--- বিজ্ঞাপন ---

চট্টগ্রাম জলাবদ্ধতা নিরসনে‘মেগা প্রকল্প’

0

মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম:: আগামী বর্ষা মৌসুমে চট্টগ্রামবাসী জলাবদ্ধতার কবল থেকে বহুলাংশে মুক্তি পাবেন । এ আশাবাদ ৫,৬১৬ কোটি ৪৯ লাখ ৯০ হাজার টাকা ব্যয়ে বর্তমান সরকারের নেয়া ‘চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুন:খনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন শীর্ষক’ প্রকল্পের কর্মকর্তাদের। চট্টগ্রামে বৃহৎ এ মেগা প্রকল্পটিকে স্থানীয় রাজনীতিবিদরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া চট্টগ্রামবাসীকে দীর্ঘদিনের জলাবদ্ধতা লাঘবের উপহার হিসেবে দেখছেন। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)’র তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে।
চট্টগ্রামের এই গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার ব্রিগেড খালের উচ্ছেদ কার্যক্রম, ভরাট মাটি অপসারণ, রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ যেভাবে দ্রæততার সাথে করে যাচ্ছেন এর সাথে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) বাকী ভূমি অধিগ্রহণ কাজটি সময়মত সম্পন্ন করতে পারলে চট্টগ্রামবাসী আগামী বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতার হাত থেকে দ্রুত মুক্তি পাবেন।
প্রকল্পটির বাস্তবায়নের দায়িত্বে নিয়োজিত সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে প্রকল্প পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্ণেল শাহ আলী প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, ‘সেনাবাহিনীর হাতে নেয়া এ প্রকল্পের সবক’টি কাজ দ্রততার সাথে এগিয়ে যাচ্ছে। গত জুলাই থেকে শুরু হওয়া খালের উপর থেকে উচ্ছেদ কার্যক্রমের আওতায় প্রথম ধাপে ৩৬ টি খালকে চিহ্ণিত করেছিলাম। ইতিমধ্যেই আমরা গত ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত ৩৩টি খাল বিএস দাগ অনুযায়ী ক্লিয়ার করা হয়েছে। বাকী তিনটি খাল যথাক্রমে জামাল খান, বদরখালী ও মীর্জা খালের (আংশিক) কাজও অচিরেই শেষ হবে।’
লে. কর্ণেল শাহ আলী বলেন, ‘বর্তমানে ৩০টি খালের রিটেইনিং ওয়ালের কাজ চলছে। খালের উপর ১২ থেকে ২২ মিটার দীর্ঘ ২৮টি ব্রীজ ও কালভার্টের কাজও সমানভাবে চলছে। সেনাবাহিনীর দায়িত্বে নেয়া ৫টি স্লইচগেট রেগ্যুলেটরের মধ্যে অন্তত: ৪টি ( টেকপাড়া, মরিয়মবিবি, কলাবাগিচা, ফিরিঙ্গিবাজার) আগামী বর্ষার আগেই শেষ হবে আশা করছি। বাকী রেগ্যুলেটরটি মহেষখালের কাজও এগিয়ে চলছে।’
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, বাকী স্লইচ গেটের কাজগুলো যেমন, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড এর হাতে দেয়া ২৩টির কাজে এখনও হাত দেয়া হয়নি। অপরদিকে সিডিএ’র হাতে নেয়া ১২টি  স্লইচগেট রেগুলেটর এর কাজও চলছে ঢিলেঢালা। সময়মত এ কাজগুলো শেষ করতে না পারলে প্রকল্পের বেধে দেয়া নির্দ্ধারিত সময়ে বিলম্বত হওয়ার আশংকা রয়েছে। এর ফলে নগরবাসীর ভোগান্তিও বাড়বে।
সিডিএ’র প্রকল্প পরিচালক আহমদ মাইনুদ্দিন বাংলাদেশের সংবাদকে মঙ্গলবার বলেন, ‘খালগুলোর আশেপাশে ভূমি অধিগ্রহণের জন্য ‘কনসালট্যান্ট ফার্ম ‘সিইজিআইএস’ এর দেয়া ডিজাইন, ড্রইং, ভুমির বিএস দাগ আগামী সপ্তাহে সম্পন্ন হবে আশা করছি। এরপরই ভূমি অধিগ্রহণের কাজে হাত দেয়া হবে।’
