--- বিজ্ঞাপন ---

করোনা কেড়ে নিলো অনেক প্রতিভাবান বাংলাদেশীর জীবন

0

বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে লন্ডনে বাংলাদেশি কমিউনিটিতে বেড়েই চলেছে করোনা ভাইরাসের আতঙ্ক। ব্রিটেনের মৃতের সংখ্যার সাথে পাল্লা দিয়ে ব্রিটিশ বাংলাদেশিদের সংখ্যা যোগ হচ্ছে প্রতিনিয়ত। ব্রিটেনের বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এখন পর্যন্ত ১৯ জনের মৃ’ত্যুর সংবাদ পাওয়া গেছে। ধারণা করা যাচ্ছে সংখ্যা আরও বেশি হওয়ার সম্ভাবনা আছে।

এই প্রাণঘাতী ভাইরাস মার্চ মাসের শুরুতে ম্যানচেস্টারে প্রথম করোনা আক্রান্ত বাংলাদেশির মৃ’ত্যু হয়। মার্চ মাসের শেষে এসে এ সংখ্যা ১৬ জনে পৌঁছায়। এতে দেখা যায় একের পর এক মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে চলতেছে তাই ব্রিটেনের বাংলাদেশি কমিউনিটিত ভয় ও আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে।

ওই দেশে করোনা ভাইরাস আক্রান্ত হয়ে না ফেরার দেশে চলে গেলেন ১৯ ব্রিটিশ-বাংলাদেশির মধ্যে সবচেয়ে কম বয়সে যিনি মৃত্যুবরণ করেছেন মৃ’ত্যুবরণ করেছেন তিনি হলেন মুশফিক আহমদ ভুঁইয়া রাজিব। ৩৪ বছর বয়সী রাজিব ৩১ মার্চ, মঙ্গলবার ভোরে লন্ডনের একটি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। জানা গেছে তার ৩ বছর বয়সের এক পুত্র সন্তান রয়েছে । রাজিব ছিলেন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আলহাজ্ব শফিকুল ইসলাম ভুঁইয়ার একমাত্র সন্তান। বাংলাদেশের নিজ বাড়ি সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুর থানার আটঘর গ্রামে।

৫ মার্চ, ব্রিটেনে প্রথম করোনার শিকার হন ৭০ বছর বয়সী এক মহিলা। তিনি বার্কশায়ারের একটি হাসপাতালে চিকিৎসারত অবস্থায় মৃ’ত্যুবরণ করেন। তার শারীরিক জটিলতা থাকলে মৃ’ত্যুর আগে করোনাভাইরাসের পজিটিভ ধরা পড়ে।

গত ৮ মার্চ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃ’ত্যুবরণকারী। তিনি পাঁচ থেকে ছয় বছর আগে ইতালি থেকে এসে ব্রিটেনে স্থায়ীভাবে বসবাস করছিলেন। ম্যানচেস্টারে বসবাসরত ৬০ বছর বয়সী এক বাংলাদেশি।

গত ১৬ মার্চ বাংলাদেশি হিসেবে মা’রা যান যুক্তরাজ্যে সফররত মৌলভীবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক কোষাধ্যক্ষ মাহমুদুর রহমান (৭০)। তিনি লন্ডনের গ্রেট অরমন্ড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।

তারপর গত ২৩ মার্চ একই হাসপাতালে মৃ’ত্যু হয় টাওয়ার হ্যামলেটসের স্যাটেল স্ট্রিটের বাসিন্দা হাজী জমশেদ আলী। এই ব্যক্তির বয়স ছিলো প্রায় ৮০ বছর। তিনি বিয়ানীবাজার উপজেলার ছনগ্রামের বাসিন্দা ছিলেন।

মঙ্গলবার সকাল ১০টায় গত ২৪ মার্চ একই হাসপাতালে মা’রা যান খসরু মিয়া। তিনি নানা জটিল রোগে ছিল অবশেষে করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃ’ত্যু বরণ করেন। তার বয়স হয়েছিলো ৪৯ বছর। তিনি হোয়াইট চ্যাপেল রোডে সেইন্সবারির সামনে সবজির ব্যবসা করতেন। জগন্নাথপুর উপজেলার আটঘর গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন তিনি।

গত ২৫ মার্চ, বুধবার করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাজী ফখরুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি সকাল সাড়ে ১০টায় রয়্যাল লন্ডন হাসপাতালে তার মৃ’ত্যু হয়। তিনি পূর্ব লন্ডনের ডকল্যান্ড এলাকার বাসিন্দা ছিলেন।

গত ২৭ মার্চ শুক্রবার পূর্ব ল-নের পপলার এলাকার বাসিন্দা এক বাংলাদেশি মহিলা করেনায় আক্রান্ত হয়ে রয়েল লন্ডন হাসপাতালে মৃ’ত্যুবরণ করেন। তার বয়স হয়েছিলো প্রায় ৭০ বছর। তবে আশ্চর্যের বিষয় যে, একদিন পর তার মেয়েও হঠাৎ করে মা’রা যান। তবে মেয়ে করোনা আক্রান্ত ছিলেন না হার্ট অ্যা’টাক্ট হয়ে মা’রা যেতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

একইদিন আনুমানিক দুপুর আড়াইটায় ম্যানচেস্টার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মা’রা যান সাঈদ হোসেন জসিম (৬৫) নামের একজন। তার বাড়ি ফেনীর ফুলগাজী উপজেলার মুন্সীর হাটে।

