--- বিজ্ঞাপন ---

ভিয়েতনামও হতে পারে বাংলাদেশের বড় বাজার

0

বাংলাদেশ ও ভিয়েতনামের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক অনেক দিনের পুরানো। দু’দেশ নিজ নিজ অর্থনীতিকে শক্তিশালী করার লক্ষে লড়ছে। তবে বাংলাদেশের বিশাল বাজার ভিয়েতনামেও রয়েছে। একে অপরের সাথে বন্ধুত্বর্পূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে উভয় দেশ নিজেদের অর্থনীতি চাঙ্গা করতে পারে। বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর সামিনা নাজ এ বিষয়টির উপর জোর দিয়ে কাজ করছে। বাংলাদেশী পণ্যের প্রদশর্নি থেকে শুরু করে বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের সাথে তিনি যোগাযোগ রেখে চলেছেন।

ভিয়েতনাম দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ক্ষুদ্র একটি কৃষিপ্রধান দেশ ছিল। আয়তন ১ লাখ ২৭ হাজার বর্গকিলোমিটার। এরই মধ্যে কৃষি প্রধান দেশ থেকে শিল্প প্রধান দেশ হিসেবে উন্নিত হতে যাচ্চে। ছোট এই দেশটিই এখন প্রযুক্তি খাতে ব্যাপক উন্নতি করেছে। বর্তমানে প্রায় ৬ কোটি ৫০ লাখ মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করে। ১৪ কোটি ৩৫ লাখ লোক ব্যবহার করে মোবাইল।

মুক্তবাণিজ্য চুক্তি করে বিশ্বে তাক লাগিয়েছে এই ভিয়েতনাম। ১৯৯৫ সালে আসিয়ানভুক্ত দেশ হয় ভিয়েতনাম। বিশেষ করে গত ২০০০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মুক্তবাণিজ্য চুক্তি করে ভিয়েতনাম সরকার।  আর ২০০৭ সালে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় (ডব্লিউটিও) যোগ দেয়। ভিয়েতনাম বিগত বিপ্লবের সময় থেকে শিক্ষা নিয়ে সামনের দিকে চরছে। চীন, জাপান, কোরিয়া ও ভারতের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রেখে এগিয়ে যাচ্ছে দেশটি। করোনার সময় প্রথমদিকে বিশ্বের নজর কাড়ে করোনা মুক্ত দেশ হিসেবে। করোনা আঘাত করলেও তার ছোয়া ব্যাপক হতে দেয় নি। মুক্ত বাজার অর্থনীতি তৈরির সঙ্গে সঙ্গে অভ্যন্তরীণ সংস্কারও চালিয়ে যায় ভিয়েতনাম সরকার। দেশটির বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ২০১৫ সালে দেশটির ডিজিটাল ইকোনমির বাজার ছিল ৩০০ কোটি ডলার। ২০১৯ সালে এসে তা ৯০০ কোটি ডলারে উন্নীত হয়। আর ২০২৫ সাল নাগাদ তা ৩ হাজার বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে বলে মনে করছে দেশটি।

সূত্র জানায়, বাংলাদেশ ও ভিয়েতনামের কূটনেতিক সম্পর্কের বয়স এখন ৪৮ বছর। ১৯৭৩ সালের ১১ ফেব্রুয়ারী দু’দেশ আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠা করে এ সম্পর্ক। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে তৎকালিন দক্ষিণ ভিয়েতনামের বিপ্লবি সরকারের সাথে চমৎকার সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় হয়। স্বাধীন বাংলাদেশ তখন থেকে ভিয়েতনামের পাশে দাড়ায়। ১৯৭৩ সালে ভিয়েতনামী কূটনৈতিকের উপস্থিতিকে স্বাগত জানায় বাংলাদেশ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে গিয়ে সে সময় বঙ্গবন্ধু ভিয়েতনামের সাধারন মানুষের পাশে দাড়ায়। ভিয়েতনামে নিরীহ মানুষের উপর বোমা হামলার বিরোধীতাসহ ভিয়েতনাম বিপ্লবের সমর্থনে বাংলাদেশেও শুরু হয় আন্দোলন। বাংলাদেশ ও ভিয়েতনামের রাজনৈতিক সংগ্রাম এবং সাংস্কৃতিক ইতিহাসের অনেক মিল রয়েছে। বাংলাদেশের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং ভিয়েতনামের দুর্দান্ত নেতা হো চি মিন, দুজনেই নিজ নিজ দেশের মুক্তি সংগ্রামের মাঝ দিয়ে একটি সুন্দর দেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন। দেশের মানুষ এবং একটি সুন্দর দেশের জন্য দুজনই তাদের পুরো জীবন উত্সর্গ করেন।  তাই উভয় দেশের জনগনের মূল্যবোধ এবং সংস্কৃতি এতই বন্ধুত্বপূর্ণ ।

