--- বিজ্ঞাপন ---

চীনের সামরিক উত্থান কী আসন্ন নাকি মরীচিকা ?

0

 সিরাজুর রহমান, বিশেষ প্রতিনিধি#
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা বিভাগের দেয়া তথ্যমতে, বর্তমানে সারা বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে দ্রুত গতিতে নিউক্লিয়ার অস্ত্রের পাশাপাশি বিভিন্ন রেঞ্জ ও সক্ষমতার মিসাইল বৃদ্ধি করে যাচ্ছে চীন। তাদের দেয়া হিসেব অনুযায়ী চলতি ২০২৩ সালে চীনের অস্ত্র ভান্ডারে আমুনামিক ৫০০টি বিভিন্ন ক্যাটাগরির নিউক্লিয়ারব এন্ড থার্মোনিউক্লিয়ার অস্ত্র মজুত রয়েছে। অথচ গত ২০১৮ সালে আন্তর্জাতিক পর্যায়ের একাধিক থিংক ট্যাংকের গবেষণা মতে, চীনের অস্ত্র ভান্ডারে নিউক্লিয়ার অস্ত্রের মজুত ছিল হয়ত ৩১০টি।
আমেরিকা মনে করে, বর্তমানে চীনের নিউক্লিয়ার ওয়েপন্স ক্যাপাবিলিটি রাশিয়া কিংবা আমেরিকা অপেক্ষা প্রায় ১০ গুণ কম হলেও চীন যেভাবে পরিকল্পনা মাফিক নিউক্লিয়ার অস্ত্র আধুনিকায়নে অর্থ ব্যয় করে যাচ্ছে তাতে করে আগামী ২০৩০ সালের দিকে দেশটির স্ট্যাটিজিক নিউক্লিয়ার এন্ড মিসাইল ফোর্সের হাতে প্রায় ১ হাজারের অধিক নিউক্লিয়ার অস্ত্র মজুত হয়ে যেতে পারে।
আসলে চীনের সামরিক বাহিনী বর্তমানে এক রকম নীরবে নিউক্লিয়ার অস্ত্র বৃদ্ধি করার পাশাপাশি কৌশলগত ও প্রচলতি সক্ষমতার বিভিন্ন সিরিজের মিসাইল তৈরি করছে। মার্কিন হিসাব অনুযায়ী, এ মুহূর্তে পিপলস লিবারেশন আর্মি রকেট ফোর্সে (পিএলএআরএফ) এর অধীনে প্রায় ৩,১৫০টি বিভিন্ন রেঞ্জের ও সিরিজের মিসাইলের বিশাল মজুত রয়েছে। যদিও তার মধ্যে হয়ত কনভেনশনাল ওয়ারহেড সমৃদ্ধ আনুমানিক ২,৫০০টি ক্রুজ এন্ড ব্যালেস্টিক মিসাইল এবং নিউক্লিয়ার ওয়ারহেড ক্যাপবল লং এন্ড ইন্টারমিডিয়েট রেঞ্জের স্ট্যাটিজিক মিসাইল রয়েছে প্রায় ৬৫০টির কাছাকাছি।
তাছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির সামরিক প্রযুক্তিবিদেরা ফ্রাকশনাল অরবিটাল বোম্বাডমেন্ট (এফওবি) টেকনোলজি ব্যবহার করে হাইপারসনিক গ্লাইড ভেহিক্যাল (এইচজিভি) বেশকিছু সফল পরীক্ষা সম্পন্ন করেছে এবং এর ম্যাসিভ প্রডাকশন শুরু করতে যাচ্ছে। যদিও হাইপারসনিক টেকনোলোজির মিসাইলের প্রথম সফল ব্যবহারকারী দেশ হচ্ছে রাশিয়া, আর এই হাইপারসনিক মিসাইল প্রতিযোগিতায় আমেরিকা কিন্তু নিশ্চিতভাবে রাশিয়া ও চীনের অনেক পেছনে পরে রয়েছে।
