--- বিজ্ঞাপন ---

অশান্ত ভারত, নাগরিকত্ব আইন নিয়ে রণক্ষেত্র বিভিন্ন রাজ্য

ভারতে নতুন সেনাপ্রধান, বাংলাদেশী হাইকমিশনার বদল, পাক-ভারত আবারও গোলাগুলি

0

নাগরিকত্ব আইন নিয়ে উত্তাল ভারত। বিভিন্ন রাজ্যে বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ চলছে। আন্দোলনে নেমে পড়েছে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা। পশ্চিমবঙ্গের মূখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় প্রতিদিন রাস্তায় মিছিল সমাবেশ করছেন। এতসব আন্দোলনের মাঝেও নীরব মোদী সরকার। তার ডান হাত বলে পরিচিত অমিত শাহ একের পর এক উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়ে চলেছে। এরই মধ্যে ভারতে নিয়োগ করা হচ্ছে নতুন সেনাপ্রধান। বাংলাদেশের রাষ্ট্রদুত বদলী হয়েছে ইতোমধ্যে। চলমান আন্দোলনের ভেতরে শ্রীনগরে পাক-ভারত গুলাগুলি থেমে নেই। পাক সেনাদের গুলিতে মারা গেছে ভারতের দু’জন।

ভারতের নতুন সেনাপ্রধান

ভারতীয় মিডিয়া সুত্রে জানা গেছে, ১৩ লক্ষ সেনায় সমৃদ্ধ, শক্তিশালী ভারতীয় বাহিনীর শীর্ষে বসতে চলেছেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল মনোজ মুকুন্দ নারাভানে। সোমবার সরকারি এক সূত্রে পরবর্তী সেনাপ্রধান হিসেবে মুকুন্দের নাম জানানো হয়েছে। লেফটেন্যান্ট নারাভানে বর্তমানে ভারতীয় সেনাবাহিনীর উপপ্রধান। চলতি বছরের শেষদিন, ৩১ ডিসেম্বর অবসর নেবেন বর্তমান সেনাপ্রধান জেনারেল বিপিন রাওয়াত। তার পরেই সরকারি ভাবে দায়িত্বগ্রহণ করবেন নারাভানে।গত সেপ্টেম্বরে ভারতীয় সেনার উপপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার আগে তিনি ছিলেন ইস্টার্ন কম্যান্ডের প্রধান। ভারত-চিন সীমান্তের প্রায় ৪০০০ কিলোমিটার নজরদারির দায়িত্ব থাকে ইস্টার্ন কম্যান্ডের উপর।লেফটেন্যান্ট জেনারেল নারাভানে ন্যাশনাল ডিফেন্স অ্যাকাডেমি ও ইন্ডিয়ান মিলিটারি অ্যাকাডেমির প্রাক্তনী। ৩৭ বছরের কর্মজীবনে লেফটেন্যান্ট জেনারেল নারাভানে একাধিক কম্যান্ডে কাজ করছেন।।

পাক-ভারত আবারও সংঘর্ষ

এদিকে ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে চলছে ব্যাপক উত্তেজনা। ভারতীয় মিডিয়ার খবরেে উল্লেখ করা হয়, কাশ্মীরের সুন্দরবনি সেক্টরে পাকসেনার মর্টার শেলিং। অতর্কিত এই হামলায় শহিদ ভারতীয় সেনাবাহিনীর এক জওয়ান। ঘটনাকে কেন্দ্র করে ব্যাপক উত্তেজনা। পালটা কড়া প্রত্যাঘাত ভারতীয় সেনার। একেবারে খোলা হাতে পাকিস্তান সেনাকে জবাব ভারতীয় সেনার। দুপক্ষের গোলাগুলিতে উত্তপ্ত সীমান্ত এলাকা। জানা গেছে, ভারত এবং পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণরেখা অতিক্রম করে পাকিস্তানের দিক থেকে কয়েক জন কাশ্মীরে ঢোকার চেষ্টা করে বলে ধরা পড়ে সেনার র‍্যাডারে। সঙ্গে সঙ্গে গুলি চালায় সেনাবাহিনী। এরপরেই অতর্কিতে মর্টার শেলিং শুরু করে পাকিস্তানি সেনা। এর পরই দু’পক্ষের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষের পরিস্থিতি তৈরি হয়। চলতে থাকে দুপক্ষের মধ্যে ব্যাপক গোলাগুলি। পাক বাহিনীকে মোক্ষম জবাব ভারতের।

