--- বিজ্ঞাপন ---

অর্থনৈতিক উন্নয়নে শীর্ষ ১০টি দেশের তালিকায় বাংলাদেশ

0

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিশ্বের উদীয়মান অর্থনৈতিক উন্নয়নে শীর্ষ ১০টি দেশের তালিকায় উঠে এসেছে বাংলাদেশের নাম। ২০২০ সাল থেকে চলা ভয়াবহ করোনা মহামারির মধ্যেও পরিকল্পনা মাফিক স্থিতিশীল অর্থনৈতিক সক্ষমতা ধরে রেখে দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত এবং পাকিস্তানকে পিছনে ফেলে শক্ত অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। বর্তমানে বাংলাদেশের জিডিপির আকার ৩৫২ বিলিয়ন ডলার এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪৫ বিলিয়ন ডলারের উপরে। বিশেষ করে করোনা মহামারির ছোবল এবং বিশ্ব অর্থনীতি মহামন্দার কবলে ২০২০ সালের দিকে বাংলাদেশের বৈশ্বিক রপ্তানির পরিমাণ অনেকটাই কমে গেলেও ২০২১ সালের শুরু থেকে তা আবার ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে।

আন্তর্জাতিক পর্যায়ের অর্থনৈতিক গবেষণামুলক প্রতিষ্ঠানগুলোর দেয়া তথ্যমতে, ২০২৮ সালে বাংলাদেশের জিডিপির আকার হবে ৬৮০ বিলিয়ন ডলার থেকে ১.০০ ট্রিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থাকবে প্রায় ১০০ বিলিয়ন ডলার। আর বর্তমানে দেশের চলমান বড় বড় মেগা প্রজেক্টগুলো সম্পন্ন হয়ে গেলে বৈদেশিক ঋনের আকার ৪০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে আসবে এবং তার সাথে আরো গতি পাবে দেশের সার্কিব অর্থনীতি এবং সৃষ্টি হবে লক্ষাধিক নতুন কর্মসংস্থান। বর্তমানে বাংলাদেশের সব মিলিয়ে আনুমানিক ৩.৬ লক্ষ কোটি টাকা ৪০ বিলিয়ন ডলারের সুবিশাল আকারের অনেকগুলো মেগা প্রজেক্ট একসাথে চলমান রয়েছে। পদ্মাসেতু, কর্নফুলী রিভার ট্যানেল, রুপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ আরো অসংখ্য ইনফ্যারাস্টাকচার ডেভলপমেন্ট প্রজেক্ট এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য। কিছু মেগা প্রজেক্ট ২০২২-২৩ সালের দিকে জনগণের ব্যবহারের জন্য উম্মুক্ত করে দেয়া হবে এবং আরো কতগুলো ২০২৫ সাল থেকে ২০২৮ সালের মধ্যে পর্যায়ক্রমে সমাপ্ত হয়ে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের মূল স্রোতের সাথে মিলে যাবে।

বিশ্বব্যাংক এবং আইএমএফ এর তথ্যমতে, বৈদেশিক ঋনের ব্যবহার ও ব্যবস্থাপনায় ভারত কিংবা পাকিস্তানের চেয়ে অনেক দক্ষতার পরিচয় দিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। আবার অতি সাম্প্রতিক সময়ে চীনের শি জিং পিং প্রশাসন জানায় যে, চীন বাংলাদেশকে ঋন দিয়ে ভবিষ্যতে কখনোই ফাঁদে ফেলবে না। যদিও পশ্চিমা মিডিয়ায় পাকিস্তান, কেনিয়া, নেপাল এবং শ্রীলংকার মতো আরো কিছু দেশে বৈদেশিক বিনিয়োগের নামে ঋনের ফাঁদে ফেলার গুরুতর অভিযোগ আনা হয়েছে চীনের বিরুদ্ধে। ২০২১ সালের মার্চের হিসেব অনুযায়ী ভারতের বৈদেশিক ঋনের পরিমাণ ৫৬৩ বিলিয়ন ডলার এবং পাকিস্তানের ১১৬ বিলিয়ন ডলার। যেখানে কিনা বাংলাদেশের সার্বিক বৈদেশিক ঋনের পরিমাণ ৪৪ বিলিয়ন ডলারের কাছাকছি।

