সিরাজুর রহমান ,বিশেষ প্রতিনিধি#
গত ১০ই নভেম্বর শুক্রবার আকাশে প্রথমবার পরীক্ষামূলকভাবে আকাশে ডানা মেলেছে আমেরিকার তৈরি বি-২১ রেইডাই হেভি স্টেলথ বোম্বার বিমান। মূলত নরথ্রপ গ্রুম্যানের তৈরি নতুন প্রজন্মের বি-২১ রেইডার স্টেলথ বোম্বার বিমান গতকাল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এডওয়ার্ড এয়ারফোর্স বেস থেকে প্রথম বারের মতো পরীক্ষামূলক সফল টেস্ট ফ্লাইট সম্পন্ন করেছে। আরো বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা ও আপগ্রেডিং শেষে আগামী ২০২৬-২৭ সাল থেকে পর্যায়ক্রমে এটি সার্ভিসে চলে আসবে বলে মনে করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিমান বাহিনী।
এদিকে এক বিংশ শতাব্দীতে এসেও বিশ্বের অন্যান্য দেশ যেখানে পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান সার্ভিসে আনতে হিমশিম খাচ্ছে, সেখানে আমেরিকা কিনা ১৯৮৩ সালে প্রথম এফ-১১৭ ব্লাকহক স্টেলথ ফাইটার জেট সার্ভিসে এনে তা আবার অবসরে পাঠিয়ে দিয়েছে। এখন কিনা তাদের বিমান বাহিনীতে অপারেশনাল থাকা বি-২ হেভি বোম্বার বিমান অবসরে পাঠিয়ে আগামী ২০২৬-২৭ সাল থেকে পর্যায়ক্রমে ষষ্ঠ প্রজন্মের কমপক্ষে ১০০টি এডভান্স বি-২১ রেইডার স্টেলথ সুপার বোম্বার সার্ভিসে আনার পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে মার্কিন বিমান বাহিনী। আমেরিকা কিন্তু প্রথম তার স্টেলথ বি-২ স্পিরিট বোম্বার সার্ভিসে আনে আজ থেকে ৩৫ বছর আগে ১৯৮৮ সালে। ষষ্ঠ প্রজন্মের কনসেপ্টের বি-২১ রেইডার স্টাইক বোম্বার হলো বি-২ স্পিরিটের মতো দেখতে একটি কৌশলগত ও দীর্ঘ পাল্লার বোমারু বিমান। যা কিনা নিউক্লিয়ার এণ্ড কনভেনশনাল উভয় ধরণের অস্ত্র বহন করার বিশেষ উপযোগী করে ডিজাইন করা হয়েছে। এর পেটে থাকা ২টি ওয়েপন্স ‘বে’-তে ৮টি করে মোট ১৬টি নিউক্লিয়ার ওয়ারহেড ক্যাপবল লং রেঞ্জ স্ট্যাণ্ড অফ (এলআরএসও) মিসাইল এবং ৫০ কিলোটন ধ্বংস ক্ষমতা সম্পন্ন বি-৬১-১২ নিউক্লিয়ার বম্বস বহন করবে।
তবে প্রচলিত বা কনভেনশনাল কমব্যাট মিশনের জন্য, বি-২১ বোম্বার জেএএসএসএম-ইআর ক্রুজ মিসাইল এবং দু’হাজার পাউন্ড ওজনের জিবিইউ-৩১ জয়েন্ট ডাইরেক্টেড অ্যাটাক মিউনিশন স্যাটেলাইট-গাইডেড বোম্বস ব্যবহারের বিষয়টি আগেই প্রকাশ করা হয়েছিল। তার সাথে উচ্চ প্রযুক্তির নিজস্ব সকল নিরাপত্তা ব্যবস্থা ইনস্টল করা হবে এতে। আবার উচ্চ প্রযুক্তির বি-২১ বোম্বারের উৎপাদন ব্যয় হ্রাস করার জন্য, বিমান বাহিনী বি-২ স্পিরিট বোমারু বিমান থেকে অ্যাডভান্সড অ্যাপ্লিকেশন রোটারি লঞ্চারটি পুনরায় ব্যবহার করছে নরথ্রপ গ্রুম্যান। ২০১০ সালের দিকে প্রতিটি এই জাতীয় সুপার স্টিলথ বোম্বারের প্রডাকশন কস্ট ধরা হয়েছিল আনুমানিক ৫৫০ মিলিয়ন ডলার। তবে বর্তমানে ব্যাপক মাত্রায় মুদ্রাস্ফীতির কারণে এই প্রতিটি ইউনিট কস্ট ৭৫০ থেকে ৮০০ মিলিয়ন ডলার পর্যন্ত ব্যয় হয়ে যেতে পারে।
এদিকে বিশ্বের অন্যতম সামরিক সুপার পাওয়ার চীন তার নিজস্ব প্রযুক্তির এইচ-২০ হেভী বোম্বার এবং রাশিয়ার তার পিএকে-ডিএ লং রেঞ্জের স্টাইক বোম্বার প্রজেক্ট নিয়ে ব্যাপক গবেষণা করে যাচ্ছে। তবে তারা কিন্তু আজো বিশ্বের সামনে উম্মোচন করার মতো কোন প্রযুক্তিগত সক্ষমতা অর্জন করতে পেরেছে বলে মনে হয় না। যদিও চীন ২০২৩ সালের মাঝামাঝি সময়ে তার ভবিষ্যত প্রজন্মের এইচ-২০ বোম্বার বিশ্বের সামনে উম্মোচন করার কথা বললেও বাস্তবে এখনো পর্যন্ত তা করতে পারেনি। পরিশেষে যাই হোক না কেন, এই জাতীয় এডভান্স এরিয়াল সিস্টেম মানব জাতি রক্ষায় বিন্দুমাত্র কাজে না আসলেও অদূর ভবিষ্যতে হয়ত লক্ষ লক্ষ সাধারণ মানুষের মৃত্যু ও নতুন নতুন জনপদ ধ্বংসের অন্যতম কারণ হয়ে দেখা দিবে।##