--- বিজ্ঞাপন ---

ইউক্রেনে ব্যাপক মাত্রায় মিসাইল ও ড্রোন হামলা চালিয়েছে রাশিয়া!

0

সিরাজুর রহমান, বিশেষ প্রতিনিধি#

গত ১লা জুন শনিবার রাশিয়ার সামরিক বাহিনী ইউক্রেনের একাধিক লক্ষ্যবস্তুতে ব্যাপক মাত্রায় শতাধিক মিসাইল ও কমব্যাট ড্রোন হামলা চালিয়েছে। এই মিসাইল হামলায় রাশিয়া এবার ৫৩টি মিসাইল ও ৪৭টি কমব্যাট ড্রোন নিক্ষেপ করে। যার মধ্যে ৪৭টি সাহেদ টাইপ কামিকাজে ড্রোন, ৩৫টি কেএইচ-১০১/৫৫৫ ক্রুজ মিসাইল এবং ৪টি ইস্কেন্দার-এম ব্যালেস্টিক মিসাইল, ১টি ইস্কেন্দার-কে ক্রুজ মিসাইল, ১০টি ক্যালিবার ক্রুজ মিসাইল এবং ৩টি কেএইচ-৫৯/৬৯ সিরিজের মিসাইল দিয়ে এই ভয়ংকর হামলা চালায় রাশিয়া।

তবে ইউক্রেন এই মিসাইল হামলায় ২০ জন সাধারণ নাগরিক মৃত্যুর বিষয়টি প্রকাশ করলেও ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী তাদের এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম দ্বারা রাশিয়ার অধিকাংশ ড্রোন ও মিসাইল আকাশেই ধ্বংস করার দাবি করেছে। আসলে গত ২০২২ সালের ২৪শে ফেব্রুয়ারি থেকে ইউক্রেনে রাশিয়ার বিশেষ সামরিক অভিযানে এ পর্যন্ত আনুমানিক নয় হাজারের অধিক ব্যালেস্টিক ও ক্রুজ মিসাইল হামলা চালিয়েছে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী। আর এই মিসাইল হামলায় রাশিয়া হাইপারসনিক ৯ ম্যাক গতির ‘কিনিঝাল’ ও ‘ইস্কেন্দার-এম’ সিরিজের ব্যালেস্টিক মিসাইল হিট করে সারা বিশ্বকে একেবারে চমকে দেয়।

তবে এই যুদ্ধ গত ২০২২ সালে শুরু হলেও রাশিয়া কিন্তু ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর অনেক আগে থেকেই পূর্ব ইউরোপের সীমান্তে অজানা সংখ্যক শর্ট রেঞ্জের নিউক্লিয়ার ওয়ারহেড সমৃদ্ধ ট্যাকটিক্যাল ৯কে৭২০ ইস্কেন্দার-এম ব্যালেস্টিক মিসাইল মোতায়েন করতে শুরু করে। যার ন্যাটো রিপোর্টেড কোড নেম (এসএস-২৬ স্টোন)। আর বিগত ২৮ মাসে প্রায় শতাধিকের উপর এই সিরিজের মিসাইলসহ হাজার হাজার মিসাইল দিয়ে ইউক্রেনের একাধিক সামরিক স্থাপনা, বিদ্যুৎ কেন্দ্র, অস্ত্র ও খাদ্য গুদাম এবং আবাসিক ভবনে ভয়াবহ হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। এক বিংশ শতাব্দীর এই যুদ্ধে প্রথম বারের মতো সারা বিশ্ববাসী রাশিয়ার তৈরি হাইপারসনিক গতির ‘ইস্কেন্দার’ ও ‘কিনিঝাল’ ব্যালেস্টিক মিসাইলের ভয়াবহ হামলা প্রত্যক্ষ করল। যদিও সোশ্যাল মিডিয়ায় এই জাতীয় ভয়ংকর অস্ত্র নিয়ে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করলেও বাস্তবে এর কার্যকারিতা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয়। দীর্ঘ মেয়াদি এই যুদ্ধে সারা ইউক্রেনে কমব্যাট ড্রোন ও মিসাইল দিয়ে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী ধ্বংসযজ্ঞ চালালেও ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর মূল সক্ষমতা কিন্তু এখনো পর্যন্ত শেষ করতে পারেনি তারা।

তাছাড়া এই যুদ্ধে ইউক্রেনের পালটা আঘাতে রাশিয়াকেও কিন্তু ব্যাপক মাত্রায় ক্ষতিগ্রস্ত হতে হয়েছে। যা বরাবরই রাশিয়ার সরকারের তরফে কিন্তু এড়িয়ে যাওয়া হয়। বিশেষ করে ইউক্রেনের মতো একটি দুর্বল দেশ কিনা ইতোমধ্যেই রাশিয়ার ১৬টি থেকে ২০টি যুদ্ধজাহাজ ও সাবমেরিন ধ্বংস কিংবা ক্ষতিগ্রস্ত করে ফেলেছে। তার পাশাপাশি এই যুদ্ধে রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর এখনো পর্যন্ত প্রায় হাজার হাজার ট্যাংক, ২৬০টি বা তার অধিক সংখ্যক যুদ্ধবিমান ও হেলিকপ্টার ধ্বংস হয়ে যাওয়ার মতো বিষয়টি বিশ্ববাসীর নজর এড়িয়ে যায়নি। তাই এই যুদ্ধে শেষ পর্যন্ত ইউক্রেনের পরাজয় হলেও বৈশ্বিক পর্যায়ে সামরিক শক্তিধর পশ্চিমা বিশ্বের দেশগুলোকে যৌথভাবে কিংবা এককভাবে এক পারমাণবিক অস্ত্র ব্যতীত মোকাবেলা করতে পারবে কিনা তা নিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ ও গবেষণা। যদিও রাশিয়াকে সামরিক দিক দিয়ে অনেকটাই দুর্বল দেশ বলে মনে করার কিছুই নেই। বিশেষ করে রাশিয়া এখনো পর্যন্ত যুদ্ধক্ষেত্রে তার অস্ত্র ভান্ডারের ৮০ শতাংশ একেবারে সোভিয়েত ইউনিয়ন আমলের পুরোনো অস্ত্র ব্যবহার করে যাচ্ছে।

অদূর ভবিষ্যতে আমেরিকা নিয়ন্ত্রিত ন্যাটো জোটকে কৌশলগতভাবে মোকাবেলা করার উদ্দেশ্যে বড় ধরনের সামরিক প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে বলে মনে করা হয়। তাছাড়া তাদের অস্ত্র ভান্ডারে থাকা কৌশলগত ইন্টারকন্টিন্যান্টাল ব্যালেস্টিক মিসাইল ও নিউক্লিয়ারব সাবমেরিনকে ইতোমধ্যেই গুরুত্বপূর্ণ গোপন সামরিক ঘাঁটিতে মোতায়েন সম্পন্ন করেছে দেশটি। আবার রাশিয়ার তরফে বার বার নিউক্লিয়ার অস্ত্র হামলার হুমকির বিষয়টি বিশ্ব মিডিয়ায় প্রকাশ পাওয়ায় অদূর ভবিষ্যতে হয়ত সারা বিশ্বকে এক অশুভ ও অত্যন্ত ভয়ংকর তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দিকে টেনে নিয়ে যেতে পারে বলে আশাঙ্খা করা হয়।##

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.