--- বিজ্ঞাপন ---

বিশ্বের দেশগুলোতে কার কতো সাবমেরিন

বহর গড়ে তুলছে রাশিয়া

0

কাজী আবুল মনসুর/সিরাজুর রহমান##

ইউক্রেন যুদ্ধের উত্তাপের মধ্যেই রাশিয়া এবার তার সাবমেরিন ফ্লীটকে আরো শক্তিশালী করে গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যারই ধারাবাহিকতায় রাশিয়া ২০২৩ সালেই একেবারে নতুন ও আধুনিক প্রযুক্তি সমৃদ্ধ ৫টি সাবমেরিন নেভাল ফ্লীটে সংযুক্ত করবে। যার মধ্যে ৩টি হবে নিউক্লিয়ার পাওয়ারড চালিত হেভি স্ট্যাটিজিক ওয়েপন্স সমৃদ্ধ নিউক সাবমেরিন এবং ২টি কনভেনশনাল এনার্জি চালিত ডিজেল ইলেক্ট্রিক এ্যাটাক সাবমেরিন।

নতুন করে এই ৫টি সাবমেরিন রাশিয়ার নৌবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত হলে ২০২৪ সালের শুরুতেই রাশিয়ার নৌবাহিনীতে এক্টিভ থাকা মোট সাবমেরিনের সংখ্যা হবে ৭২টি। বর্তমানে রাশিয়ার নৌবাহিনীতে ব্যালেস্টিক মিসাইল সাবমেরিন ১১টি, ক্রুজ মিসাইল সাবমেরিন ১০টি, নিউক্লিয়ার এ্যাটাক সাবমেরিন ১৬টি, ডিজেল ইলেক্ট্রিক চালিত এ্যাটাক সাবমেরিন ২২টি এবং স্পেশাল মিশনের জন্য আরও ৮টি উচ্চ প্রযুক্তির সাবমেরিন অপারেশনাল রয়েছে।

সে হিসেবে বর্তমানে রাশিয়ার কাছে অত্যন্ত শক্তিশালী সাবমেরিন রয়েছে মোট ৬৭টি। যদিও কাগজে কলমে বিশ্বের একক কোন দেশ হিসেবে রেড জায়ান্ট চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মির নেভাল ফোর্সের আধীনে মোট ৭৯টি সাবমেরিন অপারেশনাল রয়েছে বলে প্রচার করা হয়। তবে প্রকাশ থাকে যে, সাবমেরিনের এই হিসেবের মধ্যে প্রায় ৩০টি বা তার কাছাকাছি ষাট ও সত্তরের দশকের অতি পুরনো বা প্রায় অচল সাবমেরিন অন্তভূক্ত করে দেখিয়েছে চীন। যেগুলোর কিনা আবার গভীর সমুদ্রে কমব্যাট মিশন পরিচালনা করার ক্ষমতা অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে।

এদিকে আল জাজিরার প্রতিবেদনের দেয়া তথ্য মতে, বর্তমানে চীনের নেভাল ফ্লীটে গভীর সমুদ্রে কমব্যাট মিশনে পরিচালনা করার উপযোগী সাবমেরিন রয়েছে মোট ৫৯টি। তাই যৌক্তিক কারণেই ২০২৪ সালের আগেই প্রথম শীর্ষ স্থানীয় দেশ হিসেবে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী ও বিশাল আকারের ৭২টি সাবমেরিন নিয়ে ভয়ংকর রুপে আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে পুতিনের দেশ রাশিয়া।

