--- বিজ্ঞাপন ---

চট্টগ্রামে নতুন আবাসিক গ্যাস সংযোগের সম্ভাবনা নেই; কর্ণফুলী গ্যাস এর সাশ্রয়ী উদ্যোগ

0

মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম: চট্টগ্রাম মহানগরীসহ চট্টগ্রামের অন্য জায়গার ব্যাপারে নতুন সিদ্ধান্ত না হলে এ মুহূর্তে আবাসিক গ্যাস সংযোগের সম্ভাবনা নেই বলে জানা গেছে। বরং আবাসিক খাত থেকে গ্যাস সাশ্রয় করে শিল্প খাতকে ত্বরান্বিত করার সরকারি উদ্যোগ বাস্তবায়নে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (কেজিডিসিএল) প্রিপেইড মিটারিং পদ্ধতি প্রকল্প নিয়ে এগোচ্ছে । সম্প্রতি মুজিববর্ষকে সামনে রেখে চট্টগ্রামে নতুন আবাসিক গ্যাস সংযোগ মার্চের মধ্যে না দেয়া হলে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড ঘেরাও করে দাবি আদায়ের হুমকি দেয় নাগরিক উদ্যোগ নামের একটি সংগঠন।

একই দাবিতে ঠিকাদার গ্রাহক ঐক্য পরিষদও আবাসিক সংযোগের দাবি জানিয়ে মানববন্ধন করেছে । তাদের প্রধান দাবী আবাসিক খাতে গ্যাস সংযোগ প্রদান করা হোক। সরকারি আদেশ না থাকায় এ মুহূর্তে নতুন সংযোগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তবে, চট্টগ্রাম মহানগরীতে ২ লাখ গ্যাসের প্রিপেইড মিটার স্থাপন প্রকল্পটি নিয়ে কেজিডিসিএল বহুদূর এগিয়েছে। বর্তমানে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে প্রকল্পটিতে বৈদেশিক অর্থ সংগ্রহের কাজ সম্পন্ন হলে এটি চূড়ান্ত হতে বেশি সময় লাগবে না বলে জানা গেছে। গ্রাহকরা গ্যাস সংযোগের জন্য নিজ খরচে মিটার বসালে লাভবান হবেন বলে জানা গেছে।

নতুন কোনো আবাসিক গ্যাস সংযোগের সরকারি আদেশ এ মুহূর্তে নেই

এমডি প্রকৌশলী খায়েজ আহম্মদ মজুমদার

চট্টগ্রামে নতুন কোনো আবাসিক সংযোগের সম্ভাবনা আছে কিনা জানতে চাইলে কেজিডিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী খায়েজ আহম্মদ মজুমদার গত সোমবার বাংলাদেশের সংবাদকে বলেন, দেশের উন্নয়নের স্বার্থে সরকার শিল্পায়নকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে বিধায় নতুন কোনো আবাসিক গ্যাস সংযোগের সরকারি আদেশ তার হাতে নেই, এর সম্ভাবনাও এ মুহূর্তে নেই বলা চলে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় দেশকে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জন করতে জ্বালানি খাতে শিল্প-কলকারখানাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। সেদিকে লক্ষ্য রেখে আমরা এগোচ্ছি। গৃহস্থালি সংযোগ বাসাবাড়িতে এর অপব্যবহার ক্রমেই বাড়ছে। যত তাড়াতাড়ি এটা রোধ করা যাবে ততই মঙ্গল হবে। এই প্রিপেইড মিটার স্থাপন করা গেলে প্রতিটি বাসায় মাসিক গ্যাস ব্যবহার বর্তমান ৬৬ কিউবিক মিটার থেকে ৪০ মিটারে কমিয়ে সিস্টেমলস রোধ করা যাবে। এতে প্রতি মাসে ৫২ লাখ কিউবিক মিটার গ্যাস অপচয় রোধ করা সম্ভব হবে। চট্টগ্রাম অঞ্চলের গৃহস্থালিতে ব্যাপকভাবে গ্যাসের অপব্যবহার রোধসহ গ্যাস সাশ্রয় কল্পে ৫১৪ কেটি ৯১ লাখ টাকা ব্যয়ে দুই লাখ প্রিপেইড মিটার স্থাপনের একটি প্রকল্প বর্তমানে চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। এর ফলে সরকারের রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি পাবে।

