--- বিজ্ঞাপন ---

ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধে উভয় পক্ষের কি ক্ষয়ক্ষতি হলো

0

সিরাজুর রহমান##
গত ১৩ই মে সোমবার রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের তরফে যুদ্ধক্ষেত্রে ইউক্রেনের সামরিক সাজ সরঞ্জাম, ট্যাংক ধ্বংসের এক হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করেছে। তাদের দেয়া তথ্যমতে, গত ২০২২ সালের ২৪শে ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া রাশিয়ার বিশেষ সামরিক অভিযানে এখনো পর্যন্ত ইউক্রেনের ৫৯৬টি যুদ্ধবিমান ও সামরিক পরিবহণ বিমান ধ্বংস করা হয়েছে। যদিও যুদ্ধের আগে কিংবা পরে ইউক্রেনের বিমান বাহিনীর এক সাথে মোট পাঁচ শতাধিকের অধিক যুদ্ধবিমান ও হেলিকপ্টার (পশ্চিমা বিশ্বের দানের যুদ্ধবিমানসহ) কোন কালে ছিল কিনা সন্দেহ রয়েছে।
রাশিয়া তার মিডিয়ার জানায় যে, বিগত ২৬ মাসে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী বিমানের পাশাপাশি ইউক্রেনের ২৭৪টি হেলিকপ্টার, ৫৮১টি মিসাইল সিস্টেম ও ২৪ হাজারের অধিক কমব্যাট এন্ড নন-কমব্যাট ড্রোন ধ্বংস করেছে। তবে রাশিয়া দাবি করে যে, তাদের সামরিক বাহিনী এ পর্যন্ত ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর প্রায় ১৬ হাজারের অধিক মেইন ব্যাটল ট্যাংক ও অন্যান্য সামরিক যান ও ট্রাক ধ্বংস করেছে।
ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর এই ধ্বংসের তালিকায় ১,২৯৫টি মাল্টিপল রকেট লঞ্চার, ৯,৫৪৫টি ফিল্ড আর্টিলারি গান ও হেভি মর্টার রয়েছে। আবার তার পাশাপাশি ২১,৬৭৮টি বিশেষ সামরিক মোটর যান ও অন্যান্য সামরিক সাজ সরঞ্জাম ধ্বংসের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। যদিও এই যুদ্ধ শুরু থেকে এ পর্যন্ত ইউক্রেনের উপর প্রায় ৯ হাজারের অধিক ক্রুজ ও ব্যালেস্টিক মিসাইল হামলা চালিয়েছে রাশিয়া।
রাশিয়া যাই বলুক না কেন তাদের প্রকাশিত এই ধ্বংসের তালিকা নিরপেক্ষ কোন সূত্র মাধ্যমে প্রমাণ করার কোন সুযোগ নেই। তাছাড়া চলমান এই যুদ্ধে নিজের সামরিক বাহিনীর ট্যাংক ও অন্যান্য সাজ সরঞ্জাম ধ্বংসের তালিকা রাশিয়া কিন্তু কখনোই প্রকাশ করেনি। তবে যুদ্ধক্ষেত্রে হাজার হাজার ভিডিও ফুটেজ ও স্যাটেলাইট ইমেজ বিশ্লেষণ করলে রাশিয়ার নিজের সামরিক ক্ষতি কিন্তু মোটেও কম কিছু নয়।
একাধিক সামরিক গবেষণামূলক থিংক ট্যাংক ও ওয়েবসাইটের দেয়া তথ্যমতে, যুদ্ধের শুরু থেকে এ পর্যন্ত রাশিয়া সামরিক বাহিনীর প্রায় ২ হাজারের অধিক মেইন ব্যাটল ট্যাংক, ৮ থেকে ১০ হাজারের কাছাকাছি আর্টিলারি সিস্টেম, সামরিক যান ও পরিবহণ ট্রাক ধ্বংস হয়েছে ইউক্রেনের হাতে। বিশেষ করে এ যুদ্ধে রাশিয়ার প্রায় ২৬০টি বা তার কাছাকাছি যুদ্ধবিমান, হেলিকপ্টার, সামরিক পরিবহণ বিমান ও হেভি বোম্বার বিমান ধ্বংস কিংবা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাছাড়া ইউক্রেনের মিসাইল ও ড্রোন হামলার রাশিয়ার নৌবাহিনীর আনুমানিক ২০টি যুদ্ধজাহাজ ও সাবমেরিন ধ্বংস কিংবা মারাত্বকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
