--- বিজ্ঞাপন ---

পাকিস্তান-বাংলাদেশ সর্ম্পকের বরফ কি গলতে শুরু করেছে?

0

পাকিস্তানের সাথে কি বাংলাদেশের সম্পর্কের নতুন মেরুকরন হচ্ছে? বরফ কি গলছে।  দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী নির্যাতন, লাখ লাখ মানুষকে হত্যা, ধর্ষন করার অভিযোগে অভিযুক্ত। পাকিস্তান কখনও তাদের অপরাধ স্বীকার করে নি। অনেক সময় ক্ষমা চাওয়ার কথা উঠে এলেও কেউ ক্ষমা চাইনি। তবে বর্তমান ইমরান সরকার নাকি বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক ভালো করতে ইচ্ছুক। পাকিস্তানী টেলিভিশনগুলোতে বাংলাদেশের অগ্রগতির কথা প্রায়শ এখন বলা হয়। সে দেশের সুশিল সমাজ বাংলাদেশের অগ্রগতিকে দেখছে ইতিবাচক হিসেবে। অনেকে বাংলাদেশের উপর তাদের অমানবিক নির্যাতনের বিষয়টি নিয়েও কথা বলেন। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও বাংলাদেশের কাছে তারা ক্ষমা চাইনি।

পাকিস্তানের সাথে বিগত যুদ্ধের সময়ের হিসাব-নিকেশও বাকি আছে। পাকিস্তানের কাছে বাংলাদেশের অনেক টাকা পাওনা আছে। যুদ্ধের সময় পাকিস্তানের ন্যাশনাল ব্যাংকে থাকা বাংলাদেশের টাকার হিস্যা নিয়ে বিরোধ আছে। কুটনৈতিক সম্পর্ক যদি পাকিস্তান ভালো করতে চাই তাহলে এসব বিরোধের বিষয়গুলো কি সমাধান হবে।

বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর পাক সরকারের সাথে সর্ম্পকের টানাপোড়েন সৃষ্টি হয় তখন যখন বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধের সাথে অভিযুক্তদের সাজা দেয়া হচ্ছিল। পাকিস্তানের সংসদেও কেউ কেউ এটি নিয়ে কথা বলেন, যা বাংলাদেশ ভালো নজরে গ্রহণ করেনি। পরে পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে যায় এক দেশ অন্য দেশের ভিসা বন্ধ করে দেয়, পাকিস্তানের রাষ্টদুতকে বাংলাদেশ গ্রহণ করেনি। পাকিস্তানও সেখানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদুত নিয়ে নানা টানা হেচড়া করে। তবে এসব কিছু উৎরে গেছে যখন পাকিস্তানের ইমরান খান বেশ কয়েকবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে ফোন করেন। বিশেষ করে কাশ্মির ইস্যু বা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর স্বাস্থ্যর খবর নেন। তখন অনেকে ধারনা করেছিলেন সম্পর্ক বোধ হয় স্বাভাবিক হচ্ছে। এরই মধ্যে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ভারত গেলে সেখানে কেন্দ্রীয় সরকারের কার্যকলাপ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে উঠে আসে। যেখানে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে নায্য সম্মান দেয়া হয়নি। তাছাড়া আসামের এনআরসি, তিস্তার পানি নিয়ে ক্ষুদ্ধ বাংলাদেশ। এ সুযোগটি পাকিস্তান কাজে লাগাতে পারে অনেকের বিশ্বাস।

সেই যাই হোক, এরই মধ্যে বিভিন্ন গণমাধ্যমে পাকিস্তানের সাথে বাংলাদেশের সর্ম্পকের বিষয়ে বেশ কয়েকটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। বাংলাদেশের দৈনিক সমকালের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ‘‘পাকিস্তানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক শক্তিশালী করতে চায় সরকার। দেশটির সঙ্গে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্কেও উন্নয়ন প্রত্যাশা রয়েছে। এ উদ্দেশ্যে ইসলামাবাদে বড় আকারের এবং স্থায়ী একটি কনস্যুলেট জেনারেল ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এ মাসেই প্রকল্পটির সংশোধনী জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় বিবেচনার জন্য উপস্থাপন করা হচ্ছে বলে সরকারি সূত্রে জানা গেছে।

সাত হাজার ৭৬৮ কোটি বর্গমিটারের এই জমিটি পাকিস্তান সরকার বাংলাদেশকে দিয়েছে। ভারতসহ আরও অনেক দেশে বাংলাদেশের কনস্যুলেট ভবন রয়েছে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ও ইসলামাবাদে প্রকল্পটি নির্মাণের পক্ষে তাদের সুপারিশ দিয়েছে। আগামী মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কেন্দ্রে একনেক বৈঠকে এ প্রকল্প অনুমোদন হতে পারে। এতে সভাপতিত্ব করার কথা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার।

