ, রোভার এবং মঙ্গল ও চাঁদ মিশন পরিচালনা।
ডেটা বিশ্লেষণ ও গবেষণা: মহাকাশ থেকে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ এবং গবেষণার জন্য দল।
প্রযুক্তি উন্নয়ন: উপগ্রহ, মহাকাশযান এবং রোভার তৈরির জন্য প্রযুক্তিগত দল।
আন্তর্জাতিক সহযোগিতা টিম: NASA, ESA (ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি) এবং JAXA (জাপান স্পেস এজেন্সি)-এর সঙ্গে কাজ করে।
MBRSC ২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০১৮ সালে খলিফাস্যাট তৈরি এবং উৎক্ষেপণ, যা পুরোপুরি UAE-তে তৈরি প্রথম উপগ্রহ। ২০২০ সালে Hope Probe মিশন, যা মঙ্গলের কক্ষপথে সফলভাবে প্রবেশ করে। ২০২২-২০২৩ সালে রাশিদ রোভার চাঁদে পাঠানোর পরিকল্পনা, যা আগামী কয়েক বছরে বাস্তবায়ন করা হবে।
MBRSC UAE-কে বৈশ্বিক মহাকাশ প্রতিযোগিতায় শীর্ষ পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছে। একইসঙ্গে দেশের তরুণদের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে আগ্রহী করে তুলছে এবং নতুন প্রজন্মের জন্য সুযোগ তৈরি করছে। আমিরাত মঙ্গল মিশন (Hope Probe) ২০২০ সালে উৎক্ষেপণ এবং ২০২১ সালে মঙ্গলের কক্ষপথে সফলভাবে প্রবেশ।
এটি মঙ্গল গ্রহের বায়ুমণ্ডল এবং জলবায়ু পর্যবেক্ষণ করছে। প্রথম আরব দেশ হিসেবে মঙ্গলের কক্ষপথে পৌঁছানোর কৃতিত্ব অর্জন করেছে UAE। খলিফাস্যাট (KhalifaSat) হচ্ছে, UAE-এর প্রথম স্থানীয়ভাবে তৈরি কৃত্রিম উপগ্রহ, যা ২০১৮ সালে উৎক্ষেপণ করা হয়। উন্নত মানের উপগ্রহ চিত্র সরবরাহ করে যা পরিবেশগত পরিবর্তন, নগরায়ন এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় সহায়ক। আমিরাতি নভোচারী প্রোগ্রাম এ হাজ্জা আল মনসুরি ২০১৯ সালে প্রথম আমিরাতি নভোচারী হিসেবে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে (ISS) ৮ দিন কাটান। সুলতান আল নেয়াদি ২০২৩ সালে প্রথম দীর্ঘমেয়াদি মহাকাশ মিশনে (৬ মাস) থাকা আরব নভোচারী। রাশিদ রোভার (Rashid Rover) UAE-এর প্রথম চাঁদ রোভার, যা চাঁদের পৃষ্ঠে গঠন এবং ভূতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য পরীক্ষা করবে। ২০২২ সালে উৎক্ষেপণের পরিকল্পনা থাকলেও পরবর্তী সময়ে ২০২৪-২০২৫ সালের মধ্যে চাঁদে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে। আর আমিরাত মঙ্গল ২১১৭ প্রকল্প হলো, ২১১৭ সালের মধ্যে মঙ্গল গ্রহে মানব বসতি স্থাপনের জন্য একটি দীর্ঘমেয়াদি মহাকাশ পরিকল্পনা।##

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.