ভারতীয় সেনা মনে করছে, পাকসেনার প্রত্যক্ষ মদতেই কয়েক জন ভারতে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছিল। তাদের কভার ফায়ারিং দেওয়ার জন্যে তৈরিই ছিল পাকিস্তান সেনা। ভারতীয় সেনা গুলি চালানোর সঙ্গে সঙ্গে পাকবাহিনীও পালটা শেলিং করে। রাতের অন্ধকারে পুরো পরিস্থিতির জন্যে তৈরি ছিল না। আর সেই কারণে সীমান্তের ওপারের অতর্কিত হামলা শহিদ হতে হয় সেনার এক জওয়ানকে। গত সোমবার দফায় দফায় উত্তপ্ত হয়ে ওঠে ভারত এবং পাকিস্তান সীমান্ত। কাশ্মীরের নৌশেরা সেক্টরের কালাল এলওসিতে বিনা প্ররোচনাতে লাগাতার সংঘর্ষ বিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করেছে পাকিস্তান সেনা। ছোট আগ্নেয়াস্ত্র থেকে গোলাগুলি চালাতে শুরু করে পাকিস্তান। মর্টারও ছোড়া হয় বলে দাবি ভারতীয় সেনার। যদিও নৌশেরায় পাক হামলার কড়া জবাব দিয়েছে ভারতীয় সেনা। অন্যদিকে, কাশ্মীরের বান্দিপোরা জেলার গুরেজ সেক্টরের নিয়ন্ত্রণরেখায় পাক গুলিতে আরও এক ভারতীয় জওয়ান শহিদ হয়েছেন।

উল্লেখ্য, গত কয়েকদিন ধরে দফায় দফায় উত্তেজনা তৈরি হয়েছে ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে। লাগাতার বিনা প্ররোচনাতে সংঘর্ষ চুক্তি লঙ্ঘন করেছে পাকিস্তান সেনা। যদিও প্রত্যেকটি হামলার কড়া প্রত্যাঘাত দিয়েছে ভারতীয় সেনা

ভারতে নিয়ুক্ত বাংলাদেশী হাইকমিশনার বদল

বাংলাদেশি হাই কমিশনমার সৈয়দ মুয়াজ্জেম আলিকে বিদায় জানালেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। শেখ হাসিনার ‘যোগ্য নেতৃত্বের’ প্রশংসা করে মোদী বলেন, বাংলাদেশ সমস্ত ক্ষেত্রেই চোখে পড়ার মতো উন্নতি করেছে। আনন্দবাজার জানায়, নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন নিয়ে যখন বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কে টানাপড়েন চলছে, তখন মোদীর এই মন্তব্য তাৎপর্যপূর্ণ। সম্প্রতি নাগরিকত্ব আইন সংসদে পাশ হওয়ার পর ভারত সফর বাতিল করেছেন হাসিনা সরকারের বিদেশ এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। বিষয়টি নিয়ে কূটনৈতিক শিবিরে এতটাই বিতর্ক তৈরি হয় যে বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্রকে সাংবাদিক সম্মেলন করে বার বার দু’দেশের ‘সোনালি অধ্যায়ের’ কথা মনে করিয়ে দিতে হয়েছে। কূটনৈতিক সূত্রের বক্তব্য, যে অগ্নিগর্ভ প্রতিবেশী বলয়ের মধ্যে এক মাত্র ঢাকাই গত এক দশক ধরে নিরবচ্ছিন্ন ভাবে নয়াদিল্লির পাশে রয়েছে। পাকিস্তানের মতো প্রতিবেশীর সঙ্গে যুঝতে হলে ঢাকাকে পাশে রাখা যে কতটা প্রয়োজন, এটা মনমোহেন সরকারের মতো বর্তমান সরকারও জানে।

