--- বিজ্ঞাপন ---

বিমান বাহিনীর সক্ষমতায় কোন দেশ এগিয়ে, ইরান নাকি ইসরাইল

0

সিরাজুর রহমান,বিশেষ প্রতিনিধি##

বর্তমানে গোটা মধ্যপ্রাচ্যে চলমান এক ভয়াবহ সামরিক উত্তেজনা এবং যুদ্ধ পরিস্থিতিকে কেন্দ্র করে অত্র অঞ্চলের দুই সামরিক শক্তিধর দেশ ইরান এবং ইসরাইল একে অপরকে প্রতিহত করতে নিজেদের বিমান বাহিনীকে সর্বোচ্চভাবে প্রস্তুত করতে শুরু করে দিয়েছে। তবে এয়ার কমব্যাট ফিক্সড উইংস ক্যাপাবিলিটি সক্ষমতায় বর্তমানে ইরান কিন্তু ইসরাইল অপেক্ষা অনেকটাই পিছিয়ে থাকলেও তাদের নিজস্ব প্রযুক্তির কমব্যাট ড্রোন এবং ব্যালিস্টিক মিসাইল সক্ষমতা দ্বারা সেই ঘাটতি অনেকটা পুষিয়ে নিয়েছে।

এদিকে মধ্যপ্রাচ্যের মিনি সুপার পাওয়ার খ্যাত ইসরাইলের বিমান বাহিনীর আকার ও সক্ষমতা দেখতে যে কেউ চমকে যেতে পারে। বর্তমানে এভিয়েশন প্রযুক্তির সক্ষমতার বিচারে মধ্যপ্রাচ্যের কোন দেশই আকাশ যুদ্ধে এককভাবে ইসরাইলের সাথে টিকে থাকার মতো অবস্থায় নেই। এমনিক তুরস্কের বিমান বাহিনীর সক্ষমতাও এর কাছে কিছুই নয়। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যে এফ-৩৫ স্টেলথ ফাইটার জেট ব্যবহারকারী একমাত্র দেশ হচ্ছে ইসরায়েল।

ইসরাইলের বিমান বাহিনী কিন্তু তাদের নিজস্ব চাহিদা মাফিক এফ-৩৫আই আদির সিরিজের হাইলি অ্যাডভান্স স্টেলথ ফাইটার জেট অপারেট করে এ মুহূর্তে তাদের হাতে মোট ৩৯টি এফ-৩৫ আই সিরিজের অ্যাডভান্স স্টেলথ যুদ্ধবিমান অপারেট করে। তাছাড়া দেশটি আরো মোট ৩৬টি এফ-৩৫ আই সিরিজের স্টেলথ ফাইটার জেট ক্রয়ের অর্ডার দিয়ে রেখেছে। অন্যান্য যুদ্ধবিমানের মধ্যে দেশটির বিমান বাহিনীতে অ্যাক্টিভ থাকা মিলিটারি এয়ারক্রাফট হিসেবে আমেরিকার তৈরি আপগ্রেডেড এফ-১৫এ/সি/আই ঈগল স্টাইক যুদ্ধবিমান ৬৬টি, এবং এফ-১৬ ফাইটিং ফ্যাকলন যুদ্ধবিমান রয়েছে মোট ১৭৫টি।

হেভি কমব্যাট হেলিকপ্টার হিসেবে এএইচ-৬৪ অ্যাপাচি অ্যাটাক হেলিকপ্টার রয়েছে মোট ৪৮টি। আর্লি ওয়ার্নিং (এইএন্ডডাব্লিউসি) এয়ারক্রাফট ৪টি, বিভিন্ন সিরিজের রিকর্নিসেন্স বিমান ২১টি এবং রিফুয়েলিং ট্যাংকার বিমান রয়েছে মোট ১১টি। তাছাড়া বিভিন্ন ক্যাটাগরির অত্যাধুনিক সামরিক পরিবহণ বিমান রয়েছে মোট ১৭টি। যদিও এই বিপুল সংখ্যক ফিক্সড এন্ড রোটারি এয়ারক্রাফটের একটি বড় অংশ আমেরিকা থেকে একেবারে নামমাত্র মূল্যে বা বিনামূল্যে সরবরাহ পেয়েছে মাত্র ৯২ লক্ষ জনসংখ্যার দেশ ইসরায়েল।

