--- বিজ্ঞাপন ---

মাহাথিরের প্রশ্ন, ভারতের মতোন আচরণ যদি মালয়েশিয়াতে করি তখন কি হবে…

0

মালয়েশিয়াতে চাকরি করেন কয়েকলাখ ভারতীয়।  উচ্চ পদে ভারতের নাগরিক কম নয়। মালয়েশিয়া থেকে বছরে বিপুল পরিমান বৈদিশিক মুদ্রা যায় ভারতে। ভারতে মুসলিম নির্যােতনের ইস্যুকে কেন্দ্র করে বেজায় নাখোশ মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ড. মাহাথির মোহাম্মদ। তিনি প্রচ্ছন্নভাবে ভারতের উদ্দেশ্যে বলেছেন, ভারতে যেভাবে মুসলিমদের উপর নির্যাতন করা হচ্ছে, যেভাবে ভারত থেকে মুসলিম শূন্য করার চেষ্টা চলছে তা মোটেই ভালো কাজ নয়।

কুয়ালালামপুর শীর্ষ বৈঠকের শেষে শুক্রবার মিডিয়া সেন্টারে মাহাতির মহম্মদ বলেছেন, “আমার দেখে খুব খারাপ লাগছে যে নিজেদের ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র বলে দাবি করা ভারত এখন সে দেশের মুসলিমদের নাগরিকত্বের অধিকার থেকে বঞ্চিত করতে পদক্ষেপ গ্রহণ করছে”। তিনি আরও বলেন, “এখন আমরাও যদি তাই করি, আপনারা সকলেই জানেন সে ক্ষেত্রে কী হবে। অশান্তি হবে, স্থিতাবস্থা বিঘ্নিত হবে এবং মানুষকে ভুগতে হবে…এই আইনের জন্য ইতিমধ্যে মানুষ মরতে শুরু করেছে। বিগত প্রায় ৭০ বছর ধরে যখন কোনও সমস্যা ছাড়াই তাঁরা সে দেশে নাগরিক হিসাবে কাটিয়েছেন, তাহলে এখন এমন একটা আইন পাস করারনোর কী দরকার ছিল?” তিনি স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন যে মালয়েশিয়ায় চিনা ও ভারতীয় সম্প্রদায়কে নাগরিকত্ব দেওয়া হয়েছে।

মাহাথিরের এই মন্তব্যের পর নড়েচড়ে বসেছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তারাি মাহাথিরের বক্তব্যে সঠিক নয় বলে মালয়েশিয়ার রাষ্ট্রদুতকে তলব করে বিষয়টি জানতে চেয়েছেন।

ভারতের মিডিয়া লিখেছে, ‘মানুষ মারা যাচ্ছে’, এই ভাষাতেই ভারতের সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে সরব হলেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাতির মহম্মদ। এই নয়া আইন নিয়ে এখন কার্যত ঘরে বাইরে বেজায় চাপের মুখে মোদী সরকার। কেন্দ্রীয় সরকারের এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী বিক্ষোভের মাঝেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই নয়া আইন নিয়ে মুখ খুলে রীতিমতো অস্বস্তি বাড়িয়েছিল আগেই। এবার নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে সরব হলেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মহাতির মহম্মদ। তবে মালয়েশিয় প্রধানমন্ত্রীর এই মন্তব্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে নয়া দিল্লি।  ভারতের তরফে বলা হয়েছে, এই মন্তব্য ‘তথ্যগতভাবে বেঠিক’। পাশাপাশি, অন্যদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় সম্পর্কে মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীকে।

মাহাতির মহম্মদের এই মন্তব্যের পরই গর্জে ওঠে ভারতের বিদেশ মন্ত্রক। এক বিবৃতি জারি করে নয়া দিল্লির তরফে বলা হয়, “মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ফের এমন একটা বিষয়ে মন্তব্য করে বসেছেন যা সম্পূর্ণ রূপে ভারতের অভ্যন্তরীণ। সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন ভারতের কোনও নাগরিকের নাগরিকত্ব কেড়ে নেবে না বা কোনও ভারতীয়কে তাঁর নাগরিকত্বের অধিকার থেকে বঞ্চিত করবে না…তাই, তাঁর মন্তব্য তথ্যগতভাবে বেঠিক। ফলে আমরা আশা করব, তিনি ভারতের অভ্যন্তরীণ কোনও বিষয়ে মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকবেন। বিশেষত, বিষয়টি ভাল করে না বুঝে তো একেবারেই কোনও মন্তব্য করবেন না”। উল্লেখ্য, সম্প্রতি জম্মু-কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা রদের পরও কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছিলেন মহাতির মহম্মদ। গত সেপ্টেম্বরে রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ সভায় তিনি বলেছিলেন, ভারত কাশ্মীরে অনুপ্রবেশ করেছে এবং তা দখল করেছে। ওই এলাকা মূলত মুসলিম অধ্যুষিত এবং পাকিস্তান সংশ্লিষ্ট ভূখণ্ডের কর্তৃত্ব দাবি করে থাকে।