তবে এটা ঠিক যে, চীনের তৈরি বিভিন্ন সিরিজের মিসাইলের প্রযুক্তিগত মান ও সক্ষমতা অনেকটাই প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যায়। তবে চীন কিন্তু তার এই প্রতিকূলতা এড়াতে একাধারে বিপুল সংখ্যক মিসাইল সার্ভিসে আনতে কাজ করে যাচ্ছে। যদিও এক্ষেত্রে হয়ত পরিকল্পনা মাফিক প্রপাগান্ডা চালিয়ে যেতে পারে দেশটি। মনে করা হয় চীনের একেবারে নতুন প্রজন্মের সর্বোচ্চ ১২,০০০-১৪,০০০ কিলোমিটার পাল্লার ডিএফ-৪১ (আইসিবিএম) মিসাইল রয়েছে আনুমানিক ৩০টি। যা কিনা একাধারে ১০টি করে নিতুন প্রজন্মের (এমাইআরভি) নিউক ওয়ারহেড বহন করতে সক্ষম। তাছাড়া লং রেঞ্জের ৮,০০০ কিলোমিটার পাল্লার ডিএফ-৩১বি ৪০টি, ডিএফ-৩১এ ৬০টি, ডিএফ-৩১ থাকতে পারে ১৫টি থেকে ২০টি পর্যন্ত থাকতে পারে।
তাছাড়া চীনের বৈশ্বিক পর্যায়ের কোন ইন্টারমিডিয়েট রেঞ্জের ব্যালেস্টিক মিসাইলের চুক্তির বাধ্য বাধকতা না থাকায় তারা তাদের ইচ্ছে মতো ইন্টারমিডিয়েট রেঞ্জের নিউক ক্যাপাবল ব্যালেস্টিক এণ্ড ক্রুজ মিসাইলের সুবিশাল সম্ভার গড়ে তুলছে। চীনের ইন্টারমিডিয়েট রেঞ্জের মিসাইলের তালিকায় প্রথমেই নাম আসে ডিএফ-২৬। যার রেঞ্জ কিনা ৩,৫০০ কিলোমিটার পর্যন্ত এবং এই জাতীয় মিসাইল রয়েছে আনুমানিক ৫০ থেকে ৬০টি। অন্যদিকে মিডিয়াম রেঞ্জের কৌশলগত ব্যালেস্টিক মিসাইলের মধ্য ডিএফ-২১ডি রয়েছে ৫৫টি, ডিএফ-২১সি ১০০টি, ডিএফ-২১এ ২০০টি এবং ডিএফ-১৬ এর সংখ্যা প্রায় ৭০টি। তার পাশাপাশি ডিএফ-১৫ সিরিজের মিসাইল রয়েছে প্রায় এক হাজারের অধিক।
আবার বিশ্বমানের এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম ডিজাইন তৈরির সক্ষমতার দুর্বলতা সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বের সামনে ফুটে উঠেছে। বিশেষ করে চীন নিজেই বিভিন্ন সিরিজের লং এন্ড মিডিয়াম রেঞ্জের নিজস্ব প্রযুক্তির এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম তৈরি করলেও কয়েক বছর আগেই রাশিয়া থেকে বিপুল সংখ্যক এস-৪০০ এয়ার ডিফেন্স সংগ্রহ করে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে মোতায়েন করে রেখেছে। তাছাড়া চীন নিজস্ব প্রযুক্তির শত শত যুদ্ধবিমান ও কমব্যাট ড্রোন তৈরি করে সার্ভিসে আনলেও বাস্তবে এর প্রযুক্তিগত সক্ষমতা ও মান নিয়ে সুস্পষ্টভাবে কিছু বলার কোন সুযোগ থাকে না।
তবে উপরেরে উল্লিখিত সকল তথ্য উপাত্ত কিন্তু যুক্তি সংগত কারণেই অনেকটাই কম বা বেশি হতে পারে। যেহেতু চীনের তরফে তাদের মিডিয়ার মাধ্যমে মিসাইল সক্ষমতা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ও ইউটিউবে অসংখ্য ভিডিও আপলোড করা হয়ে থাকে। তার একটি বড় অংশই নিজেকে বিশ্বের সামনে অতি মাত্রায় প্রযুক্তি সমৃদ্ধ ও সামরিক সক্ষমতা সম্পন্ন দেশ হিসেবে হয়তবা প্রচার করে থাকতে পারে। তবে এটা ঠিক যে, চীনের সংখ্যাগত ডিফেন্স সিস্টেমের আধিক্যের বিচারে ভারত কিন্তু এখনো পর্যন্ত চীনকে সরাসরি মোকাবেলা করার ক্ষেত্রে অনেকটাই ঝুঁকির মধ্যেই রয়ে গেছে। যদিও আমার নিজস্ব ধারণা হয়ত সঠিক নাও হতে পারে।##

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.