ভিয়েতনাম অত্যন্ত সাহসিকতার সাথে কোভিড-১৯ মোকাবেলা করে। বাংলাদেশ দূতাবাস পুরো সময় জুড়ে  ভিয়েতনামে কোভিড -১৯ মোকাবলোয় সাধারন মানুষের পাশে থেকে কাজ করেছে। এখনও করে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ও ভিয়েতনামের সম্পর্ককে আরও সুসংহত করতে কাজ করে যাচ্ছে  হ্যানয়ে বাংলাদেশ দূতাবাস। বিশ্বব্যাপী কোভিড -১৯ মহামারী সত্ত্বেও  উভয় দেশের বাণিজ্য প্রবাহ বাড়ছে। ক্রমবর্ধমান চাহিদার সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশ ও ভিয়েতনাম স্ব স্ব দেশের অর্থনীতিকে মজবুত করার লক্ষে ভুমিকা রেখে চলেছে। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গত এগারো মাসে ভিয়েতনামে বাংলাদেশ হতে রফতানি হয়েছে সাড়ে ৭ কোটিরও বেশি ডলারের পণ্য। বাংলাদেশ ভিয়েতনামে রফতানি করে ফিশারি পণ্য, তামাকজাতীয় পদার্থ, রাসায়নিক, ওষুধজাত পণ্য, সুতা, কাপড়, টেক্সটাইল, চামড়া এবং পাদুকা সামগ্রী এবং সহায়ক, লৌহঘটিত বর্জ্য, স্ক্র্যাপ, মেশিন সরঞ্জাম ও নানা যন্ত্রপাতি। রয়েছে অন্যান্য পণ্যও। বাংলাদেশ এবং ভিয়েতনামের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি সাধিত হয়েছে।ভিয়েতনামের সান হংক গ্রুপের চেয়ারম্যান ২০২০ সালে বাংলাদেশ সফর করেন। তিনি বাংলাদেশ থেকে বিপুল পরিমাণ পাট, কাপড় ও তামাক আমদানির আগ্রহ প্রকাশ করেন।

ভিয়েতনামে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে আছেন সামিনা নাজ। তিনি অনেক সীমাবদ্ধতা সত্বেও ভিয়েতনামে বাংলাদেশে ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসারে ভূমিকা রেখে চলেছেন। ভিয়েতনাম চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি এবং অন্যান্য ব্যবসায়ীদের সাথে এরই মধ্যে তারঁ সাথে বৈঠক হয়েছে। তিনি বাংলাদেশে উন্নত দেশের বিনিয়োগের সাথে সাথে ভিয়েতনামের ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগের আহবান জানান। ভিয়েতনামের গণমাধ্যমে সামিনা নাজের বিভিন্ন উদ্যোগ ও সাফল্যের কথাও প্রচারিত হয়েছে।

এ বিষয়ে ভিয়েতনামের রাস্ট্রদূত সামিনা নাজ জানান, ভিয়েতনামের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক অনেক পুরানো। ভিয়েতনামের ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগের ব্যাপারে আগ্রহী।  বাংলাদেশ দূতাবাস ২০২০ সালের ৬ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক মেলায় অংশ নেয়। ভিয়েতনামের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আয়োজিত এ মেলায় বাংলাদেশের সিরামিক, প্লাস্টিক পণ্য,  রেডিমেড পোশাক, জামদানি শাড়ি, নকশী কাথা, বাংলাদেশি রন্ধনশিল্পের বিভিন্ন পণ্য ভিয়েতনামের ব্যবসায়ী ও জনসাধারন আগ্রহ করে দেখেন। বাংলাদেশী পণ্য প্রদর্শণের কারনে হ্যানয় দূতাবাস প্রশংসা পত্রও লাভ করে বলে তিনি মত ব্যক্ত করেন।

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.