আন্তর্জাতিক ডেস্ক##
আজারবাইজান ও আর্মেনিয়া একে অপরের সাথে যুদ্ধ শুরু করেছে। এরই মধ্যে ২৩ জন নিহত ও শতাধিক আহত হয়েছে বলে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে। তুরস্ক এরই মধ্যে আজারবাইজানের পাশে থাকবে বলে জানিয়েছে। অপরদিকে রাশিয়া যুদ্ধ বন্ধ করার জন্য বলেছে। তুরস্ক যদি আজারবাইজানের পক্ষ নেয় আর রাশিয়া যদি আর্মেনিয়ার পক্ষ নেয় তাহলে তুরস্ক ও রাশিয়া যুদ্ধ বাধাঁর সম্ভাবনা রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট মহল মনে করছে।
জাতিসংঘ অবিলম্বে যুদ্ধ বন্ধ করার জন্য বলেছে। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দু’দেশের সাথে কথা বলতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। ইরান বলেছে, তারা শান্তি চুক্তি লংঘন করছে। ফ্রান্স দু’দেশকে টেবিলে বসে সমস্যা সমাধানের জন্য অনুরোধ জানিয়েছে।এরই মধ্যে দু’দেশেই জরুরী অবস্থা জারী করা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক গণ মাধ্যম জানায়,উভয় দেশের দাবি করা নাগোরনো-কারাবাখ অঞ্চলে আজ সংঘর্ষ শুরু হয়েছে আজ়ারবাইজান ও আর্মেনিয়ার মধ্যে। আর্মেনিয়ার দাবি, আজ়ারবাইজানের দুটি হেলিকপ্টার গুলি করে নামিয়েছে তারা। তিনটি ট্যাঙ্কেও আঘাত হেনেছে। যা মানতে রাজি নয় আজ়ারবাইজান। নাগারনো-কারাবাখ আঞ্চলিক প্রশাসনের দাবি, এক শিশু-সহ ১৬ জন স্থানীয় বাসিন্দা নিহত হন। আহত হয়েছেন ১০০ জন।
আর্মেনীয় অধ্যুষিত নাগোরনো-কারাবাখ নিয়ে আজ়ারবাইজান ও আর্মেনিয়ার বিবাদ দীর্ঘদিনের। ১৯৯৪ সালের লড়াইয়ের পর থেকে তা আর্মেনিয়ার মদতে পুষ্ট আর্মেনীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দখলে। ২০১৬ সালে ওই এলাকায় সংঘর্ষে ১১০ জন নিহত হয়েছিলেন। কূটনীতিকদের মতে, ওই এলাকায় যে কোনও সংঘর্ষে রাশিয়া ও তুরস্কের জড়়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা খুবই বেশি। এ দিনই বিবৃতি দিয়ে মিত্র দেশ আজ়ারবাইজানের পাশে থাকার কথা জানিয়েছে তুরস্ক। অন্য দিকে রাশিয়ার তরফে অবিলম্বে সংঘর্ষ বন্ধের দাবি জানানো হয়েছে। কারাবাখের আর্মেনীয় নেতাদের দাবি, তুরস্ক ও অন্য দেশ থেকে ভাড়াটে সেনাদের এই লড়াইয়ের জন্য আজ়েরবাইজানে আনা হয়েছে। সংঘর্ষবিরতির আর্জি জার্মানি, ফ্রান্স ও ইউরোপীয় ইউনিয়নেরও।
এ বার লড়াই কেন শুরু হয়েছে তা স্পষ্ট নয়। আর্মেনিয়ার দাবি, আজ়ারবাইজানের সেনাই প্রথমে হামলা চালিয়েছে। নিশানা করা হয়েছে নাগোরনা-কারাবাখ এলাকার রাজধানী স্টেপনাকার্ট-সহ কয়েকটি শহরকে। আজ়ারবাইজানের পাল্টা দাবি, আর্মেনিয়ার হামলার পরেই পাল্টা পদক্ষেপ করা হয়েছে। টেলিভিশনে আজ়ারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহ্যাম আলিয়েভ বলেন, ‘‘আমরা বৈধ স্বার্থ রক্ষার জন্য লড়ছি। আমাদের জয় হবেই। কারাবাখ আজ়ারবাইজানেরই অংশ।’’ ফেসবুকে ‘মাতৃভূমি’কে রক্ষার ডাক দিয়েছেন আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রীর নিকোল পেশনিয়ান।
উল্লেখ্য আজারবাইজানের জনসংখ্যা ২০২০ সালের জাতিসংঘের ওয়াল্ডোমিটারের তথ্য অনুযায়ী ১ কোটি ১ লক্ষ ৩৯ হাজার । জনসংখ্যার ৮৫ শতাংশ শিয়া মুসলিম বাকীরা সুন্নী। দেশটির আয়তন ৮৬ হাজার ৬০০ বর্গকিলোমিটার। বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম জ্বালানি তেল রফতানীকারী আজারবাইজানের রাজধানী বাকু। সেনাবাহিনী-৬৭ হাজার, রিজার্ভ ৩ লক্ষ। ট্যাংক-৬৬৫টি। সাঁজোয়া যান ১৬৩৭টি। আর্টিলারি সব মিলিয়ে ৭৪০। জঙ্গী বিমান-মিগ-২৯, সুখোই-২৪ সহ বিমানের মোট সংখ্যা ১২৭। এছাড়া তুরস্ক থেকে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র, ইসরাইল সহ বিভিন্ন দেশ থেকে ক্রয় করা বিপুল অত্যাধুনিক সামরিক সরঞ্জাম রয়েছে দেশটির সশস্ত্র বাহিনীতে। নৌ বাহিনীতে রয়েছে ৩১ টি বিভিন্ন শ্রেণীর যুদ্ধ জাহাজ। তুরস্কের সৈন্য ও এফ-১৬ জঙ্গী বিমানও দেশটিতে মোতায়েন রয়েছে। তুরস্ক যুদ্ধে আজারবাইজানের একজন কট্টর সমর্থক।
আর্মেনিয়া- অপরদিকে আর্মেনিয়ার জনসংখ্যা ২০২০ সালের একই পরিসংখ্যানে ২৯ লক্ষ ৬৩ হাজার। প্রায় সকলেই খ্রীস্টান ধর্মাবলম্বী। আয়তন ২৮ হাজার ৪৭০ বর্গকিলোমিটার। রাজধানী ইয়েরেবান। সেনাবাহিনী-৪৫ হাজার, রিজার্ভ- ২লক্ষ । ট্যাংক-৫২৯টি। জঙ্গী বিমান-৪২টি। এছাড়া ১০০০ বিভিন্ন সাঁজোয়া যান ও আকাশ প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র সজ্জিত দেশটি। গ্রীস সহ ন্যাটো জোটের বিভিন্ন দেশ রাশিয়া দেশটিকে আধুনিক সমরাস্ত্র সরবরাহ করছে।###২৮.৯.২০