আবাসিক খাতে বর্তমানে ২২ হাজার আবেদন ঝুলে আছে

এদিকে, কর্ণফুলী গ্যাস কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, আবাসিক খাতে বর্তমানে ২২ হাজার আবেদন ঝুলে আছে। এসব আবেদনের ডিমান্ড নোট বাবদ ২৫ কোটি টাকা জমা পড়ে আছে। চট্টগ্রামে বর্তমানে আবাসিক গ্রাহক রয়েছে ৫ লাখ ৯৮ হাজার। প্রস্তাবিত ২ লাখ প্রিপেইড মিটার স্থাপন প্রকল্পের প্রস্তাবনাটি বর্তমানে বৈদেশিক অর্থায়নের জন্য অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে (ইআরডি) রয়েছে। এরপর প্রকল্প প্রস্তাবনাটি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে চূড়ান্ত অনুমোদনের পর এর কাজ শুরু হবে। গত ২২ ডিসেম্বর প্রকল্প সংক্রান্ত প্রস্তাবটি অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব বরাবরে পাঠানো হয়েছে বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে। এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৫১৪ কোটি ৯১ লাখ টাকা। এর মধ্যে বৈদেশিক সহায়তা বাবদ ধরা হয়েছে ৪১৪ কোটি ৭৯ লাখ টাকা, স্থানীয় খাত থেকে এ প্রকল্পের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১০০ কোটি ১২ লাখ টাকা।

কেজিডিসিএলের মহাব্যবস্থাপক (ইঞ্জিনিয়ারিং সার্ভিসেস) মো. সারওয়ার হোসেন বাংলাদেশের সংবাদকে বলেন, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন এলাকায় এর আগে স্থাপিত ৬০ হাজার প্রিপেইড মিটারের পর আমরা নগরবাসীর সুবিধার জন্য আরো ২ লাখ প্রিপেইড মিটার স্থাপনের প্রস্তাব পাঠিয়েছি। সরকারের উচ্চপর্যায়ে প্রকল্পটি অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। এরই মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়া, জার্মানি থেকে প্রতিষ্ঠানগুলো কম খরচে ইপিজেডে কারখানা স্থাপন করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। সরকার ঘোষিত গেজেটের নতুন নীতিমালার আওতায় অর্থাৎ কেজিডিসিএলের মাধ্যমে প্রকল্পভুক্ত হয়ে গ্রাহক এ মিটার লাগাতে পারবেন। আবার নিজস্ব উদ্যোগে নিজেদের খরচেও তা স্থাপন করতে পারবেন। তবে নিজেরা লাগানোর সময় এক্ষেত্রে কেজিডিসিএলের বাছাইকৃত মানসম্পন্ন ব্র্যান্ড বা কোম্পানির প্রিপেইড মিটার লাগাতে হবে। তিনি জানান, প্রতিটি প্রিপেইড মিটার স্থাপন করতে গ্রাহকের খরচ পড়বে ১৩-১৪ হাজার টাকা। গ্রাহককে এর পাশাপাশি কিচেন থেকে হেডার পর্যন্ত জিআই লাইন স্থাপনও নিজ খরচে করতে হবে। তবে কর্ণফুলী গ্যাস কর্তৃপক্ষের প্রজেক্টের মাধ্যমে এটি স্থাপন করা গেলে এক্ষেত্রে খরচ পড়বে ২৩ হাজার টাকা। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন এলাকায় প্রস্তাবিত এই ২ লাখ প্রিপেইড মিটার স্থাপনকালে চলমান পদ্ধতিও চালু থাকবে।

কেজিডিসিএলের উপমহাব্যবস্থাপক (ডিস্ট্রিবিউশন) অনুপম দত্ত বাংলাদেশের সংবাদকে বলেন, চট্টগ্রামে চাহিদা মোতাবেক গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক রয়েছে বর্তমানে। প্রতিদিন ৩২০ মিলিয়ন স্ট্যান্ডার্ড কিউবিক ফুট গ্যাস সরবরাহ হচ্ছে চট্টগ্রামে। সরকার শিল্প কলকারখানায় গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর।

কেজিডিসিএলের মাধ্যমে প্রকল্পভুক্ত হয়ে গ্রাহক এ মিটার লাগাতে পারবেন। আবার নিজস্ব উদ্যোগে নিজেদের খরচেও তা স্থাপন করতে পারবেন। তবে নিজেরা লাগানোর সময় এক্ষেত্রে কেজিডিসিএলের বাছাইকৃত মানসম্পন্ন ব্র্যান্ড বা কোম্পানির প্রিপেইড মিটার লাগাতে হবে। কেজিডিসিএল সূত্র মতে, চট্টগ্রামে বর্তমানে গৃহস্থালি সংযোগের সংখ্যা ৫ লাখ ৯৮ হাজার। যারা মিটার লাগাননি তাদের জন্য নতুন নীতিমালায় শর্ত সহজতর করা হয়েছে। এতে গ্রাহকরা প্রিপেইড মিটার ব্যবহার করে নিজেরা লাভবান হবেন বলে জানা গেছে।

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.