সিডিএ সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রামবাসীর জলাবদ্ধতার এ দুর্ভোগের স্থায়ী সমাধানের লক্ষ্যে ‘চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুন:খনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন শীর্ষক’ ৫ হাজার ৬ শত ১৬ কোটি ৪৯ লক্ষ ৯০ হাজার টাকার এ মেগা প্রকল্পটি হাতে নেয়া হয়। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)’র তত্বাবধানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। পাঁচ হাজার কোটি টাকার এ মেগা প্রকল্পটিকে রাজনীতিবিদরা বর্তমান সরকার কর্তৃক চট্টগ্রামবাসীকে দেয়া উপহার হিসেবে দেখছেন। সিডিএ সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনে ৫ হাজার ৬১৬ কোটি ৪৯ লাখ ৯০ হাজার টাকার একটি প্রকল্প ২০১৭ সালে একনেকে পাস হয়। সিডিএ’র তত্ত¡াবধানে সেনাবাহিনী মেগা এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্পের মেয়াদকাল ধরা হয় ২০১৭ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২০ সালের ৩০ জুন। তবে বৃহৎ এই গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পটি বেধে দেয়া সময়ে সম্পন্ন করা হয়ত সম্ভবপর হয়ে উঠবেনা সেক্ষেত্রে সময়সীমা আরও বৃদ্ধি করা হবে বলেও প্রকল্পের সাথে সংশ্লিষ্টরা ধারণা করছেন।
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম নগরের জলাবদ্ধতার অন্যতম এলাকা ষোলোশহরের দুই নম্বর গেট এলাকা। একটু ভারী বৃষ্টি হলেই পানিতে তলিয়ে যায় এ এলাকা। এই এলাকার ওপর দিয়ে যাওয়া নগরের প্রধান সড়ক সিডিএ এ্যাভিনিউ ডুবে থাকে পানিতে। যানজট আর জলাবদ্ধতায় চরম নাকাল হতে হয় নগরবাসীকে। এই সমস্যা সমাধানে পানিনিষ্কাশনের জন্য নতুন নালা নির্মাণ করা হচ্ছে।
সিডিএ সূত্র জানায়, দুই নম্বর গেটের কবরস্থানের পাশ থেকে চশমা খালের সঙ্গে এই নালা যুক্ত করা হবে। ৭৩ মিটার দীর্ঘ ও ৩ দশমিক ৮ মিটার প্রশ্বস্ত নালার নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে। নালার গভীরতা হবে ৩ দশমিক ৮ মিটার। আর এফ এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নালা নির্মাণের কাজ করছে।
জানা গেছে, দুই নম্বর গেটের কবরস্থানের প্রান্ত থেকে চশমা খালে পানি যাওয়ার দেড় শ ফুট দীর্ঘ বক্স কালভার্ট দীর্ঘদিন ধরে অকার্যকর রয়েছে। ফলে সিডিএ অ্যাভিনিউ, সিঅ্যান্ডবি কলোনি, জাকির হোসেন বাই লেন, আল ফালাহ গলির পানি দুই নম্বর গেট মোড়ে এসে উপচে পড়ে। পানিনিষ্কাশনের পথ না থাকায় এই অবস্থার সৃষ্টি হয়। তখন ঘণ্টার পর ঘণ্টা পানি জমে থাকে মোড়টিতে। এই এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে আরও একটি সংযোগ নালা নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ চলছে। চশমা খালের মেহমান কমিউনিটি সেন্টারের সামনে থেকে একটি নালা মির্জা খালের সঙ্গে যুক্ত করা হবে। সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের পর কীভাবে এ নালা নির্মাণ করা হবে তা চূড়ান্ত হবে। ##৩০.১০.১৯

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.