--- বিজ্ঞাপন ---

পাকিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট পারভেজ মোশাররফের মৃত্যুদন্ড বাতিল , মোশাররফ এখন মুক্ত

0

পাকিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট পারভেজ মোশাররফের মৃত্যুদন্ড বাতিল করল আদালত। সরকার পক্ষের আইনজীবী ইশতিয়াক এ খান জানিয়ে দেন, মোশাররফ এখন মুক্ত।পাকিস্তানের আদালত ইতিপূর্বে বিশেষ আদালতের মোশাররফকে দেয়া মৃত্যুদন্ড বাতিল ঘোষণা করেছে। দেশটির লাহোর হাইকোর্ট সোমবার (১৩ জানুয়ারী) ঐ আগের রায়টিকে অসাংবিধানিক বলেও আখ্যা দিয়েছে।বিচারপতি সাইয়েদ মাজাহার আলী আকবর নকভীর নেতৃত্বে তিন সদস্যের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ এ আদেশ  দেন।এই রায়ের ফলে সাবেক প্রেসিডেন্ট পারভেজ মোশাররফ এখন মুক্ত।গত ১৭ ডিসেম্বর ২০১৯ ইং তারিখে  আগের বিশেষ আদালত মোশাররফকে ২০১৩ সালে দায়ের করা রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় মৃত্যুদন্ড দেয়। ঐ রায়ের বিরুদ্ধে পাকিস্তান সরকারের অতিরিক্ত এর্টনি জেনারেল  ইশতিয়াক এ খান সরকারের পক্ষ থেকে ঐ রায়ের বিরুদ্ধে আপত্তি জানিয়ে আপীল করেন।পাকিস্তানের দৈনিক এক্সপ্রেস ট্রিবিউন, ডন পত্রিকা এ খবর দেয়।

পত্রিকান্তরে জানা গেছে, রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধে গত ১৭ ডিসেম্বর মোশারফকে ফাঁসির সাজা শোনায় ওই বিশেষ ট্রাইব্যুনাল আদালত। সেই রায়ের বিরুদ্ধে ২৭ ডিসেম্বর লাহোর হাইকোর্টে ৮৬ পাতার আবেদন জানিয়েছিলেন  প্রাক্তন প্রেসিডেন্টের আইনজীবী আজহার সিদ্দিকী। আবেদনে তিনি বলেছিলেন, তাঁর মক্কেল মোশাররফ পুরোপুরি নির্দোষ। তাঁকে ফাঁসির সাজা শুনিয়ে ব্যক্তিগত প্রতিহিংসা চরিতার্থ করেছে তিন বিচারপতির ট্রাইব্যুনাল। এই রায়ের বিরুদ্ধে শুনানির জন্য একটি সাংবিধানিক বেঞ্চ গঠনের দাবিও জানিয়েছিলেন তিনি। জবাবে লাহোর হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার স্পষ্ট জানান, জরুরি ভিত্তিতে শুনানির জন্য পুরো বেঞ্চ গঠন করা যাবে না। পরে অবশ্য লাহোর হাইকোর্ট বলে, তিন সদস্যের সাধারণ বেঞ্চে ৯ জানুয়ারি হবে শুনানি। সেখানে ফাঁসির সাজা দেওয়া বিচারপতিদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যক্তিগত আক্রমণ বা নালিশ করতে পারবেন না মোশারফের আইনজীবী। ফলে ফের ধাক্কা খান মোশাররফ। তবে সোমবার সর্বসম্মতভাবে লাহোরের একটি হাইকোর্ট জানিয়ে দিল, মোশাররফের রায় দেওয়ার জন্য গঠিত আদালত ছিল অসাংবিধানিক। রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলাও আইন মেনে দাখিল করা হয়নি। এমনকি আইনজীবীদের দলও সম্পূর্ণ বেআইনি। সরকার পক্ষের আইনজীবী ইশতিয়াক এ খান জানিয়ে দেন, মোশাররফ এখন মুক্ত। ফেডারেল ক্যাবিনেটের সম্মতিতে মোশাররফের বিরুদ্ধে নতুন করে মামলা দায়ের করা যেতে পারে। তিনি পাকিস্তানের প্রথম সামরিক শাসক যাকে সংবিধান স্থগিত করবার জন্য বিচারের মুখোমুখি হতে হলো।