ভারতীয় মিডিয়া এই সময় উল্লেখ করে, ভারতের অন্দরে নাগরিকত্ব আইন নিয়ে অস্বস্তির মধ্যেই আন্তর্জাতিক মঞ্চেও বিড়ম্বনা বাড়ছে ভারতের। কাশ্মীরের পরিস্থিতি নিয়ে মার্কিন কংগ্রেসে কঠোর প্রস্তাব আনায় ভারতীয় বংশোদ্ভূত কংগ্রেস সদস্য প্রমীলা জয়পালের সঙ্গে বৈঠক বাতিল করে কড়া সমালোচনার মুখে পড়েছেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। তার জবাবে জয়শঙ্কর বলেন, ‘কাশ্মীর পরিস্থিতি নিয়ে প্রমীলার প্রস্তাবে কোনও সারবত্তা নেই। আগে থেকেই মনস্থির করে রাখা ও পক্ষপাতমূলক আলোচনায় অংশ নেওয়ার কোনও ইচ্ছে আমার নেই।’ একই দিনে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মহাথির মহম্মদের নাগরিকত্ব সংক্রান্ত মন্তব্যেরও কড়া জবাব দিয়েছে নয়াদিল্লি।

চলতি মাসের গোড়ায় মার্কিন কংগ্রেসের প্রথম ভারতীয় বংশোদ্ভূত মহিলা সদস্য প্রমীলা কাশ্মীর সংক্রান্ত প্রস্তাবটি আনেন। তাতে কাশ্মীরে যোগাযোগ ব্যবস্থার উপর নিষেধাজ্ঞা তোলা ও সবরকম ধর্মীয় স্বাধীনতা বজায় রাখার দাবি তোলা হয়। ডেমোক্র্যাট সদস্য প্রমীলার এই সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করেছে ভারত। কিন্তু তাতেও না দমে প্রমীলা আগামী জানুয়ারি মাসে ফের কাশ্মীর প্রসঙ্গ মার্কিন কংগ্রেসে তুলবেন বলে জানিয়ে দিয়েছেন। জয়শঙ্করের বৈঠক বাতিল প্রসঙ্গে কড়া প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী বার্নি স্যান্ডার্সও। টুইটারে তিনি লেখেন, ‘মানবাধিকারের প্রশ্ন তোলা মার্কিন আইনসভার সদস্যদের মুখ বন্ধ করিয়ে দেওয়া স্বৈরতান্ত্রিক সরকারের কাজ হতে পারে। ভারত সরকারের কাছ থেকে এই ব্যবহার আশা করা যায় না। ভারতে কাশ্মীরি ও মুসলিমদের উপর নেমে আসা দমননীতির বিরুদ্ধে মুখ খুলে ঠিক কাজই করেছেন প্রমীলা জয়পাল।’

শনিবারই মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্যেরও পাল্টা জবাব দিয়েছে নয়াদিল্লি। শুক্রবার কুয়ালা লামপুরের একটি অনুষ্ঠানে নাগরিকত্ব আইন সংশোধনের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে মহাথির বলেছিলেন, ‘দুই সম্প্রদায় গত ৭০ বছর ধরে ভারতে থাকে। এটা দেখে খুব খারাপ লাগছে যে, ভারত নিজেদের ধর্মনিরপেক্ষ দেশ বলে দাবি করে, অথচ মুসলিমদের নাগরিকত্ব থেকে বঞ্চিত করছে।’ এর পর তিনি মন্তব্য করেন, ‘এমন করলে তো দেশে বিশৃঙ্খলা তৈরি হবে, যার ফল সবাইকে ভুগতে হবে।’ সূত্রের খবর, শনিবার বিকেলে ভারতে নিযুক্ত মালয়েশিয়ার দূতকে ডেকে পাঠিয়ে এ নিয়ে তাদের আপত্তির কথা জানায় বিদেশ মন্ত্রক। একই সঙ্গে পাল্টা বিবৃতি দিয়ে জানানো হয় মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্য তথ্যগত ভাবে ভুল। মন্ত্রকের বক্তব্য, ‘এই আইনে আফগানিস্তান, পাকিস্তান, বাংলাদেশে ধর্মীয় হিংসার শিকার মানুষদের নাগরিকত্ব পাওয়ার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করার কথা বলা হয়েছে। এর ফলে ভারতের কোনও নাগরিকের সমস্যায় পড়ার সম্ভাবনা নেই।’ ভারতের অভ্যন্তরীণ এই বিষয় নিয়ে মন্তব্য করার জন্য মালয়েশিয়ার প্রতি উষ্মা প্রকাশ করে নয়াদিল্লির বক্তব্য, ভবিষ্যতে তাদের উচিত এ ধরনের বিষয় নিয়ে মন্তব্য না করা।

মাহাথির মোহাম্মদের কড়া ভাষায় সমালোচনা করতে দেখা যায় ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রককে। তাঁর বক্তব্যকে ‘অযৌক্তিক’ এবং ‘ভুল’ বলে কটাক্ষ করে তাকে ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলানো থেকে বিরত থাকতে পরামর্শ দেয় বিদেশ মন্ত্রক। এরপরই মালয়েশিয়ার রাষ্ট্রদূতের কাছে প্রেস বিজ্ঞপ্তি জারি করে এই প্রসঙ্গে সমন পাঠাতে দেখা যায় ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রককে। একইসাথে মালয়েশিয়াকে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বিষয়ে দীর্ঘমেয়াদী ও কৌশলগত দৃষ্টিভঙ্গি নিতেও পরামর্শ দেওয় হয় ভারতের তরফে। ভারতের পক্ষ থেকে এই ঘটনার পর একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানানো হয়, “ এই জাতীয় মন্তব্য দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে তীব্র ভাবে প্রভাবিত করে। একই সাথে এর মাধ্যমে ভুল এবং অত্যন্ত সংবেদনশীল তথ্য পরিবেশন করা হচ্ছে। এগুলি কখনও সুস্থ কূটনৈতিক অনুশীলনের অংশ হতে পারে না। এর মাধ্যমে সরাসরি কোনও দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে।”### ২২.১২.১৯

 

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.