ইন্টারনেট ডাটা বিশ্লেষণ করে দেখা যায় যে, বর্তমানে ইরানের বিমান বাহিনীর এয়ার ফ্লীটে খুব ভালো মানের ও অ্যাডভান্স জেট ফাইটার এক রকম নেই বললেই চলে। ইরানের সবচেয়ে শক্তিশালী যুদ্ধবিমান হিসেবে ৮০ এর দশকে ক্রয় করা এফ-১৪ টমক্যাট যুদ্ধবিমান রয়েছে মাত্র প্রায় ১৮টি থেকে ২৪টি। বিশেষ করে ইরানের বিমান বাহিনীর অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ এয়ার স্টাইক কমব্যাট এয়ারক্রাফটের মধ্যে সত্তর ও আশি কিংবা নব্বইয়ের দশকের তৈরি মিগ-২৯ রয়েছে ৪০টি এবং এফ-৪ ফ্যান্টম যুদ্ধবিমান আছে ৬০টি, এফ-৫ টাইগার যুদ্ধবিমান রয়েছে ৫৯টি। রাশিয়ার তৈরি ২৮টি এসইউ-২৪, ২০টি এসইউ-২২ এবং চীনের তৈরি জে-৭ লাইট কমব্যাট এয়ারক্রাফট রয়েছে ২৪টি। ফ্রান্সের তৈরি অতি পুরোনো মিরেজ-এফ১ যুদ্ধবিমান রয়েছে ২২টি।

তবে প্রকাশ থাকে যে, ইরানের এয়ার ফ্লীটের মধ্যে আবার ২০% এর কাছাকাছি যুদ্ধবিমান হচ্ছে ইরাকের সাবেক সাদ্দাম হোসেন সামরিক বাহিনীর যুদ্ধবিমান। যা কিনা ১৯৯০-৯১ সালের দিকে গলফ ওয়ার চলাকালে ইরাক থেকে পালিয়ে ইরানে চলে আসে। ইরানের নিজস্ব প্রযুক্তির তৈরি হেসা কাউসার সিরিজের ৪টি, হেসা শিক্কা ৬টি এবং হেসা আজরাখশ নামের ২টি গ্রাউন্ড অ্যাটাক ফ্যাসিলিটির যুদ্ধবিমান সার্ভিসে এনেছে। তবে ইরানের নিজস্ব প্রযুক্তির তৈরি এই জাতীয় যুদ্ধবিমানের প্রডাকশন ক্যাপাবিলিটি চাহিদার তুলনায় খুবই কম বলে মনে করা হয়। তাছাড়া ইরান নিজস্ব প্রযুক্তির তৈরি কাহার-৩১৩ স্টেলথ যুদ্ধবিমান তৈরির দাবি করলেও তা কিন্তু এখনো পর্যন্ত সার্ভিসে আসেনি।

পরিশেষে বলা যায় যে, ইরানের বিমান বাহিনীর এয়ার কমব্যাট ফিক্সড উইংস ক্যাপাবিলিটি মোটেও শক্তিশালী না হলেও অতি সাম্প্রতিক সময়ে ইরানের ডিফেন্স রিলেটেড নিজস্ব কমব্যাট ড্রোন ও মিসাইল প্রযুক্তিতে উত্থান ইসরাইলের জন্য বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দিয়েছে। দেশটি এখন কিনা এক রকম প্রকাশ্যেই তাদের তৈরি হাজার হাজার কমব্যাট ড্রোন ও মিসাইল রাশিয়ায় সরবরাহ করে যাচ্ছে। আর এখন রাশিয়ার পাশাপাশি বিশ্বের মোট ১২ দেশ ইরানের তৈরি ড্রোন ব্যবহার করছে কিংবা প্রযুক্তিগত সহায়তা নিয়ে নিজেরাই তৈরি করছে। তবে এটা ঠিক যে, অদূর ভবিষ্যতে ইসরাইল তার প্রতিষ্ঠাতা দেশ আমেরিকার গোপন সামরিক সহায়তা এবং সবুজ সংকেতে ইরানের উপর এয়ার স্টাইক চালালে বিষয়টি গোটা মধ্যপ্রাচ্যের জন্য এক ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।##

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.