সিরাজুর রহমান, বিশেষ প্রতিনিধি#
বর্তমানে পশ্চিমা বিশ্বের সাথে সেমিকন্ডাক্টর চিপ নিয়ে বড় ধরনের যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে রেড জায়ান্ট চীন। চীনের সেমিকন্ডাক্টর ইন্ডাস্ট্রিজ কে বাধাগ্রস্ত করতে আমেরিকার ইতোমধ্যেই বেশকিছু নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। বিশেষ করে নেদারল্যান্ডস থেকে উচ্চ প্রযুক্তির ন্যানো চীপ তৈরির প্রযুক্তি চীন যাতে সংগ্রহ করতে না পারে এজন্য গত ২০২০ সালেই চীনের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তাছাড়া নেদারল্যান্ডসের উপরও কড়া নজর রাখছে মার্কিন প্রশাসন। এ নিয়ে আমেরিকা তার বন্ধুভাবাপন্ন দেশগুলোর কাছে অনেক আগেই পরিষ্কার বার্তা দিয়ে রেখেছে।
তবে উচ্চ প্রযুক্তির চিপ রপ্তানিতে যুক্তরাষ্ট্রসহ মিত্রদের নিষেধাজ্ঞার কারণে চীনের পক্ষে ন্যানো চীপ তৈরি করাটা সম্ভব হবে না বলে মনে করা হলেও চীন কিন্তু বাস্তবে (সেমিকন্ডাক্টর) ৩৫০ থেকে ৭ ন্যানোমিটার পর্যন্ত চিপ তৈরিতে বড় ধরণের সফলতা পেয়েছে। বিশেষ করে পশ্চিমা বিশ্বেকে ধোকা দিয়ে গত সপ্তাহে চীন তাদের নিজস্ব ৭ ন্যানোমিটার সিলিকন চিপ কিরনি ৯০০০এস ব্যবহার করে হুয়াওয়ের মেট ৬০ প্রো ৫জি স্মার্টফোন লঞ্চ করেছে। যদিও অবশ্য আমেরিকার নিষেধাজ্ঞার বাহিরে থাকা প্রযুক্তি সংগ্রহ করে হলেও চীন নিজের মতো করে এগিয়ে যাওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছে।
চীনের সেমিকন্ডাক্টর শিল্প উন্নয়নে বর্তমানে নেতৃত্ব দিচ্ছে সাংহাই ভিত্তিক চীনের সেমিকন্ডাক্টর ম্যানুফ্যাকচারিং ইন্টারন্যাশনাল কর্পোরেশন (এসএমআইসি) কোম্পানিটি। এটি আজ থেকে ২৩ বছর আগে ২০০০ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয়। চলতি ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসের হিসেব অনুযায়ী এই কোম্পানিটির মার্কেট ক্যাপিটাল ভ্যালু প্রায় ৩০ বিলিয়ন ডলার এবং গত ২০২২ সালে রেভিনিউ অর্জন করে ৭.২৭ বিলিয়ন ডলার। এই প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে কর্মরত কর্মীর সংখ্যা প্রায় ১৮ হাজার।
বর্তমানে সেমিকন্ডাক্টর বা চীপ শিল্পের বৈশ্বিক মার্কেট ভ্যালু প্রায় ৬০০ বিলিয়ন ডলার। আর এই শিল্পের ন্যানো চীপ তৈরির মূল ফটোলিথোগ্রাফী প্রযুক্তি বা সিস্টেম ডিজাইন ও তৈরি করে পৃথিবীর একমাত্র দেশ নেদারল্যান্ডস। তাদের ডাচ টেক জায়ান্ট কোম্পানি এডভান্স সেমিকন্ডাক্টর ম্যাটারিয়ালস লিথোগ্রাফী (এএসএমএল) সারা বিশ্বে এই প্রযুক্তি রপ্তানি করে। নেদারল্যান্ডস চিপ তৈরির এই অতি মূল্যবান কোম্পানিটি প্রতিষ্ঠা করে ১৯৮৪ সালে। চলতি ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত সারা ইউরোপের সবচেয়ে দামী ও মূল্যবান টেক জায়ান্ট কোম্পনি হিসেবে ডাচদের এই এডভান্স সেমিকন্ডাক্টর ম্যাটারিয়ালস লিথোগ্রাফী (এএসএমএল) কোম্পানির মার্কেট ক্যাপিটাল ভ্যালু ছিল ২৮০ বিলিয়ন ডলার।
