--- বিজ্ঞাপন ---

আমেরিকার তৈরি কি এই ইন্টারকন্টেন্যান্টাল ব্যালিস্টিক মিসাইল

0

সিরাজুর রহমান, বিশেষ প্রতিনিধি#

বিংশ শতাব্দীর ষাটের দশকে সভিয়েত ইউনিয়ন তৈরি করে বিশ্বের প্রথম এন্টি ব্যালেস্টিক মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেম। যা প্রায় এক দশক ব্যাপী আমেরিকার জোটের জন্য এক বড় ধরনের আতঙ্ক বা চ্যালেঞ্জ হিসেবে থেকে যায়। তবে সত্তরের দশকে সভিয়েত ইউনিয়নের এন্টি ব্যালেস্টিক মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেমকে টেক্কা দিতে আমেরিকা তৈরি করে আরেক নতুন প্রযুক্তির মাল্টিপল ইন্ডিপেন্ডেন্টলী রিএন্ট্রি ভেইকলস (এমআইআরভি) নিউক ওভারহেড বেসড মিনিটম্যান-৩ ইন্টারকন্টেন্যান্টাল ব্যালিস্টিক মিসাইল।

যার মাধ্যমে আমেরিকা সত্তরের দশকের প্রথম দিকেই সোভিয়েত ইউনিয়নের অ্যান্টি ব্যালেস্টিক মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেমকে ফাঁকি দিয়ে সরাসরি মস্কোতে (আইসিবিএম) মিসাইল হামলা চালানোর মতো প্রযুক্তিগত সক্ষমতা অর্জন করে ফেলে। আর সেই নতুন এক আজব প্রযুক্তি ছিল কিনা মাল্টিপল ইন্ডিপেন্ডেন্টলী রিএন্ট্রি ভেইকলস (এমআইআরভি) নিউক ওভারহেড বেসড ইন্টারকন্টিনেন্টাল ব্যালিস্টিক মিসাইল। আর সেই সাথে সত্তরের দশক থেকেই বিশ্বের প্রভাবশালী দেশগুলোর মধ্যে অত্যন্ত প্রাণঘাতী (এমআইআরভি) টেকনোলোজির ইন্টারকন্টিনেন্টাল ব্যালিস্টিক মিসাইল তৈরির সর্বোচ্চ প্রতিযোগিতা শুরু করে দেয়।

আসলে মাল্টিপল ইন্ডিপেন্ডেন্টলী রিএন্ট্রি ভেইকলস (এমআইআরভি) প্রযুক্তির ওয়ারহেড শুধুমাত্র একটি টার্গেটের দিকে ধাবিত না হয়ে একই সাথে শত্রু শিবিরের ৬টি কিংবা ৮ থেকে ১০টি বা তারও বেশি টার্গেটে অত্যন্ত দ্রুত গতিতে ছুটে যায়। আর এই অবিশ্বস্য ২০ ম্যাক বা তার অধিক গতি অর্জন করার ফলে তা বর্তমানে প্রচলিত থাকা অত্যাধুনিক এন্টি ব্যালেস্টিক মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেমে ইন্টারসেপ্ট করাটা এক কথায় অসম্ভব বলা চলে।

বিশেষ করে ইন্টারকন্টিন্যান্টাল ব্যালেস্টিক মিসাইল নিক্ষেপের পর টার্মিনাল ফেজে ওয়ারহেড রিলিজ করলে তখন এর গতি অবিশ্বাস্যভাবে ম্যাক ২০ থেকে ম্যাক ২৫ বা তারও অধিক গতি অর্জন করে। যা কার্যকরভাবে রাডারে ডিডেক্ট করে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়ার মতো পর্যাপ্ত সময় হাতে পাবে না এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমগুলো।

সত্তরের দশকে এক আমেরিকার পর একে একে রাশিয়া, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, চীন, ভারত এবং এমনকি ইসরাইল নিজেদের প্রযুক্তির মাল্টিপল ইন্ডিপেন্ডেন্টলী রিএন্ট্রি ভেইকলস (এমআইআরভি) নিউক ওভারহেড বেসড ইন্টারকন্টিনেন্টাল ব্যালিস্টিক মিসাইল সফলভাবে সার্ভিসে এনেছে। চীনের ১৫ হাজার কিলোমিটার রেঞ্জের ডংফেং-৪১ ইন্টারকন্টিন্যান্টাল ব্যালেস্টিক মিসাইলে ৮ থেকে ১০টি (এমআইআরভি) নিউক্লিয়ার ওয়ারহেড বহন করে।

এদিকে রাশিয়ার অত্যন্ত শক্তিশালী ১৮ হাজার কিলোমিটার রেঞ্জের নতুন প্রজন্মের আরএস-২৮ সারমাত ইন্টারকন্টিন্যান্টাল ব্যালেস্টিক মিসাইলে ১০ থেকে ১৫টি (এমআইআরভি) নিউক্লিয়ার ওয়ারহেড এবং আমেরিকার ১৩ হাজার কিলোমিটার রেঞ্জের মিনিট্ম্যান-৩ ইন্টারকন্টিন্যান্টাল ব্যালেস্টিক মিসাইলে ৩টি (এমআইআরভি) নিউক্লিয়ার ওয়ারহেড বহন করে। মিনিটম্যান-৩ (আইসিবিএম) মিসাইল সার্ভিসে আসার পর এখন পর্যন্ত ৩০১বার সফল পরীক্ষা চালিয়েছে আমেরিকা।

ফ্রান্সের নিজস্ব প্রযুক্তির তৈরি ১০ হাজার কিলোমিটার রেঞ্জের এম-৫১ ইন্টারকন্টিন্যান্টাল ব্যালেস্টিক মিসাইল (এসএলবিএম) ৬ থেকে ১০টি (এমআইআরভি) নিউক্লিয়ার ওয়ারহেড বহন করে। তবে ফ্রান্স গত ১৮ই নভেম্বর তার আগের এম-৫১ সিরিজের আরো এডভান্স ভার্সন এম-৫১.৩ সিরিজের নতুন প্রজন্মের (এসএলবিএম) ইন্টারকন্টিন্যান্টাল ব্যালেস্টিক মিসাইলের সফল টেস্ট ফায়ার সম্পন্ন করে।

পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের ৫৫০০-৮০০০ কিলোমিটার রেঞ্জের অগ্নি-৫ সিরিজের (আইসিবিএম) মিসাইলে ১.৫ টন ওজনের ৩ থেকে ৫টি (এমআইআরভি) নিউক্লিয়ার ওয়ারহেড ইনস্টল করা যায়। তবে মধ্যপ্রাচ্যের ছোট্ট দেশ ইসরাইল কিন্তু তার নিজস্ব প্রযুক্তির তৈরি ৬,৫০০ কিলোমিটার রেঞ্জের জেরিকো-৩ সিরিজের (আইসিবিএম) মিসাইল সার্ভিসে এনেছে। যা কিনা ১ টন পর্যন্ত ৭৫০ কেজি ওজনের একটি নিউক ওয়ারহেড কিংবা ৩টি (এমআরআইভি) কনভেনশনাল বা নিউক ওয়ারহেড ক্যারি করার উপযোগী করে ডিজাইন করেছে ইসরাইল।##

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.