--- বিজ্ঞাপন ---

রাশিয়ার পথে প্রান্তরে…১

0

##শামসুল আলম, রাশিয়া থেকে…….

সবে রাশিয়ায় পা রেখেছি। বিশ্বটা তখনো অস্বাভাবিক হয়ে উঠে নি। বাইরে ভীষণ ঠান্ডা থাকলেও ঘুরতে বের হতাম। শনি রবিবার দুইদিন ছুটির দিন থাকে এখানে। তাই এসময় হাটতে গেলে বেশ উপভোগ করতাম। চারদিকে বরফে আচ্ছাদিত থাকতো সব কিছু।

এমনি একটি দিনে একা একা হাটতে বের হয়েছিলাম। আমাদের বাসাটা সেন্ট পিটার্সবার্গের তেলামানা অংশের শেষ আর কল্পিনহো অংশের শুরুর দিকটায় পড়েছে। বাসা তেলমানাতে পড়লেও বাকি সব কাজকর্ম আমাদের কলপিনহোতেই করি। এই শহরটাই গড়ে উঠেছে কয়েক্টি ম্যানুফেকচারিং কোম্পানিকে কেন্দ্র করে। তার মধ্যে রয়েছে ৩০০ বছরের পুরনো ইজোরাভস্কি OMZ3 নামক ম্যানুফেকচারিং কোম্পানিটি যেখান থেকে আমাদের রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের রিএক্টর কভার, প্রেশারাইজার প্রভৃতি তৈরি হয়। এই কোম্পানিটি রাশিয়ায় নিউক্লিয়ার ইকুইপমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারিং জগতে অনন্য ও প্রাচীনতম গুলোর মধ্যে একটি। এখান থেকে বিভিন্ন দেশ- চীন, ভারত, তুরস্ক যন্ত্রপাতি তৈরি করেছে, করছে। শুরু হয়েছিলো রাজ পরিবারের হাড়িপাতিল, থালাবাসন,আসবাবপত্র প্রভৃতি তৈরি করার মাধ্যমে। চাহিদানুযায়ী সময়ে সময়ে অনেক কিছু তৈরি করেছে। কখনো যুদ্ধাস্ত্র, কখনো গাড়ি ইত্যাদি। তাই, পুরাতন ও অভিজ্ঞ এই প্রতিষ্ঠানটি থেকে তৈরিকৃত যন্ত্রপাতি নিয়ে সাধারণত কোন প্রশ্ন থাকে না।

যাহোক মূল কথায় ফিরে যাই। সেদিন বরফঢাকা এই ছোট শহরের আনাচেকানাচে ঘুরে বেড়াচ্ছিলাম। হিমশীতল বাতাস লাগছিলো কানে আর শুভ্র বরফে ঢেকে থাকা রাস্তা পার হতে হচ্ছিলো। ভাষাগত সমস্যার কারণে তেমন কারো সাথে কথা বলা হয়ে উঠে নাই সেদিন। যখন বাসায় ফিরে আসবো তখন একজন বৃদ্ধের হাত ধরে আরেক বৃদ্ধা হাটছেন। বিষয়টা আমাকে দারুণভাবে আকৃষ্ট করলো। আকৃষ্ট করার অন্যতম কারণ ছিলো- এখানে এসে শোনেছি ছেলেদের চেয়ে মেয়েদের সংখ্যা বেশি। তাই ম্যাক্সিমামই ব্রোকেন ফ্যামিলি। আমিও তাই দেখেছি, ডিভোর্স রেট অনেক। মেয়েরা স্বাধীন, বয়স যাই হউক না কেনো প্রায় সবাই ইকোনমিক সলভেন্সির জন্য অন্যের উপর নির্ভরশীল না হয়ে কাজ করেন।

এই প্রবীণ জুটিটাকে দেখে কথা বলতে চাইলাম। কিন্তু তারা আমার কথা বোঝলেন না, আর আমিও খারাশো (রুচকিতে – ভালো অর্থে), কাক দিলা টাইপ কথাতেই সীমাবদ্ধ থেকে ঝটপট বোঝালাম, ‘আমি তোমাদের একটা ছবি তোলতে চাই।’ তারা হাসিমুখে আরো কাছাকাছি আসলো। আমিও নিচের ছবিটি তোলে নিলাম। তারা ফোনে ছবিটা দেখে একে অপরের দিকে মৃদু হাসিও দিয়েছিলো। যখন চলে আসি তখন হাত নেড়ে অবিভাদন জানালো।

এদের দেশের একটা জিনিস খুউব ভালো লেগেছে। প্রতিদিন সকাল কিংবা বিকালে তারা প্রিয়জনকে নিয়ে হাটতে বের হয়। সন্তান থাকলে সন্তানকে নিয়ে বের হন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সন্তানকে অবশ্য দাদা দাদী কিংবা নানা নানীরা লালন পালন করে থাকেন।

রাশিয়ায় করোনার আক্রান্তের সংখ্যা এখন তৃতীয় সর্বোচ্চ। এ সপ্তাহের মধ্যেই আমেরিকার পেছনে বসতে যাচ্ছে কোভিড১৯ পজিটিভের দিক থেকে। অনেক জায়গায় ঘুরার ইচ্ছে ছিলো কিন্তু ভাইরাসের আক্রমণে পুরোবিশ্বই আজ গৃহবন্দী। বেচে থাকলে অনেক কিছুই হয়তো দেখা যাবে। আশায় আছি দ্রুত সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.