--- বিজ্ঞাপন ---

দাবানলে জ্বলছে অস্ট্রেলিয়া

0

জ্বলছে অস্ট্রেলিয়া। দাবানল কবে নিববে কেউ জানেনা। নিয়ন্ত্রনে আসছে না দাবানল। হাজার মানুষের আহাজারি থামছে না। আর্ন্তজাতিক মিডিয়া সূত্র জানায় শহর সিডনির উপকূলে দাবানলের প্রকোপ থেকে প্রাণে বাঁচতে সমুদ্রে ঝাঁপিয়ে পড়ছে হাজারও মানুষ। ভিক্টোরিয়া রাজ্য থেকে হাজার হাজার বাসিন্দা ও ছুটি কাটাতে আসা মানুষজনকে রাজ্য ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

গত বুধবার পর্যন্ত দাবানলে নিহত মানুষের সংখ্যা বেড়ে ১২ জনে পৌঁছেছে। পুড়ে ছাই হয়েছে শতাধিক বাড়ি-ঘর। এমন পরিস্থিতিতে দাবানল নিয়ন্ত্রণে আনতে জরুরিভিত্তিতে সেনাবাহিনী মাঠে নামাচ্ছে ভিক্টোরিয়া ও নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্য সরকার। খবর বিবিসির। গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকেই অস্ট্রেলিয়ায় দাবানল জ্বলছে। পুড়ে গেছে লাখ লাখ একর জমি। ধ্বংস হয়ে গেছে বহু স্থাপনা। বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন।

বাড়তে থাকা তাপমাত্রা ও জোর বাতাসের কারণে ২০০রও বেশি ছোট-বড় দাবানলে এখন দেশটির দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় অঙ্গরাজ্য নিউ সাউথ ওয়েলস ও ভিক্টোরিয়ার বিস্তৃত অঞ্চল পুড়ছে।ঝুঁকির মধ্যে আছে বেশ কয়েকটি শহরও। কর্তৃপক্ষ এরই মধ্যে দাবানলের পথে থাকা বাসিন্দাদের দ্রুত এলাকা ছেড়ে সমুদ্রসৈকতের কাছাকাছি আশ্রয় নিতে পরামর্শ দিয়েছে। শহরগুলোতে আটকে পড়া অনেকেই রক্তবর্ণা আগুন, ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন আকাশের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করেছেন। সমুদ্রসৈকতের কাছাকাছি থাকা একজনের ছবিতে অসংখ্য মানুষকে বালুর মধ্যে শুয়ে থাকতে দেখা গেছে; এদের মধ্যে কারও কারও মুখে গ্যাস মাস্ক দেখা যাচ্ছে। ‘রণক্ষেত্রর মতো লাগছে; এটা ভীতিকর’- বলছেন ওয়েব ওয়েসিস গেস্ট হাউসের স্বত্বাধিকারী ডেভিড জেফ্রি। ‘একেবারেই ভয়াবহ পরিস্থিতি’- বলেছেন স্থানীয় একটি কমিউনিটি রেডিওর উপস্থাপক ফ্রান্সেসকা উইন্টারসন। দাবানলে মালাকোট শহরে থাকা বাড়ি হারিয়ে উদ্বাস্তুর দিন কাটাচ্ছেন জেলে স্টিভ কেসমেন্ট।

‘আমরা আটকা পড়েছি। এ মুহূর্তে সবাই স্তম্ভিত, আমার সহকর্মীদের অনেকের পরিস্থিতিও আমার মতোই। এখন আমি একটি ট্রেলারে বসে শহরটি পুড়ে যেতে দেখছি; কোনো দরিদ্র লোকের বাসার গ্যাস বোতল বিস্ফোরণের শব্দ শুনছি, দেখছি আমাদের চারপাশের ধোঁয়ার আস্তরণ’- টেলিফোনে এমনটাই বলেছেন এ অস্ট্রেলিয়ান।মঙ্গলবারেই বহু মানুষ যারা বাড়িঘর ছেড়ে যেতে পারেননি তারা সবাই সমুদ্রসৈকতে দৌড়েছিলেন কারণ আগুনের হল্কা ধেয়ে আসছিল শহরের দিকে। ইস্ট গিপসল্যান্ড আর ভিক্টোরিয়াতেই ৪৩টি বাড়ি ধ্বংস হয়েছে আর ১৭৬টি শেষ হয়ে গেছে নিউ সাউথ ওয়েলসে। তবে অবস্থার সামান্য উন্নতি হয়েছে এবং ভিক্টোরিয়াতে বন্ধ করে দেয়া একটি সড়ক দু’ঘণ্টার জন্য খুলেও দেয়া হয়েছিল যাতে লোকজন সরে যেতে পারে। কিন্তু নতুন বছরের প্রথম প্রহরেই নিউ সাউথ ওয়েলসে অন্তত ১১২টি বাড়ি পুড়ে যেতে দেখা গেছে।

