--- বিজ্ঞাপন ---

বিশ্বে পোশাক রফতানিতে ভিয়েতনামের সাথে চলছে বাংলাদেশের প্রতিযোগিতা

0

২০২০ সালের শুরু থেকে করোনা মহামারির তাণ্ডবে ভয়াবহভাবে বিপর্যস্ত হয় বিশ্ব অর্থনীতি। এর বিরুপ প্রভাবে আন্তর্জাতিক পোশাক রপ্তানি খাতও বেশ জোরেশোরেই ধাক্কা খেয়েছে। সেই বিপর্যয়ের মধ্যেই আবার বিশ্ব বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশকে অনেকটা পিছনে ফেলে দিয়ে দ্বিতীয় শীর্ষ অবস্থানে উঠে এসেছে ভিয়েতনাম। আসলে চলতি বছরের ৩০শে জুলাই বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার প্রকাশিত এক তথ্যমতে, বর্তমানে বিশ্ব বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে আগের মতোই প্রথম স্থানে রয়েছে রেড জায়ান্ট চীন। তবে বাংলাদেশকে টপকিয়ে দ্বিতীয় স্থানে ভিয়েতনাম এবং তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশের নাম।

তবে চলতি ২০২১ সালের প্রথমার্ধে (জানুয়ারী থেকে জুন) পোশাক রপ্তানি প্রবৃদ্ধিতে আবারো কিছুটা ভিয়েতনামকে পেছনে ফেলেছে বাংলাদেশ। চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ৩.১৩ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। যা কিনা ২০২০ সালের একই সময়ের তুলনায় ২৬.৮১% বেশি। অন্যদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ভিয়েতনাম ২০২১ সালের প্রথম ৬ মাসে তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে ৬.৮১ বিলিয়ন ডলার। যা কিনা বাংলাদেশ অপেক্ষা প্রায় দ্বিগুণের চেয়ে কিছুটা বেশি। এ সময়ে ভিয়েতনাম ২০২০ সাল অপেক্ষা ২০.৪৫% বেশি পোশাক আমেরিকায় রপ্তানি করতে সক্ষম হয়। তবে ২০২১ সালের ছয় মাসের পোশাক রপ্তানি প্রবৃদ্ধিতে ভিয়েতনামকে কিছুটা পেছনে ফেলতে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ।

২০২০-২১ অর্থবছরে বাংলাদেশ মোট রপ্তানি করেছে ৩০.৮৬ বিলিয়ন ডলার। আর ইপিবির গত অর্থবছর শেষে দেয়া এক তথ্যমতে, সদ্য সমাপ্ত ২০২০-২১ অর্থবছরে পোশাক রপ্তানি বেড়েছে প্রায় ৩.০০ বিলিয়ন ডলার বা ১০.৫%।

বিশ্বে সর্বোচ্চ একক কোন দেশ হিসেবে রেডি-মেড গার্মেন্টস (আরএমজি) রপ্তানি বানিজ্যে নিজের যোগ্য স্থান ধরে রেখেছে চীন। করোনা মহামারির ছোবলে চীনের তৈরি পোশাক রপ্তানি অনেকটা কমে আসলেও ২০২০ সালে চীন ১৩৭.৩৮ বিলিয়ন ডলারের তৈরি পোশাক বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করে। যা কিনা ২০১৯ সাল অপেক্ষা ৯.২৪% কম ছিল। যেখানে ২০১৯ সালে বৈশ্বিক পোশাক বাজারে মোট ১৫১.৩৭ বিলিয়ন ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছিল দেশটি। চীন কিন্তু ২০২০ সালে মোট ২.৫৯ ট্রিলিয়ন বা ২৫৯০ বিলিয়ন ডলারের পন্য সারা বিশ্বে রপ্তানি করে। আর মোট রপ্তানির বিচারে চীনের তৈরি পোশাক রপ্তানির অংশ মাত্র ৫.৩%। তাছাড়া চীনের নিজস্ব অভ্যন্তরীণ প্রায় ৩৫০ বিলিয়ন ডলারের তৈরি পোশাকের সুবিশাল বাজার এবং নিজস্ব প্রযুক্তিগত সক্ষমতা থাকায় এ খাতে দেশটির ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার সম্ভবনা খুবই কম বলা চলে।

এদিকে বিশ্বের আরেক উদীয়মান এবং সম্ভবনাময় উন্নয়নশীল দেশ ভিয়েতনাম সাম্প্রতিক সময়ে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছে।  ভয়েস অব আমেরকা নিউজের দেয়া তথ্যমতে, ২০২০ সালের বছর শেষে ভিয়েতনাম তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশকে টপকে সরাসরি দ্বিতীয় অবস্থানে চলে এসেছে। দেশটি করোনা মহামারির মধ্যেও ২৯ বিলিয়ন ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে। ঠিক একই সময়ে ২০২০ সালে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানির পরিমাণ ছিল ২৮ বিলিয়ন ডলার। আবার ২০১৯ সালে বাংলাদেশ তৈরি পোশাক রপ্তানি করে ৩৪ বিলিয়ন ডলার এবং ২০১৯ সালে ভিয়েতনাম রপ্তানি করে ৩১ বিলিয়ন ডলারের রেডি-মেড গার্মেন্টস (আরএমজি) পন্য। আন্তর্জাতিক বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানি কম হওয়ায় সারা বিশ্বব্যাপী পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশের শেয়ার ৬.৮% থেকে ৬.৩% এ নেমে এসেছে।