আর বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋন ও দেনার পরিমাণ দেশের জিডিপির আকারের মাত্র ১২.৫ শতাংশ এবং তার বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, বার্ষিক রপ্তানির বিবেচনায় এই ঋন অনেকটাই সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে। যেখানে ভারতের বৈদেশিক ঋনের হার তার জিডিপির তুলতায় ১৮.৫০ শতাংশ এবং বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ার আরেক দেশ পাকিস্তানের বৈদেশিক ঋন এবং দেনার পরিমাণ তাদের জিডিপির আকারের প্রায় ৪১.৫০ শতাংশ। যেখানে ২০২১ সালে পাকিস্তানের জিডিপির আকার ২৮৬ বিলিয়ন ডলার নির্ধারণ করা হয়।

এদিকে আবার দক্ষিণ এশিয়ার দেশ শ্রীলংকা ঋন এবং বিশেষ করে বিনিয়োগের নামে চীনের কাছ থেকে নেয়া পরিকল্পনা বিহীন বিলিয়ন ডলার ঋনের কারণে আজ ভয়াবহ অর্থনোতিক সংকটের মুখে পতিত হয়েছে এবং বর্ত মান সরকার শ্রীলংকাকে আর্থিক সহায়তা এবং বৈদেশিক ব্যালেন্স অব পেমেন্ট সক্ষমতা ধরে রাখতে ২০ কোটি ডলারের সমপরিমাণ অর্থ সহজ শর্তে প্রদান করতে যাচ্ছে বা ইতোমধ্যেই করে দিয়েছে। তাছাড়া আইএমএফ এর অনুরোধে আফ্রিকার দরিদ্র দেশ সুদানকেও আর্থিক সহায়তা দিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। যা বৈশ্বিক পর্যায়ে বাংলাদেশের ভাবমূর্তী ও সন্মান আরো উচ্চ পর্যায়ে নিয়ে গেছে।

যদিও ২০২০ সালের মাঝামাঝি সময়ের দিকে আইএমএফ আভাস দেয় যে, ২০২০ সালে পুরো সময়ে বাংলাদেশে ৩.৮ শতাংশ হারে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হতে পারে। যেখানে ক্যারিবীয় অঞ্চলের দেশ গায়ানা ও দক্ষিণ সুদানের পর বাংলাদেশ হবে সবচেয়ে বেশি জিডিপি অর্জঙ্কারী দেশ। তবে তারা আরো জানায় যে, বাংলাদেশকে করোনার মহামারির পরিস্থিতির আগের মতো ৭ কিংবা ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে আরো চার বছর অপেক্ষা করতে হতে পারে। আইএমএফ এর অনুমান মতে, ২০২৫ সালে বাংলাদেশের জিডিপির প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে আনুমানিক ৭.৩ শতাংশ। তবে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) পূর্বাভাস দেয় যে, চলতি ২০২০-২১ অর্থ বছরে বাংলাদেশ ৬.৮ শতাংশ হারে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করবে।

আবার বিশ্বের সম্পদশালী ব্যাক্তি এবং প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বৃদ্ধির হারের দিক দিয়ে গত দশকে বিশ্বের অন্যতম কিছু বড় অর্থনীতিকে পেছনে ফেলে শীর্ষে চলে যাচ্ছে বাংলাদেশ। বৈশ্বিক পর্যায়ের বহুজাতিক আর্থিক পরামর্শ দানকারী প্রতিষ্ঠান ওয়েলথ এক্স এর দেয়া তথ্যমতে, ২০১০ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত বিগত এক দশেকে বাংলাদেশে ধনকুবের বা অতি ধনী মানুষের (৫০ লাখ ডলারের বেশি সম্পদের অধিকারী) সংখ্যা বেড়েছে গড়ে ১৪.৩ শতাংশ হারে। আর এই বৃদ্ধির হার আগামীতে অব্যাহত থাকবে বলে প্রতিষ্ঠানটি ভবিষ্যতবাণী করেছে।#

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.