ভিক্টোরিয়াতে দাবানল সতর্কতার সঙ্গে একটি জরুরি অবস্থার সতর্কতাও ছিল। পরে সেটিকে কমিয়ে ‘ওয়াচ অ্যান্ড অ্যাক্ট’ সতর্কতা দেয়া হয়। এর আগে গত বুধবার নিউ সাউথ ওয়েলসের ফায়ার সার্ভিস বিভাগ জানিয়েছিল, এ বছর আগুনে সেখানকার মোট ৯১৬টি বাড়ি ধ্বংস হয়েছে। এছাড়া ক্ষতি হয়েছে আরও অন্তত ৩৬৩টি বাড়ির। নিউ সাউথ ওয়েলসের প্রধানমন্ত্রী গ্লাডিস বেরেজিকলিয়ান বলেছেন, আবহাওয়া সহনীয় হয়ে এলে সড়ক পরিষ্কার ও বিদ্যুৎ পুনরায় চালুর চেষ্টা করবেন কর্মীরা।

অবশেষে আশার আলো দেখলেন অস্ট্রেলিয়ার উপকূলবর্তী অঞ্চল মালাকুটার সমুদ্র সৈকতে আটকে পড়া পর্যটক এবং স্থানীয় মানুষেরা৷ তাঁদের ত্রাণ দিতে এবং উদ্ধার করতে এল অস্ট্রেলিয়ার নৌসেনার একটি জাহাজ৷ আটকে পড়া মানুষদের দেওয়া হল খাবার, পানীয় জল, ওষুধ৷ প্রাথমিক ভাবে উদ্ধার করা হয়েছে এক হাজার পর্যটককেও৷ গত ৩১ ডিসেম্বর নতুন বছর উদযাপন করতে ভিক্টোরিয়ার মালাকুটায় জড়ো হয়েছিলেন অসংখ্য পর্যটক৷ কিন্তু দাবানলের দাপটে আনন্দ খুব বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি৷ কিছুক্ষণের মধ্যেই দাবানল ঘিরে ফেলে গোটা উপকূল৷ স্থানীয় মানুষরা বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে আসেন সমুদ্র সৈকতে৷ প্রায় চারহাজার মানুষ আটকে পড়েন সেখানে৷ ৪৮ ঘণ্টা কেটে যাওয়ার পরেও উদ্ধারকর্মীরা উপকূলে পৌঁছতে পারেননি৷ তবে বার বার আটক পর্যটকএবং স্থানীয় মানুষদের আশ্বস্ত করেছে প্রশাসন৷ বুধবার প্রশাসন জানিয়ে দেয় বিমান এবং জলপথে উদ্ধারের চেষ্টা হবে৷ শেষ পর্যন্ত বৃহস্পতিবার তা সফল ভাবে করা সম্ভব হয়৷ উদ্ধারকারীরা জানিয়েছেন, বাকি লোকেদেরও এ ভাবেই উদ্ধার করে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যাওয়া হবে৷

প্রায় এক মাস হতে চলল দাউ দাউ করে জ্বলছে অস্ট্রেলিয়ার বনভূমি৷ উত্তর থেকে দক্ষিণ সর্বত্র এক অবস্থা৷ গৃহহারা বহু মানুষ৷ মৃত্যু হয়েছে অন্তত ৯ জনের৷ নিখোঁজ বহু৷ কবে এই আগুন নিয়ন্ত্রণে আসবে, কেউ বলতে পারছেন না৷## ২.১.২০২০

 

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.