--- বিজ্ঞাপন ---

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে সেরা চীন

ভারত, পাকিস্তান, তুরস্ক, বাংলাদেশ, কার কি অবস্থা

0

বর্তমানে বিশ্বের সর্বোচ্চ বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভকারী দেশ হিসেবে আবারো প্রথম স্থান করে নিয়েছে রেড জায়ান চীন। মুলত চীনের স্টেট অ্যাডমিনিস্টেশন অফ ফরেন এক্সচেঞ্জের (এসএএফই) এর দেয়া তথ্যমতে, চলতি ২০২১ সালের অক্টোবর মাস শেষে চিনের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৩.২১৮ ট্রিলিয়ন ডলার বা ৩২১৮ বিলিয়ন ডলার। যা গত সেপ্টেম্বর মাস অপেক্ষা ০.৫৩% বেশি। যেখানে গত সেপ্টেম্বর মাস শেষে ৩.২০১ ট্রিলিয়ন ডলার এবং আগস্ট মাস শেষে ৩.২৩২ ট্রিলিয়ন ডলারের ফরেন কারেন্সির রিজার্ভ ছিল। আর বর্তমানে একক কোন দেশ হিসেবে চিনের হাতে থাকা বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ হচ্ছে বিশ্বের সর্বোচ্চ রিজার্ভ। করোনা মহামারি চলা অবস্থায় ২০২০ সালের অক্টোবরে এ রিজার্ভ ছিল ৩.১২৮ ট্রিলিয়ন ডলার। তবে চিনের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমান বিশ্বের সর্বোচ্চ হলেও দেশটির রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পর বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বৈদেশিক ঋন ও দেনার বোঝা। ২০২১ সালে জানুয়ারী মাসে ঋনের বৈদেশিক ঋন ও দেনার স্থিতির পরিমাণ ছিল ২.৬৮ ট্রিলিয়ন ডলার বা ২৬৮০ বিলিয়ন ডলার।

দক্ষিণ এশিয়ার উদীয়মান অর্থনৈতিক পরাশক্তি ভারতের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ করোনা মহামারির মধ্যেও বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রয়েছে। রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার দেয়া তথ্যমতে, চলতি ২০২১ সালের ২৯শে অক্টোবরে ভারতের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ ৬৪২.০১৯ বিলিয়ন ডলার এবং গত সেপ্টেম্বর মাস শেষে ৬৩৫.৩৬ বিলিয়ন ডলার ছিল। যেখানে গত ২০২০ সালের ৪ই সেপ্টেম্বর ভারতের মোট বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের স্থিতির পরিমাণ ৫৪২.০১৩ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছে যায়। তবে ভারতের ২০২১ সালের মার্চ মাস শেষে বৈদেশিক ঋন ও দেনার স্থিতির পরিমাণ ২.১% বৃদ্ধি পেয়ে ৫৭০ বিলিয়ন ডলার হয়।

এদিকে স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তানের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২১ সালে ৫ই নভেম্বরে পাকিস্তানের মোট বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বা স্থিতির পরিমাণ ২৪.০২৫ বিলিয়ন ডলারে উঠে এসেছে। যা গত আগস্ট মাস শেষে ছিল সর্বোচ্চ ২৭.০৬৮ বিলিয়ন ডলার, সেপ্টেম্বর মাস শেষে ছিল ২৫.৯৮৩ বিলিয়ন ডলার এবং অক্টোবর মাসের প্রথম সপ্তাহে ছিল ২৫.৯৯৯ বিলিয়ন ডলার। তবে পাকিস্তানের রিজার্ভের ৬৫% পর্যন্ত দাঁড়িয়ে আছে বৈদেশিক ঋন ও অনুদানের ওপর নির্ভর করে। আর দেশটির বৈদেশিক ঋন ও দেনার পরিমাণ নাটকীয়ভাবে ৮.১২% বৃদ্ধি পেয়ে চলতি ২০২১ সালের ৩০শে জুনে ১২২.১ বিলিয়ন ডলারে এসে ঠেকে। যেখানে করোনা মহামারির মধ্যে ২০২০ সালের ৩০শে জুন দেশটির মোট বৈদেশিক ঋন ও দেনার স্থিতির পরিমাণ ছিল ১১৩ বিলিয়ন ডলার।

তাছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালের অক্টোবর মাস শেষে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ ৪৬.৪৬ বিলিয়ন ডালার ছিল। যেখানে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে ৪৬.২০ এবং ২৪শে আগস্ট মঙ্গলবারের কার্যদিবস শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের পরিমাণ ইতিহাসে সর্বোচ্চ ৪৮.০৪ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছে যায়। আবার গত ২০২০ সালের ২৯শে ডিসেম্বর বাংলাদেশের রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৪৩.১৭ বিলিয়ন ডলার। ২০১৭ সালের ৫ই সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রির্জাভ ৩৩.৬৮ বিলিয়ন ডলারের সীমাকে স্পর্শ করে। তবে ২০২০-২১ অর্থবছর শেষে বাংলাদেশের মোট বৈদেশিক ঋন ও দেনার স্থিতির পরিমাণ ৪৯.৪৬ বিলিয়ন ডলার এবং সে হিসেবে বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিকের ওপর বৈদেশিক ঋনের বোঝ ২৪,৮৯০ টাকাতে এসে দাঁড়িয়েছে।