গত ২৮ মার্চ শনিবার দুপুর ২টায় লন্ডনের কিং জর্জ হাসপাতালে মা’রা যান আনোয়ারা বেগম চৌধুরী (৬৫) নামের এক ব্রিটিশ-বাংলাদেশি। তিনি সিলেটের বালাগঞ্জের বাসিন্দা ছিলেন। একইদিন পূর্ব লন্ডনের নিউহাম হাসপাতালে ড. লায়লি উদ্দিনের পিতা করোনায় আক্রান্ত হয়ে ইন্তেকাল করেন।

এবং সেদিন আলম আশরাফ আকন্দ (৫০) নামের আরেক বাংলাদেশি মা’রা যান। জানা যায়, গত পাঁচ মাস ধরে তিনি ক্যানসারে আক্রান্ত ছিলেন এবং সপ্তাহখানেক আগে তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন। তাকে লন্ডনের ইউসিএল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। তার বাড়ি জামালপুর জেলায়।

গত ২৯ মার্চ রোববার বাংলাদেশির সুপরিচিত ব্যবসা মাছ বাজারের সিইও রুহুল আমিনের পিতা আলহাজ্ব মোফাজ্জল মিয়া রাত সাড়ে ৯টায় রয়েল লন্ডন হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন। মৃ’ত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো প্রায় ৮০ বছর। অসুস্থ অবস্থায় তাকে নেয়ার পর তার করোনা সংক্রমণ ধরো পড়ে এবং ৫/৬ দিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তিনি টাওয়ার হ্যামলেটসের পপলার এলাকায় বসবাস করতেন। তাদের বাংলাদেশের বাড়ি সুনামগঞ্জের পাগলা এলাকায়।

ওইদিন লন্ডনের এনফিল্ডের একটি হাসপাতালে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মো. সোহেল আহমেদ (৫০) নামে এক বাংলাদেশি মা’রা যান। তিনি দীর্ঘদিন ধরে পরিবার নিয়ে ব্রিটেনে বসবাস করছিলেন। তার বাড়ি সিলেটের বরইকান্দি গ্রামে।

৩০ মার্চ সোমবার সকালের দিকে পূর্ব লন্ডনের ডকল্যান্ড এলাকার প্রবীণ কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব মদরিছ আলী করোনায় আক্রান্ত হয়ে রয়েল লন্ডন হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন। মৃ’ত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো আনুমানিক ৯০ বছর। স্থানীয় মসজিদের মোতাওয়াল্লি মদরিছ আলীর বয়স হলেও তিনি যথেষ্ট সুস্থ ছিলেন এবং মৃ’ত্যুর আগের দিন রোববার তার শরীরে কভিড-১৯ ধরা পড়ে জানা যায়। মরহুমের বাংলাদেশের বাড়ি সিলেটের দক্ষিণ সুরমার লালাবাজার এলাকার খুজকালু গ্রামের পশ্চিম পাড়া।

এছাড়া এদিন সকাল ৬টায় বাংলাদেশি কমিউনিটির অন্যতম পরিচিতমুখ, প্রবাসী বালাগঞ্জ ওসমানীনগর এডুকেশন ট্রাস্টেও প্রতিষ্ঠাতা সদস্য মো. মনির উদ্দিন মা’রা যান। তিনি দীর্ঘদিন থেকে ডায়াবেটিস, হাইব্লাডপ্রেসার ও কিডনি রোগে ভুগছিলেন। তবে দুই সপ্তাহ আগে করোনায় আক্রান্ত হয়ে অবস্থার আরও অবনতি হলেও তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ৩০ মার্চ, সোমবার নিকট আত্মীয় মাত্র ১০ জনের উপস্থিতিতে জানাজা শেষে তাকে পূর্ব লন্ডনে গার্ডেন অব পিসে সমাহিত করা হয় বলে জানান মরহুমের চাচাতো ভাই কবি ও সংস্কৃতিকর্মী সাইফ উদ্দিন। ৩ সন্তানের জনক মনির উদ্দিন কেমডেন এলাকায় বসবাস করতেন এবং তার বয়স হয়েছিলো প্রায় ৬০ বছর। তাদের বাংলাদেশের বাড়ি সিলেটের উমরপুর ইউনিয়নের নিজ মান্দারুকা গ্রামে।

মার্চ মাসের শেষ দিন মঙ্গলবার সব রেকর্ড অতিক্রম করেছে ব্রিটেনে করোনাভাইরাসের মৃতের সংখ্যা। এই একদিনে করোনা ভাইরাসে মৃ’ত্যুবরণ করেছেন ৩৯৫ জন। আগের দুদিন – রবি ও সোমবার মৃতের সংখ্যা ছিলো যথাক্রমে ২৬০ ও ১৮০। মঙ্গলবার একলাফে মৃতের মোট সংখ্যা গিয়েছে পৌঁছে ১৮০৮জনে। মঙ্গলবার মৃ’ত্যুবরণ করা ৩৯৫ জনের মধ্যে ইংল্যান্ডে ৩৬৯, স্কটল্যান্ডে ১৩, ওয়েলসে ৭ এবং নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডে ৬ জন মৃ’ত্যুবরণ করেন। সব মিলিয়ে এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়ে ইংল্যান্ডে ১৬শ ৫১, ওয়েলসে ৬৯, স্কটল্যান্ডে ৬০ এবং উত্তর আয়ারল্যান্ডে ২৮ জন মা’রা গেলেন।

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.