--- বিজ্ঞাপন ---

প্রায় ৫০ বছর শাসন করার পর মারা গেছেন ওমানের সুলতান

নতুন সুলতান হাইতাম তারিক

0

ওমানের সুলতান কাবুস বিন সাঈদ আল সাঈদ মারা গেছেন। গতকাল শুক্রবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় তিনি ইন্তেকাল করেন, মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৯ বছর। সুলতান কাবুসের মৃত্যুর বিষয়টি আজ শনিবার প্রকাশ করেছে দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম।বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, ১৯৭০ সালে ওমানের মসনদে বসা কাবুস বিন সাঈদ দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় ভুগছিলেন। অবিবাহিত হওয়ায় তার কোনো উত্তরাধিকার নেই। জীবদ্দশায় সিংহাসনের জন্য কাউকে নিযুক্তও করে যাননি তিনি। পিতাকে ক্ষমতাচ্যুত করার মধ্যে দিয়ে তিনি ক্ষমতায় বসেন।

দেশটির সংবিধান অনুযায়ী, আগামী তিন দিনের মধ্যে নতুন সুলতান নির্বাচিত করার কথা রয়েছে। এই তিন দিন সুলতান কাবুসের মৃত্যুতে রাষ্ট্রীয় শোক পালিত হবে ওমানে। ওমানের রাজপরিবারে মোট ৫০ জন পুরুষ সদস্য রয়েছেন। তাদের মধ্য থেকে সর্বসম্মতিতে পরবর্তী সুলতান নির্বাচন করা হবে। তাও সম্ভব না হলে বিশেষ কাউন্সিলের কাছে সংরক্ষিত সুলতানের গোপন চিঠির মাধ্যমে নতুন সুলতানের নাম ঘোষণা করা হবে।

ওমানের নতুন সুলতান নির্বাচিত হয়েছেন হাইথাম বিন তারিক আল সাঈদ। তিনি দেশটির সাবেক সংস্কৃতি মন্ত্রী ছিলেন। দেশটির সদ্য পরলোকগত সুলতান কাবুস বিন সাঈদ আল সাঈদের চাচাতো ভাই তিনি। আল-জাজিরা এ খবর জানিয়েছে।

কাবুস ১৯৪০ সালের ১৮ নভেম্বর সালালাহর জুফারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি সুলতান সাইদ বিন তাইমুর  শাইখা মাজনুন আল মাশাইনির একমাত্র পুত্র ছিলেন। তিনি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা সালালাহ ও ভারতের পুনেতে  লাভ করেছেন। পুনেতে তিনি ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি শংকর দয়াল শর্মার ছাত্র ছিলেন। ১৬ বছর বয়সে তিনি ইংল্যান্ডে পড়াশোনার জন্য যান। ২০ বছর বয়সে তিনি রয়েল একাডেমি সেন্ডহাস্ট এ যোগ দেন। স্যান্ডহার্স্ট থেকে স্নাতক হওয়ার পর তিনি ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। তাকে ১ম ব্যাটেলিয়ন ক্যামেরনিয়ান্স (স্কটিশ রাইফেল)-এ নিয়োগ দেয়া হয়। তিনি জার্মানিতে একবছর দায়িত্বপালন করেছেন। সামরিক দায়িত্বপালনের পর কাবুস ইংল্যান্ডের অধ্যয়ন করেন। সালালাহতে ফিরে আসার পর তিনি ইসলাম এবং দেশের ইতিহাসে উপর পড়াশোনা করেছেন।

একটি সফল অভ্যুত্থানে তার পিতার ক্ষমতাচ্যুতির পর কাবুস ১৯৭০ সালের ২৩ জুলাই ক্ষমতালাভ করেন। তিনি ঘোষণা করেন যে রাষ্ট্রকে আর মাস্কাট ও ওমান নামে ডাকা হবে না। রাষ্ট্রীয় একতার জন্য এর পরিবর্তে রাষ্ট্রের নাম ওমান সালতানাত রাখা হয়। সুলতান হওয়ার পর কাবুস দক্ষিণ ইয়েমেনের সশস্ত্র কমিউনিস্ট অভ্যুত্থানের কারণে সমস্যাগ্রস্ত হন। ইরানের শাহ মোহাম্মদ রেজা পাহলভী, জর্ডানের বাদশাহ হুসাইন বিন তালাল, ব্রিটিশ স্পেশাল ফোর্সেস ও ব্রিটিশ বিমানবাহিনীর সহায়তা বিদ্রোহীদের পরাজিত করা হয়।ওমানে সার্বভৌম রাজতন্ত্র ব্যবস্থা প্রচলিত।