বর্তমানে বিশ্বে সর্বোচ্চ পরিমাণ ফরেন কারেন্সি রিজার্ভ হিসেবে ৩.২১৮ ট্রিলিয়ন ডলার চিনের কাছে মজুত রয়েছে। তাছাড়া বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ অর্জনকারী দেশ হিসেবে এশিয়ার আরেক ইকনোমিক জায়ান্ট জাপানের নাম সবার উপরে উঠে এসেছে। চলতি ২০২১ সালের অক্টোবর মাস শেষে ১.৪০৫ ট্রিলিয়ন ডলার এবং সেপ্টেম্বর মাস শেষে ১.৪০৯ ট্রিলিয়ন ডলার বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ মজুত ছিল জাপানের কাছে। তাছাড়া বিশ্বের সর্বোচ্চ তৃতীয় বৈদেশিক মুদ্রা মজুতকারী দেশ হিসেবে ইউরোপের দেশ সুইজারল্যান্ডের কাছে ১.০৩৬ ট্রিলিয়ন ডলারের সুবিশাল বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রয়েছে। তাছাড়া বিশ্বের সর্বোচ্চ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী দেশগুলোর মধ্যে চতুর্থ অবস্থানে থেকে ভারতের কাছে ৬৪২.০১৯ বিলিয়ন ডলার এবং পঞ্চম অবস্থানে থেকে রাশিয়ার কাছে ৬২৪.২৪ বিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ মজুত রয়েছে।

এদিকে চলতি ২০২১ সালের আগস্ট মাসের হিসাব অনুযায়ী সারা বিশ্বে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের দিক দিয়ে শক্তিশালী অবস্থানে থাকা অন্যান্য দেশগুলোর মধ্যে যথাক্রমে তাইওয়ানের ৫৪৪.৯০ বিলিয়ন ডলার, হংকং এর ৪৯৭ বিলিয়ন ডলার, দক্ষিণ কোরিয়ার ৪৬৪ বিলিয়ন ডলার ফরেন কারেন্সি রিজার্ভ রয়েছে। তাছাড়া মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম প্রভাবশালী দেশ সৌদি আরবের ৪৫৪.৫০ বিলিয়ন ডলার এবং এশিয়ার ছোট্ট সিঙ্গাপুরের ৪১৮.১৫ বিলিয়ন ডলারের বিশাল আকারের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রয়েছে।

চলতি ২০২১ সালের ১লা অক্টোবরে তুরস্কের সেন্ট্রাল ব্যাংকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ১২১.৮৪ বিলিয়ন ডলার (বৈদেশিক মুদ্রা ও সোনার রিজার্ভ)। যদিও গত আগস্ট মাসের শেষে দেশটির কাছে ১১৭.৮ বিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দেখানো হয়। যা পূর্বের জুলাই মাস অপেক্ষা ১১.৩% বেশি। যেখানে চলতি বছরের জুলাই মাসে তুরস্কের কাছে ১০৫.৯ বিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ মজুত থাকে। তবে তুরস্কের আনাদুলু নিউজ এজেন্সির দেয়া তথ্যমতে, তুরস্কের সরকারি ও বেসরকারি খাত মিলিয়ে ২০২১ সালের প্রথম কোয়ার্টারে মোট বৈদেশিক ঋন ও দেনার স্থিতির পরিমাণ দেখনো হয় ৪৪৮.৪ বিলিয়ন ডলার। যা ২০১৯ সালে ডিসেম্বরের ৪৩৬.৯০ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি থাকলেও তা ২০২০ সালের ডিসেম্বরের শেষে বৃদ্ধি পেয়ে ৪৪৫ বিলিয়ন ডলারে এসে পৌঁছে।

বৈদেশিক মুদ্রার মজুতের বিচারে দক্ষিণ এশিয়ার দেশ শ্রীলংকার বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এবং অর্থনৈতিক সক্ষমতা মোটেও সন্তোষজনক নয়। চলতি ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাস শেষে শ্রীলংকার বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রয়েছে মাত্র ২.৭ বিলিয়ন ডলার এবং যার বিপরীতে দেশটির পাহাড় সমান ৫০ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি বৈদেশিক ঋন ও দেনার স্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশের নিকটতম অবস্থানে থাকা নেপালের ১৫ই এপ্রিল ২০২১ সালের হিসেবে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ১১.৯৬ বিলিয়ন ডলার এবং বৈদেশিক ঋনের পরিমাণ ৭.২ বিলিয়ন ডলার। তাছাড়া আফগানিস্তানের আনুমানিক ৯.৬ বিলিয়ন ডলার এবং যা কিনা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জব্দ করে রেখেছে। এদিকে ভুটানের ১.৫৫ বিলিয়ন ডলার এবং মালদ্বীপের ৮০০ মিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রয়েছে।#

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.