রাশিয়ার শত শত উচ্চ প্রযুক্তির এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম ধ্বংসের বিষয়টি বিশ্বের সামনে উন্মোচিত হয়েছে। আর ধ্বংসের এই তালিকায় ইউক্রেনের হাতে থাকা পুরোনো এস-৩০০ এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমের নাম থাকলেও রাশিয়ার অত্যাধুনিক এস-৪০০ এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমের মতো ডেডিকেটেড সিস্টেমের নামও কিন্তু উঠে এসেছে। যা আসলে দেশটির নিজস্ব এয়ার ডিফেন্স সক্ষমতা নিয়ে বেশ সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে।
তবে এটা ঠিক যে, পশ্চিমা মিডিয়া ও ইউক্রেনের তরফে রাশিয়ার ক্ষতি কিন্তু বাস্তবের চেয়ে অনেক বেশি করে দেখানো হয়। তবে যাই হোক না কেন, ২৬ মাস ব্যাপী চলমান এই প্রাণঘাতী যুদ্ধে রাশিয়া ও ইউক্রেনের সেনা ও বেসামরিক নাগরিকের মৃত্যুর বিষয়টি কিন্তু বিশ্ববাসীর নজর এড়িয়ে যেতে পারেনি। যুক্তরাজ্য ভিত্তিক বিবিসি নিউজ এজেন্সির দেয়া হালনাগাদ তথ্যমতে, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া যুদ্ধে রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর ৫০,৪৭১ জন সদস্য মারা গেছে।
অন্যদিকে এই যুদ্ধে নিহত ও আহতসহ সকল সামরিক ও বেসামরিক নাগরিকের হিসেবটি আমলে নিলে যুদ্ধে এ পর্যন্ত রাশিয়ার মোট প্রায় তিন লক্ষের কাছাকাছি সামরিক ও বেসামরিক মানুষ হতাহত হয়েছেন। যা রাশিয়ার পক্ষে অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নাই। এদিকে একাধিক অসমর্থিত সূত্রমতে, যুদ্ধে এ পর্যন্ত ইউক্রেনের প্রায় আড়াই থেকে তিন লক্ষাধিক সেনাসহ মোট প্রায় ৬ লক্ষাধিক সামরিক ও বেসামরিক নাগরিক হতাহত হয়েছেন। যদিও এটি কোনো প্রকৃত বা বাস্তবে শতভাগ সঠিক কোনো তথ্য নয়।
অত্যন্ত হতাশাজনক হলেও সত্য যে, দীর্ঘ মেয়াদি এই ভয়াবহ যুদ্ধে রাশিয়া ও ইউক্রেনের সম্মিলিতভাবে হয়ত প্রায় ১০ লক্ষের কাছাকাছি সামরিক ও বেসামরিক নাগরিক হতাহত হয়েছেন তাতে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই। আর এই যুদ্ধ আগামী ২০২৫ সাল পর্যন্ত চললে উভয় পক্ষের মৃত্যু ও হতাহতের তালিকা আশঙ্কাজনক হারে আরো বৃদ্ধি পাবে। যা কিনা একবিংশ শতাব্দীর এক নিষ্ঠুরতম মানবিক বিপর্যয় এবং জাতিগত নিধনযজ্ঞ হিসেবে ইতিহাসের পাতায় থেকে যাবে।##

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.