তবে সারা বিশ্বের ৪১টি দেশ মোট প্রায় ৫২০টি সাবমেরিন ব্যবহার করলেও নিউক্লিয়ার পাওয়ারড সাবমেরিন ব্যবহার করে মাত্র ৬টি দেশ। যার মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স এবং ভারত। তাছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীতে ৬৮টি, যুক্তরাজ্যের ১১টি এবং ফ্রান্সের নৌবাহিনীতে ১০টি করে সাবমেরিন অপারেশনাল রয়েছে। যদিও আমেরিকা, যুক্তরাজ্য এবং ফ্রান্সের নৌবাহিনীতে সার্ভিসে থাকা শতভাগ সাবমেরিন হচ্ছে নিউক্লিয়ার পাওয়ারড স্ট্যাটিজিক (এসএলবিএম) এবং এ্যাটাক (এসএসএন) সাবমেরিন।

ভারতের নৌবাহিনীতে বর্তমানে মোট ১৭টি সাবমেরিন অপারেশনাল রয়েছে। তার মধ্যে ৬ হাজার টন ওজনের নিউক্লিয়ার পাওয়ারড ‘অরিহন্ত ক্লাস’ ব্যালেস্টিক মিসাইল সাবমেরিন রয়েছে ১টি। আবার ডিজেল ইলেক্ট্রিক পাওয়ারড কালাভারি ক্লাস ৫টি, শিশুমার ক্লাস ৪টি এবং সিন্ধুঘোষ ক্লাসের মোট ৭টি সাবমেরিন রয়েছে। তাছাড়া সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে রাশিয়া থেকে খুব সম্ভবত লিজে একটি আকুলা ক্লাস-৩ সিরিজের এডভান্স নিউক্লিয়ার পাওয়ারড হেভি স্ট্যাটিজিক সাবমেরিন পেতে যাচ্ছে ভারতের নৌবাহিনী।

এদিকে বর্তমানে বাংলাদেশের নৌবাহিনীতে অপারেশনাল রয়েছে সর্বোচ্চভাবে আধুনিকায়নকৃত চীনের তৈরি ২টি কনভেনশনাল পাওয়ারড ডিজেল ইলেক্ট্রিক সাবমেরিন। সাম্প্রতিক সময়ে কক্সবাজারের পেকুয়ায় নির্মিত হয়েছে বাংলাদেশের প্রথম সাবমেরিন ঘাঁটি। ১.২১ বিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ অর্থ ব্যয়ে নির্মিত এই ‘বানৌজা শেখ হাসিনা’ সাবমেরিন ঘাঁটিতে মোট ৬টি কনভেনশনাল পাওয়ারড সাবমেরিন সংরক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণ করা সম্ভব।

নিউক্লিয়ার প্রযুক্তি সমৃদ্ধ দেশ হলেও পাকিস্তান, উত্তর কোরিয়া এবং ইসরায়েলের নৌবাহিনীতে কোন ধরণের নিউক্লিয়ার পাওয়ারড সাবমেরিন নেই। উত্তর কোরিয়ার ৩৬টি, ইরানের ২৯টি, জাপানের ২০টি, দক্ষিণ কোরিয়ার ২২টি, তুরস্কের নৌবাহিনীতে ১২টি, গ্রীসের ১১টি, পাকিস্তানের ৯টি, জার্মানির ৬টি এবং ইসরাইলের ৫টি জার্মানির তৈরি ডলফিন ক্লাস সুপার এডভান্স ডিজেল ইলেক্ট্রিক এ্যাটাক সাবমেরিন অপারেশনাল রয়েছে।

তবে মজার বিষয় হলো যে, গত ২০২০ সালের আগে উত্তর কোরিয়ার সাবমেরিনের সংখ্যা ৭২টি বা তার অধিক দেখানো হলেও বাস্তবে দেশটির প্রায় ৬০ শতাংশ সাবমেরিন আউট অব সার্ভিসে চলে গেছে অনেক আগেই। তার মানে ৫০ ও ৬০ এর দশকের তৈরি অতি পুরনো অচল সাবমেরিনগুলোকে নৌ ঘাঁটিতে সুন্দর করে সাজিয়ে রেখে নৌবাহিনীর সাবমেরিন সক্ষমতা বিশ্বের সামনে জাহির করত উত্তর কোরিয়ার কিম জং উন সরকার।##

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.