মামলার বিস্তারিত

২০০৭ সালের নভেম্বর মাসে জেনারেল মোশাররফ সংবিধান স্থগিত করে জরুরী আইন জারি করেন। এই ঘটনায় পাকিস্তানে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। ইমপিচমেন্ট এড়াতে ২০০৮ সালে পদত্যাগ করেন জেনারেল মোশাররফ। ২০১৩ সালে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন নওয়াজ শরীফ, যাকে ১৯৯৯ সালে একটি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করেছিলেন জেনারেল মোশাররফ। পুনরায় ক্ষমতায় এসে ২০১৪ সালের মার্চ মাসে জেনারেল মোশাররফের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা চালু করেন নওয়াজ শরীফ। জেনারেল মোশাররফ যুক্তি দেন, মামলাটি ছিল রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত এবং ২০০৭ সালে তিনি যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তা সরকার এবং মন্ত্রীসভা অনুমোদন করেছিল। কিন্তু তার এই যুক্তি নাকচ করে দেয় আদালত। পাকিস্তানের আইন অনুযায়ী, উচ্চমাত্রার রাষ্ট্রদ্রোহে (হাই ট্রিজন) অভিযুক্ত ব্যক্তিকে মৃত্যুদন্ড দেয়া যায়। ২০১৬ সাল থেকে দুবাইয়ে বাস করছেন জেনারেল মোশাররফ এবং বারবার তলব করা স্বত্বেও তিনি আদালতে হাজির হননি।

জেনারেল মোশাররফের ক্যারিয়ার

১৯৯৮ সালে তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রধান নিযুক্ত হন।১৯৯৯ সালের মে মাসের কারগিল যুদ্ধে সেনাবাহিনীর জড়িত থাকা নিয়ে তখনকার প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফের সাথে সম্পর্কে ফাটল ধরে জেনারেল মোশাররফের।এর ধারাবাহিকতায় ওই বছরই এক অভ্যুত্থান করে ক্ষমতায় আরোহণ করেন জেনারেল মোশাররফ।২০০৮ সাল পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট ছিলেন তিনি এবং এই সময়ের মধ্যে বহুবার আততায়ীর হামলা থেকে রক্ষা পেয়েছেন জেনারেল মোশাররফ।

‘সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে’ সমর্থন ও ভূমিকা পালনের জন্য আন্তর্জাতিকভাবে সুপরিচিত ছিলেন জেনারেল মোশাররফ।এসময় তাকে উৎখাতের বহু প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। যুক্তরাষ্ট্রের ‘সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে’ সমর্থন ও ভূমিকা পালনের জন্য আন্তর্জাতিকভাবে সুপরিচিত ছিলেন তিনি।যদিও একারণে স্বদেশে ব্যাপক বিরোধিতার শিকার হতে হয় তাকে।রাষ্ট্রপতির পদ ত্যাগ করার পর ২০০৮ সালে দেশ ছাড়েন তিনি, কিন্তু ২০১৩ সালের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করার জন্য আবারো ফিরে আসেন।

 

কিন্তু আদালতের নিষেধাজ্ঞার কারণে তিনি নির্বাচনে অংশ নিতে ব্যর্থ হন। রাষ্ট্রদ্রোহের মামলার শুনানিতে মাত্র দুবার হাজিরা দিয়েছিলেন তিনি। এর আগে তার সময় কেটেছে হয় সেনাবাহিনীর একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নয়তো ইসলামাবাদের একটি খামারে। পরবর্তীতে ২০১৪ সালের এপ্রিলে তিনি করাচিতে চলে আসেন। সেখানে দুবছর থাকার পর তিনি আবার দেশত্যাগ করেন।উল্লেখ্য, ১৯৯৯ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত পাকিস্তানের ক্ষমতায় ছিলেন ভারতের দিল্লীতে জন্মগ্রহণকারী সাবেক প্রেসিডেন্ট পারভেজ মোশাররফ। ## ১৩.০১.২০২০ ইং।

 

 

 

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.