--- বিজ্ঞাপন ---

বৈদেশিক বানিজ্য ঘাটতি মোকাবেলায় কঠোর হচ্ছে বাংলাদেশ

0

সিরাজুর রহমান, বিশেষ প্রতিনিধি#

করোনা মহামারী পরবর্তী বৈশ্বিক মহামন্দা ও ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধের বিরুপ প্রভাবে বিশ্বের সকল স্বল্প আয়ের দেশগুলোর বৈদেশিক বানিজ্যে ঘটতি ও ডলার সংকট একটি বড় ধরনের সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে। মূলত রপ্তানি অপেক্ষা অতিরিক্ত আমদানি ব্যয় এবং বৈদেশিক ঋনের আসল ও সুদ ডলারে পরিশোধ করার কারণে ঝুঁকিপূর্ণভাবে হ্রাস পাচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। এমনকি অনেক দেশ এখন বৈদেশিক ঋন নিয়ে হলেও ফরেক্স রিজার্ভ স্থিতিশীল রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছে। যার ব্যাতিক্রম কিন্তু বাংলাদেশ নয়। বাংলাদেশকেও এখন এই একই ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে যেতে হচ্ছে।

আমদানি রপ্তানি বিষয়ক প্রতিবেদনের তথ্য মতে, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই মাসে বাংলাদেশ ৪.৩৬ বিলিয়ন ডলারের পন্য সারা বিশ্বে রপ্তানি করে। যার বিপরীতে সারা বিশ্ব থেকে একই সময়ে পন্য আমদানি করা হয় ৪.৯৯ বিলিয়ন ডলার। সে হিসেবে চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম জুলাই মাসে বাংলাদেশ ৬৩৫ মিলিয়ন ডলার বানিজ্য ঘটতি হয়েছে। তবে এক্ষেত্রে বানিজ্য ঘটতি হলেও বাস্তবে তা আগের অর্থবছর অপেক্ষা আমদানি ব্যয় অনেকটাই হ্রাস পেয়েছে। যা অবশ্যই চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছর শেষে অভার অল ব্যালেন্স অব পেমেন্টে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে আশা করা যায়।

তবে সাম্প্রতিক সময়ে ডলার সংকট কাটাতে নানা উপায়ে অতিরিক্ত আমদানি নিয়ন্ত্রণের সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক ও সরকার। গত ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই মাস থেকেই বিভিন্ন পণ্য আমদানির শুল্ক বাড়িয়েছে সরকার। একই সঙ্গে তুলনামূলক কম প্রয়োজন বা বিলাসী পণ্যের এলসি খোলার সময় শতভাগ পর্যন্ত নগদ মার্জিনের শর্ত দেওয়া হয়। তাছাড়া ডলার সংস্থান করা ছাড়া ব্যাংকগুলোকে এলসি খুলতে মানা করা হয়েছে।

পন্য আমদানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক ও সরকারের কঠোর নজরদারি ও বিভিন্ন ধরনের শর্তারোপের প্রভাবে গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে আমদানি ব্যয় পূর্বের বছর অপেক্ষা ১৫.৭৬% হ্রাস পায়। বাংলাদেশ ব্যাংকের দেয়া হালনাগাদ তথ্যমতে, গত ২০২২-২৩ অর্থবছরের মোট পন্য আমদানি হয় ৬৯.৪৯৫ বিলিয়ন ডলার এবং একই সময়ে পন্য রপ্তানি হয় ৫২.৩৪ বিলিয়ন ডলার। সে হিসেবে গত অর্থবছরে বৈদেশিক বানিজ্য ঘটতি ছিল ১৭.১৫৫ বিলিয়ন ডলার। অথচ তার আগের ২০২১-২২ অর্থবছরে বানিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৩৩.২৫ বিলিয়ন ডলার।

তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান দেখায় যে, আমদানির নামে বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে বেশি পরিমান ডলার বা বৈদেশিক মুদ্রা চলে গেছে গত ২০২১-২২ অর্থবছরে। গত ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশে মোট পন্য আমদানি করা হয় ৮২.৪৯৫ বিলিয়ন ডলার এবং সারা বিশ্বে পন্য রপ্তানি করা হয় ৪৯.২৪৫ বিলিয়ন ডলার। সে হিসেবে ২০২১-২২ অর্থবছরে বৈদেশিক বানিজ্যে ঘাটতির পরিমাণ ছিল অবিশ্বাস্যভাবে ৩৩.২৫ বিলিয়ন ডলার। যা থেকেই আসলে ডলার সংকটের বিষয়টি খুবই প্রকট হয়ে দেখা দেয়। তবে পরবর্তী সময়ে পন্য আমদানির ক্ষেত্রে কঠোর শর্ত ও নজরদারি বাড়ানোর ফলে সদ্য সমাপ্ত ২০২২-২৩ অর্থবছরে মোট আমদানি ব্যয় ও হার অনেকটাই হ্রাস পেয়েছে।##

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.