ওমানে ক্ষমতার পৃথকীকরণের ব্যবস্থা নেই। সমস্ত ক্ষমতা সুলতানের হাতে রয়েছে। সুলতান সশস্ত্র বাহিনীসমূহের প্রধান। এছাড়াও তিনি প্রতিরক্ষামন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্বপালন করেন। ১৯৯৬ সালের মৌলিক আইনসহ সকল আইন ১৯৭০ সাল থেকে রাজকীয় ফরমানের মাধ্যমে প্রচলিত হয়ে আসছে।[৪] সুলতান বিচারকদের নিয়োগ করেন এবং সাজা রদ বা হ্রাস করতে পারেন।সুলতান কাবুস সরকারিভাবে ওমানের নিরপেক্ষ অবস্থান বজায় রাখেন। ইরানের সাথে তার স্বাভাবিক সম্পর্ক রয়েছে। যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলির সাথে ওমানের মিত্রতা রয়েছে।

পারস্য উপসাগরের আরব রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে ওমানের সাথে সম্পর্ক সবচেয়ে স্বাভাবিক। এক্ষেত্রে ওমান ইরান ও পাশ্চাত্যের সাথে ভারসাম্য বজায় রাখে। এর ফলে ওমান যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে মধ্যস্থতার ভূমিকা পালন করেছেকাবুসের কোনো ঘোষিত উত্তরসুরি নেই। এক্ষেত্রে ওমান অন্যান্য উপসাগরীয় রাষ্ট্রের ব্যতিক্রম। ওমানের সংবিধানের ৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সুলতানের পদ খালি হওয়ার তিন দিনের মধ্যে রাজপরিবারকে নতুন সুলতান নির্বাচন করতে হবে।

স্থানীয় সংবাদ মাধ্যম আল-ওয়াতান ও আল-রয়া এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, আজ শনিবার দেশটির নতুন সুলতান হিসেবে শপথ নিবেন হাইথাম।তবে আনুষ্ঠানিকভাবে এই ব্যাপারে কিছু জানানো হয়নি।

বিবিসি ও আলজাজিরার প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, সুলতান কাবুস ১৯৭০ সালে এক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ওমানের ক্ষমতায় আসেন। এরপর দীর্ঘ ৫০ বছর ধরে ওমান শাসন করেছেন তিনি। তার মৃত্যুতে তিন দিনের জাতীয় শোক ঘোষণা করা হয়েছে ওমানে। কাবুসের মৃত্যুর পর রীতি অনুসারে তার উত্তরসূরী হিসেবে হাইথাম বিন তারিক আল সাঈদকে নতুন সুলতান হিসেবে ঘোষণা করা হয়। সুলতান হওয়ার দৌঁড়ে এগিয়ে ছিলেন সদ্যপ্রয়াত সুলতান কাবুসের তিন চাচাতো ভাই সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী হাইথাম বিন তারিক আল সাঈদ, উপ-প্রধানমন্ত্রী তারিক আল সাঈদ ও সাবেক নৌকমান্ডার সিহাব বিন তারিক আল সাঈদ। তবে শেষ পর্যন্ত হাইথাম বিন তারিক সুলতান হিসেবে নির্বাচিত হলেন।

উল্লেখ্য, সন্তান কিংবা ভাই না থাকায় ২০১১ সালে নিজের উত্তরাধিকার ঘোষণার জন্য দেশের উত্তরাধিকার প্রক্রিয়া সংশোধন করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন কাবুস আল সাঈদ।### ১১.১.২০২০

 

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.