--- বিজ্ঞাপন ---

গেল অর্থবছরে রেমিট্যান্স আয় বাংলাদেশের ২১.৬২, ভারতের ১০৭.৫, পাকিস্তানের ২৭.২৪ বিলিয়ন ডলার

রেমিট্যান্স আয়ে সচল বাংলাদেশের অর্থনীতি

0

সিরাজুর রহমান, বিশেষ প্রতিনিধি#

বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি হচ্ছে তৈরি পোশাক রপ্তানি এবং রেমিট্যান্স আয়। তৈরি পোশাক রপ্তানি করে দেশের সর্বোচ্চ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হলেও এই শিল্প খাতে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল, মূলধনী যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তি আমদানি করতেই বিপুল অংকের বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হয়ে যায়। বাংলাদেশের রপ্তানি অপেক্ষা বরাবরই আমদানি ব্যয় অনেকটাই বেশি বা বৈদেশিক বাণিজ্যের ভারসাম্য নেতিবাচক হয়ে থাকে। আর তাই অভার অল ব্যালেন্স অব পেমেন্টের ভারসাম্য রক্ষায় রেমিট্যান্স আয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাছাড়া বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ স্থিতিশীল রাখতেও রেমিট্যান্স আয়ের বড় ধরনের অবদান রয়েছে।

চলতি ২০২৩ সালের জুন মাসে রেমিট্যান্স আয় ইতিবাচক ভাবে বৃদ্ধি পেলেও নতুন ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম জুলাই মাসে রেমিট্যান্স আয় কিছুটা হ্রাস পায়। গত জুলাই মাসে রেমিট্যান্স হিসেবে ১.৯৭ বিলিয়ন ডলার বৈধ ব্যাংকিং চ্যানেলে দেশে আসে। যদিও গত ২০২২-২৩ অর্থবছরের শেষ জুন মাসে রেকর্ড পরিমাণ ২.১২ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স দেশে এসেছিল। আর তা ছিল বিগত ৩৫ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ একক মাসের রেমিট্যান্স প্রাপ্তি। তাছাড়া গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট রেমিট্যান্স আয় হয় ২১.৬১ বিলিয়ন ডলার।

চলতি ২০২৩ সালের মে মাসে ১.৬৯২ বিলিয়ন ডলার, এপ্রিল মাসে ১.৬৮৪ বিলিয়ন ডলার এবং মার্চ মাসে ২.০১৮ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স দেশে পাঠান আমাদের সম্মানিত প্রবাসী কর্মীরা। তবে একক কোন বছর হিসেবে গত ২০২০-২১ অর্থবছরে বৈধ ব্যাংকিং চ্যানেলে সর্বোচ্চ পরিমাণে ২৪.৭৮ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স দেশে এসেছিল। মূলত ২০২০-২১ সালের দিকে করোনা মহামারীর কারণে লক্ষাধিক প্রবাসী কর্মী তাদের কাজ হারিয়ে সঞ্চিত থাকা অবশিষ্ট অর্থ নিয়ে দেশে ফিরে আসায় সে বছর সাময়িকভাবে রেমিট্যান্স আয় বৃদ্ধি পেয়েছিল।

তবে দক্ষিণ এশিয়ায় দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স আয় করে আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত। গত ২০২২-২৩ অর্থবছর শেষে ভারত মোট রেমিট্যান্স আয় করে ১০৭.৫ বিলিয়ন ডলার। যা গত ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ৮৯.১২৭ বিলিয়ন ডলার। বর্তমানে যা শুধু দক্ষিণ এশিয়াই নয় বরং সারা বিশ্বের মধ্যে প্রথম স্থানীয় রেমিট্যান্স আয়কারী দেশ হিসেবে নিজের শক্ত অবস্থান তৈরি করে নিয়েছে ভারত। আর এক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে ভারতের দক্ষ প্রবাসী কর্মীরা। ভারত সরকার কিন্তু বরাবরই বিদেশে হাইলি স্কিলিড বা দক্ষ প্রবাসী কর্মী পাঠানোর বিষয়টিকে বেশি গুরুত্ব দেওয়ায় তারা তুলনামূলক ভাবে অন্য দেশের কর্মী অপেক্ষা বেশ ভালো পরিমাণ অর্থ আয় করেন।

এদিকে অর্থনৈতিক সংকটের মুখে থাকা পাকিস্তানের ২০২৩ অর্থবছরে রেমিট্যান্স আয় আশাঙ্খাজনক হারে কমে গেছে। গত ২০২৩ অর্থবছরে পাকিস্তানের রেমিট্যান্স আয় হয় ২৭.২৪ বিলিয়ন ডলার। যেখানে দেশটি গত ২০২২ অর্থবছরে রেমিট্যান্স বাবদ আয় করেছিল ৩১.২৭৯ বিলিয়ন ডলার। তাছাড়া গত ২০২২ সালের ১২ মাসে শ্রীলংকা মোট রেমিট্যান্স আয় করে ৩.৭৮৯ বিলিয়ন ডলার। এদিকে একই সময়ে নেপাল ৮ বিলিয়ন ডলার, ভুটান ১.০০ বিলিয়ন ডলার এবং আফগানিস্তান ০.৪ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স আয় করে।

তবে হতাশার ব্যাপার হলো যে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রত্যাশা অনুযায়ী মধ্যপ্রাচ্য ও অন্যান্য দেশে বিপুল সংখ্যক প্রবাসী কর্মী গেলেও সেই অনুপাতে রেমিট্যান্স আয় কিন্তু বৃদ্ধি পায়নি। বিশেষ করে অধিক লাভের আশায় অবৈধ হুন্ডির মাধ্যমে প্রবাসী কর্মীদের দেশে অর্থ প্রেরণের কারণেই বাংলাদেশ প্রতি বছর বিপুল অংকের ডলার প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হয়। হুন্ডির মাধ্যমে ঠিক কি পরিমাণ অর্থ দেশে আসে তার সঠিক তথ্য উপাত্ত পাওয়া সম্ভব না হলেও মনে করা হয় আমাদের সম্মানিত প্রবাসী কর্মীরা আনুমানিক প্রায় ৫ থেকে ৬ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি রেমিট্যান্স হুন্ডির মাধ্যমে প্রেরণ করেন। যা আমাদের দেশের বিকাশমান অর্থনীতির জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে থেকেই যাচ্ছে।##

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.