কিন্তু সংসদের দুই কক্ষে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের বারবার পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের নাম একই বন্ধনীতে রেখে উল্লেখ করার বিষয়টিতে চূড়ান্ত হতাশ ঢাকা— এমনটাই জানাচ্ছে সূত্র।

রণক্ষেত্র ভারতের বিভিন্ন রাজ্য

সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন নিয়ে ফের মঙ্গলবার রণক্ষেত্র উঠল দিল্লির রাজপথ। ওই আইন বিরোধিতায় পথে নামা প্রতিবাদীদের সঙ্গে দিল্লি পুলিশের খণ্ডযুদ্ধ বাধল সিলামপুর এলাকায়। ঘটনার জেরে আপাতত সাতটি মেট্রো স্টেশন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

সংবাদ সংস্থার সূত্রে খবর, এ দিন দুপুর ১২টা নাগাদ সিলামপুর এলাকায় দিল্লির হাজার দুয়েক সাধারণ মানুষ নাগরিকত্ব আইনের বিরোধিতায় জড়ো হন। প্রতিবাদীরা জামিয়ার ছাত্র নিগ্রহের ঘটনার নিন্দায় সরব হন। পুলিশের দাবি, বিক্ষুব্ধ জনতা পুলিশের দিকে ইট ছুড়ে মারে। পাল্টা কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে পুলিশও। মুহূর্তে পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে। একটি স্কুল বাসে ভাঙচুর চালায় উত্তেজিত জনতা। আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় একটি পুলিশ পিকেটে। ইটবৃষ্টি থামাতে লাঠিচার্জ করতে থাকে পুলিশ। সংবাদ সংস্থা সূত্রে জানা যাচ্ছে, এই ঘটনার জেরে দু’জন পুলিশ কর্মী আহত হয়েছেন। তড়িঘড়ি জোহরি এনক্লেভ, শিববিহার-সহ মোট সাতটি মেট্রো স্টেশনের দরজা বন্ধ করে দেন দিল্লি মেট্রোরেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। বন্ধ করে দেওয়া হয় সিলামপুর-জাফরবাদের রাস্তাও। জাফরবাদেও জমায়েত হয় বহু সাধারণ মানুষ।

গত শুক্রবার থেকে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে সরব জামিয়া মিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়। তবে রবিবার বিক্ষোভকারীরা পথে নামলে তাঁদের সঙ্গে যোগ দেয় বহু সাধারণ মানুষ। পুলিশ-জনতার খণ্ডযুদ্ধে ধ্বংসাত্মক চেহারা নেয় নিউদিল্লির নিউ ফ্রেন্ডস কলোনি। ওই বিকেলে একের পর এক বাস ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেন বিক্ষোভকারীরা। ওই দিন রাতে দিল্লি পুলিশ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করে ছাত্রদের ওপর লাঠিচালনা করলে, প্রতিবাদে মুখর হয় গোটা দেশের ছাত্রসমাজ। ধুন্ধুমার চলে আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়, পটনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসেও। জামিয়ার ছাত্রদের সমর্থনে সেই রাত থেকেই পথে নামে দেশের অগ্রণী ক্যাম্পাসগুলির ছাত্ররা। নিন্দায় সরব হয়েছিল বিরোধী দলগুলিও। জামিয়া মিলিয়া এবং আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের উপর পুলিশি অভিযান নিয়ে সোমবার শীর্ষ আদালতে আবেদন করেছিলেন আইনজীবী ইন্দিরা জয়সিংহ এবং কলিন গনসালভেস। এদিন মামলাটি কোর্টে উঠলে প্রধান বিচারপতি বলেন, “এটা আইন-শৃঙ্খলার সমস্যা। হাইকোর্টে আবেদন করুন।’’ (ছবি-বিবিসি) ### ১৭.১২.১৯

 

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.