পরিকল্পনা কমিশনের এক সদস্য নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, বিজয়ের মাস ডিসেম্বর। এ মাসে এ রকম একটি প্রকল্প অনুমোদন হলে বিতর্ক উঠতে পারে। কারণ পাকিস্তানের সঙ্গে আমাদের কূটনৈতিক সম্পর্ক অতটা ভালো না। অবশ্য তিনি এ কথাও বলেন যে, এটা রুটিন ওয়ার্ক। ডিসেম্বর মাস মাথায় রেখে এ প্রকল্প নেওয়া হয়নি। ফলে এটা নেতিবাচক হিসেবে দেখার যুক্তিসঙ্গত কারণ নেই।

প্রকল্পের উদ্দেশ্য ব্যাখ্যায় চারটি যুক্তি তুলে ধরা হয়েছে। (ক) পাকিস্তানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় রাখা ও তা শক্তিশালী করা; (খ) দুটি রাষ্ট্রের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক উন্নয়ন করা; (গ) বর্তমান চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে মিশনে প্রয়োজনীয় ভৌত অবকাঠামো সুবিধা সৃষ্টি; (ঘ) পাকিস্তান সরকার কর্তৃক বাংলাদেশ সরকারকে দূতাবাসের জন্য প্রদত্ত জমির সদ্ব্যবহার করা।

পাকিস্তানে কনসুলেট ভবন নির্মাণ প্রকল্পটি সংশোধনের জন্য সুপারিশে পরিকল্পনা কমিশন বলেছে, ইসলামাবাদে বাংলাদেশ হাইকমিশনের নির্মাণাধীন কনসুলেট ভবনটি হলে নিজস্ব ভবনে মিশনের দাপ্তরিক কাজ পরিচালানা করা সম্ভব হবে। একনেকে প্রকল্পটির সংশোধনী সদয় ও সানুগ্রহ অনুমোদনের জন্য সুপারিশ করা হলো।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, মন্ত্রণালয়ের পক্ষে ইসলামাবাদে বাংলাদেশ হাইকমিশন প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। প্রকল্পের ঠিকানা- ব্লক-৯ ও ১৫, সেক্টর জি-৫, ডিপ্লোম্যাটিক এনক্লেভ, ইসলামাবাদ, পাকিস্তান। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৮০ কোটি টাকা। তৃতীয় দফায় সংশোধিত এ প্রকল্পটির কাজ আগামী ২০২২ সালের জুনে শেষ হওয়ার কথা। চলতি অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) চলমান প্রকল্প হিসেবে প্রকল্পটি অন্তর্ভুক্ত। বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১০ কোটি টাকা। প্রকল্পটি সংশোধনের কারণ ব্যখ্যায় বলা হয়, পরামর্শক প্রতিষ্ঠান বদল, অডিটোরিয়াম তৈরি ও নতুন কার্যক্রম অন্তর্ভুক্তি ইত্যাদি।

জানা গেছে, আগামী ২০২৪ সালের মধ্যে বিদেশি ৩২টি মিশনে নিজস্ব জমির ওপর ভবন নির্মাণ অথবা জমিসহ ভবন ক্রয়ের সিদ্ধান্ত আছে বাংলাদেশ সরকারের। তিনটি পর্যায়ে এসব মিশন প্রস্তুত করার কাজ করছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এ পর্যন্ত ৩২টি মিশনের মধ্যে ১৫টি মিশনের জন্য জমি কিংবা জমিসহ ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে চ্যান্সারি অফিস নির্মাণ হচ্ছে রিয়াদ, বার্লিন, আঙ্কারাসহ ৬টি শহরে। অন্যদিকে ৭৬টি দূতাবাসের মাধ্যমে পৃথিবীর প্রায় সব দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় রাখা হচ্ছে।’’

শেষপর্যন্ত কি হয় তা দেখতে আরও কিছু সময় লাগবে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছে, পাকিস্তান যদি আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের কাছে ক্ষমা চাইতো তাহলে সর্ম্পক এতটা নষ্ট হতো না। কারন স্বাধীন দেশ হিসেবে পাকিস্তান অনেক আগেই বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছে। তাছাড়া এখন বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান এমন পর্যায়ে গেছে যে, যেখানে পাকিস্তানীরাও বিশ্বাস করেন বাংলাদেশ আর আগের মতোন নেই।###৮.১২.১৯

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.