২০২০ সালের ভিয়েতনাম ২৯ বিলিয়ন ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করলেও তাদের মোট রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৩৪৮ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি। আর মোট রপ্তানির বিচারে ভিয়েতনামের তৈরি পোশাক রপ্তানির অবদান মাত্র ৮.৩৩%। এদিকে মোট রপ্তানির বিচারে বাংলাদেশ কিন্তু বর্তমানে ভিয়েতনামের অনেক পেছনে পড়ে রয়েছে। যা কিনা বাংলাদেশের মোট রপ্তানির প্রায় নয় থেকে দশ গুণ বেশি। আবার এদিকে দিয়ে বৈশ্বিক রপ্তানিতে ভারতের থেকেও কিছুটা এগিয়ে রয়েছে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশ ভিয়েতনাম।

২০২০ সালে বাংলাদেশ মোট ৩৩.৬০ বিলিয়ন ডলারের পন্য রপ্তানি করে। যা ২০১৯ সাল অপেক্ষা ১৪.৫৭% কম ছিল এবং ২০১৯ সালে রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৩৯.৩৩ বিলিয়ন ডলার। ভিয়েতনামের সাথে তুলনা করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এবং ভিয়েতনামের মধ্যে একটি মৌলিক পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। আর তা হলো ভিয়েতনামের তৈরি পোশাক রপ্তানি মোট রপ্তানির মাত্র ৮.৩৩%। আর এদিকে বাংলদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানির কিন্তু মোট রপ্তানির সিংহভাগ ৮৩.৩৩%। আর দেশের অন্যান্য সকল খাত মিলিয়ে মাত্র ১৬.৬৭%। যা কিনা আমাদের দেশের রপ্তানি বানিজ্যের সুষম বিকাশ এবং ইতিবাচক প্রবৃদ্ধির জন্য এক ঝুঁকিপূর্ণ প্রবণতা হিসেবে থেকে যাচ্ছে।

তাছাড়া সস্তা ও সহজলভ্য শ্রমকে কাজে লাগিয়ে অত্যন্ত প্রতিযোগিতামুলক আন্তর্জাতিক তৈরি পোশাক বাজারে শক্ত অবস্থান ধরে রাখতে সক্ষম হলেও আমাদের তৈরি পোশাক শিল্প খাত কিন্তু ৭০%-৮০% পর্যন্ত বিদেশ থেকে কাঁচামাল এবং মুলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি নির্ভর করে গড়ে তোলা হয়েছে। বিশেষ করে তৈরি পোশাকের প্রধান কাঁচামাল তুলার দাম এবং পরিবহনসহ ফ্রেইট খরচ অনেকটাই বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশের পোশাক রপ্তানিকারকদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। তার সাথে আন্তর্জাতিক বাজারে অব্যাহতভাবে পোশাকের বাজার মূল্য হ্রাস পাওয়ায় নীট আয়ের বিচারে বেশ ঝুঁকির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় তৈরি পোশাক শিল্প খাত। আবার অন্যদিকে এই খাতে বাংলাদেশের যাত্রা প্রায় তিন থেকে চার দশকের অধিক হলেও আজ অব্ধি একটি স্বনির্ভর ও শক্তিশালী তৈরি পোশাক শিল্পের কাঁচামাল ও প্রযুক্তি সরবরাহের সহায়ক শিল্প ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারিনি আমরা।

দেখা যায় যে, তৈরি পোশাক রপ্তানি করে যে বৈদেশিক মুদ্রা দেশে আসে তার আবার ৫৫%-৬০% বৈদেশিক মুদ্রা পোশাক তৈরির প্রধান কাঁচামাল তুলা, সুতা, প্রযুক্তি এবং মুলধনী সাজ সরঞ্জাম বিদেশ থেকে আমদানি করতে ব্যয় হয়ে যায়। এক্ষেত্রে ভবিষ্যতে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বিপর্যয় নেমে আসলে মোট রপ্তানি খাত মারাত্বকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার সমুহ সম্ভবনা থেকে যায়। যা চীন এবং ভিয়েতনামের ক্ষেত্রে হওয়ার সম্ভবনা অনেকটা কমই বলা চলে। তাই আমাদের অবশ্যই শক্তিশালী রপ্তানি খাত গড়ে তোলার স্বার্থে তৈরি পোশাক রপ্তানি নির্ভর শিল্পায়নের পাশাপাশি অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ রপ্তানি খাত নির্ভর ক্ষুদ্র ও মাঝারী শিল্প ব্যবস্থা দ্রুত উন্নয়ন ও বিকাশে অত্যন্ত পরিকল্পনা মাফিক কাজ করে যেতে হবে।#

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.