এখানে প্রকাশ থাকে যে, তাইওয়ান, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, আমেরিকা ও চীনসহ বেশকিছু দেশ তাদের নিজস্ব প্রযুক্তির ন্যানোমিটার চীপ তৈরি করলেও চীপ তৈরির মূল ফটোলিথোগ্রাফী প্রযুক্তি আমেরিকা, রাশিয়া বা চীনের মতো দেশের পক্ষে তৈরি করা সম্ভব নয়। আর তাই আমেরিকা তার বৈশ্বিক প্রভাব ও শক্তিকে কাজে লাগিয়ে চীন যাতে কোন ভাবেই ফটোলিথোগ্রাফী প্রযুক্তি পেতে না পারে তার সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এদিকে সেমিকন্ডাক্টর প্রযুক্তিতে অনেকটাই পিছিয়ে থাকলেও নিজেরাও কিন্তু সর্বোচ্চ ভাবে কাজ করে যাচ্ছে এ শিল্পে ভালো কিছু অর্জন করতে। আর এই সেক্টরে রিভার্স ইঞ্জিনিয়ারিং এ চীন কিন্তু অনেকটাই সফল বলেই মনে করছে পশ্চিমা বিশ্ব।
এদিকে কানাডার এক টেক এনালিস্ট ফার্ম জানায় যে, সাংহাই ভিত্তিক চীনের সেমিকন্ডাক্টর ম্যানুফ্যাকচারিং ইন্টারন্যাশনাল কর্পোরেশন (এসএমআইসি) গত ২০২২ সালে থেকেই ৭ ন্যানোমিটার চীপ ডিজাইন ও ম্যানুফ্যাকচারিং শুরু করে দিয়েছে। যা বর্তমানে সিলিকন চিপ কিরনি ৯০০০এস নামে হুয়াওয়ের মেট ৬০ প্রো ৫জি স্মার্টফোনে সফলভাবে ব্যবহার করছে রেড জায়ান্ট চীন। যা গত সপ্তাহেই বাজারে উম্মুক্ত করে দিয়েছে চাইনিজ টেক জায়ান্ট হুয়াওয়ে কোম্পানি। বর্তমানে সেমিকন্ডাক্টর ম্যানুফ্যাকচারিং ইন্টারন্যাশনাল কর্পোরেশন (এসএমআইসি) নিজস্ব প্রযুক্তি ব্যবহার করেই ৩৫০ থেকে ৭ ন্যানোমিটার চীপ ডিজাইন ও তৈরি করতে সক্ষম।
যদিও চীন অপেক্ষা আমেরিকা, তাইওয়ান ও দক্ষিণ কোরিয়া ৫ ন্যানোমিটার চীপ ডিজাইন এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং এ অনেক দূর এগিয়ে গেছে। তাই এবার চীনকে যে কোন উপায়ে থামাতে আমেরিকার প্রশাসন চীনের সেমিকন্ডাক্টর ম্যানুফ্যাকচারিং ইন্টারন্যাশনাল কর্পোরেশন (এসএমআইসি) এর উপর নতুন করে অবরোধ চাপিয়ে দিয়েছে। তবে চীন যে অদূর ভবিষ্যতে এখনেই যে থেমে থাকবে না তা খুব ভালো করেই অনুধাবন করেছে পশ্চিমা বিশ্বের দেশগুলো। আর শত নিষেধাজ্ঞা ও প্রতিকূলতার মাঝেও প্রযুক্তিগত সক্ষমতা অর্জনে নিরবে কিভাবে টিকে থাকতে হয় তা চীন খুব ভালো করেই জানে।##