-- বিজ্ঞাপন ---

আমরা কেন সবাই ইংরেজি ভাষার পেছনে ছুটছি?

সিরাজুর রহমান#
আমরা হয়ত অনেকেই মনে করি যে, আন্তর্জাতিক ভাষা ইংরেজিতে দক্ষ না হলে আমাদের দেশ কখনোই এগিয়ে যেতে পারবে না এবং উন্নত দেশের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারবে না। অন্যদিকে অনেকেই আবার বলেন যে, উচ্চ শিক্ষার প্রধান মাধ্যম হচ্ছে ইংরেজি এবং এটি ছাড়া উচ্চ শিক্ষা প্রায় অসম্ভব। অথচ জ্ঞান চর্চার প্রধান মাধ্যম হলো নিজের মাতৃভাষা। যাকে অবহেলা কিংবা অবজ্ঞা করে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ এক রকম নেই বললেই চলে।
আসলে মাতৃভাষায় জ্ঞানচর্চা এবং শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম এবং স্বল্প আয়ের একটি দেশের অর্থনৈতিক এবং প্রযুক্তিগত উন্নয়নের জন্য মাতৃভাষায় শিক্ষা এবং গবেষণা মূল ভিত্তি হিসেবে কাজ করে। যা কিনা নতুন নতুন উদ্ভাবন কিংবা শেখার প্রক্রিয়াকে সহজ করে এবং সৃজনশীলতাকে উৎসাহিত করে। চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, এবং রাশিয়ার মতো দেশগুলো তাদের মাতৃভাষায় শিক্ষা, গবেষণা, এবং প্রযুক্তি উন্নয়নে জোর দিয়েছে। যা নিশ্চিতভাবে তাদেরকে আজকের অবস্থানে পৌঁছাতে সাহায্য করেছে।
আসলে শিক্ষার সকল স্তরে মাতৃভাষার যথাযথ ব্যবহার ও প্রয়োগ করা সম্ভব না হলে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নে সাবলীলভাবে এগিয়ে যাওয়ার কোন সুযোগ থাকে না। এখানে প্রকাশ যোগ্য যে, চীনের মোট শিক্ষিত লোকসংখ্যার মাত্র প্রায় ০.৯% থেকে ১% এবং রাশিয়া এবং জাপানের আনুমানিক ৫% থেকে ৭% ইংরেজি ভাষায় দক্ষ হয়ে থাকেন। যদিও এই পরিসংখ্যানটি যৌক্তিক কারণে বাস্তবের সাথে কিছুটা কম বা বেশি হতে পারে।

তবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর একেবারে ধ্বংসস্তূপের মধ্যে দিয়ে চীন, জাপান এবং দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দেশগুলো যাত্রা শুরু করলেও বর্তমানে বিশ্বের শীর্ষ স্থানীয় উন্নত দেশের তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিশেষ করে চীনের অর্থনীতির আকার বিশ্বে দ্বিতীয় বৃহত্তম এবং ইউরোপের শক্তিশালী দেশগুলোর অর্থনীতিকে এক করলেও বর্তমানে চীনের সমান হবে না। উইকিপিডিয়ার দেওয়া তথ্যমতে, চলতি ২০২৫ সালের হিসেব অনুযায়ী চীনের নমিনাল জিডিপির আকার প্রায় ১৯.৫৩ ট্রিলিয়ন ডলার।
তাছাড়া নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন, গবেষণা এবং উন্নয়নে এক আমেরিকার পর সর্বোচ্চ স্থানে রয়েছে চীনের নাম। অথচ দেশটি কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর একেবারে শূন্য হাতে তাদের অর্থনৈতিক এবং প্রযুক্তিগত উন্নয়নের যাত্রা শুরু করেছিল। এমনকি পঞ্চাশ কিংবা ষাটের দশকে চীনের অর্থনৈতিক দুরবস্থা নিয়ে উপহাস করে পশ্চিমা বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর নিউজ মিডিয়ায় আর্টিকেল প্রকাশ করা হতো। অথচ আজ তারা কিন্তু ঠিকই কঠোর পরিশ্রম, টেকসই পরিকল্পনা, মেধা এবং ইনোভেটিভ আইডিয়া প্রয়োগের উপর নির্ভর করে সফল একটি দেশে পরিণত হয়েছে।

গত ২০২৩ সালের হিসেব অনুযায়ী চীনে প্রায় ৬ থেকে ৭ লক্ষাধিক এবং জাপানে প্রায় ১.৫ লক্ষাধিক গবেষণাপত্র প্রকাশ হয়েছে। আর এদিকে রকেট ইঞ্জিনিয়ারিং এবং সামরিক ও বেসামরিক নিউক্লিয়ার টেকনোলজিতে এখনও পর্যন্ত সারা বিশ্বে রাজত্ব করে যাচ্ছে রাশিয়া। তাছাড়া বিশ্বে রোবটিক এন্ড অটোমোবাইলস টেকনোলজির জন্য বিখ্যাত হয়ে রয়েছে জাপান। তাই একটি জাতির শিক্ষিত সমাজকে শুধু মেধাবী এবং শিক্ষিত হওয়াই কিন্তু যথেষ্ট নয়। বরং একটি দেশের শিক্ষিত এবং তরুণ সমাজের বড় অংশকে চরম মাত্রায় পরিশ্রমী, দ্বায়িত্বশীল, সফল উদ্যোক্তা এবং ইনোভেটিভ আইডিয়া সম্পন্ন হতে হবে।

তবে এটা ঠিক যে, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ইংরেজি একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। তাই বলে এটি কিন্তু একমাত্র সাফল্যের চাবিকাঠি নয়। রাশিয়া, চীন, জাপান, এবং দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দেশগুলো তাদের মাতৃভাষায় গবেষণা ও উন্নয়ন চালিয়ে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় দেশে পরিণত হয়েছে। আমাদের উচিত তার মাতৃভাষাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া এবং গবেষণা, উদ্ভাবন, এবং শিক্ষার মান উন্নয়নে জোর দেওয়া। বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে উদ্ভাবনী চিন্তাভাবনা এবং পরিশ্রমের মনোভাব তৈরি করতে পারলে আমাদের বাংলাদেশও কিন্তু বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারবে।##

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.