তুরস্কের নিজস্ব প্রযুক্তির তৈরি এডভান্স টি-১২৯ এ্যাটাক কমব্যাট হেলিকপ্টার সাম্প্রতিক সময়ে পাকিস্তানের তপ্ত মরুভূমির ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপমাত্রায় এবং ১৪ হাজার ফিট উচ্চতায় পরীক্ষামূলক উড্ডয়ন করে দেখা হয়েছে। এই রুক্ষ ও ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় টি-১২৯ কমব্যাট হেলিকপ্টার সফল ও সাবলীলভাবে কাজ করেছে। তাছাড়া চপারটি ১৪ হাজার ফিট উচ্চতায় কোন রকম সমস্যার সম্মুখীন না হয়েই পরীক্ষামূলক টেস্ট ফ্লাইট মিশন সমাপ্ত করে।
যদিও গত ২০২১ সালের শেষের দিকে মার্কিন প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞার ফলে পাকিস্তানে ১.৫ বিলিয়ন ডলারের ৩০টি তুর্কী টি-১২৯ কমব্যাট হেলিকপ্টার রপ্তানির প্রক্রিয়া ভেস্তে চলে যায়। আমেরিকা সাফ জানিয়ে দেয় যে, চুক্তি অনুযায়ী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি অত্যাধুনিক টি-৮০০-৪এ টার্বোশেফট ইঞ্জিন সজ্জিত টি-১২৯ কমব্যাট চপার তাদের অনুমোদন বা লাইসেন্স ছাড়া পাকিস্তানের কাছে সরবরাহ করা যাবে না। তবে গত ২০২১ সালের মে মাসে মার্কিন প্রশাসনের তরফে ফিলিপাইনের কাছে মার্কিন ইঞ্জিন সজ্জিত ৬টি এডভান্স টি-১২৯ কমব্যাট হেলিকপ্টার রপ্তানির বিশেষ লাইসেন্স দেয় তুরস্ককে।
তুরস্ক এখন খুব সম্ভবত তার নিজস্ব প্রযুক্তির একেবারে নতুন তৈরি ১,৪০০ হর্স পাওয়ারের টিইআই টিএস-১৪০০ টার্বোশেফট হেলিকপ্টার ইঞ্জিন ইনস্টল করে টি-১২৯ এ্যাটাক কমব্যাট হেলিকপ্টার সরবরাহের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে পাকিস্তানের সাথে। এদিকে আমেরিকার আশাঙ্কা পাকিস্তানের কাছে তাদের ইঞ্জিন সজ্জিত টি-১২৯ কমব্যাট হেলিকপ্টার দেয়া হলে তা অদূর ভবিষ্যতে এর প্রযুক্তি চীনের হাতে চলে যেতে পারে।
তুরস্কের টার্কিস এ্যারোস্পেস ইন্ডাস্ট্রিক (টিএআই) এর নিজস্ব প্রযুক্তির তৈরি টি-১২৯ ট্যাক্টিক্যাল রিকর্নিসেন্স এণ্ড এ্যাটাক হেলিকপ্টারটি ইতালিয়ান আগস্টা-১২৯ এট্যাক হেলিকপ্টার এর উপর ভিত্তি করে ডিজাইন ও তৈরি করা হলেও এটিকে আরো অত্যাধুনিক অস্ত্র, প্রযুক্তি ও নতুন প্রজন্মের এভিয়নিক্স সিস্টেম দ্বারা সজ্জিত করা হয়েছে। এটি সর্ব প্রথম আকাশে ওড়ে ২৪শে সেপ্টেম্বর ২০০৯ সালে এবং তার পাশাপাশি তুরস্কের সামরিক বাহিনীতে প্রথম সার্ভিসে আসে ২০১৪ সালে। টার্কিস অ্যারোস্পেস ইন্ডাস্ট্রিজ (টিএআই) ২০০৯ সাল থেকে ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত মোট ৭৬টি টি-১২৯ চপার তৈরি করেছে এবং তুরস্কের সামরিক বাহিনীর হাতে মোট ৬৫টি এই জাতীয় হাইলী এভভান্স এ্যাটাক চপার তুলে দিয়েছে।
দুইজন ক্রু দ্বারা চালিত এই এ্যাটাক হেলিকপ্টারের দৈর্ঘ্য ১৪.৫৪ মিটার এবং উচ্চতা ৩.৪ মিটার। এর ম্যাক্সিমাম টেকঅফ ওয়েট ৫,০৫৬ কেজি এবং ম্যাক্সিমাম স্পীড প্রতি ঘন্টায় ২৮১ কিলোমিটার। এর রেঞ্জ ৫৩৭ কিলোমিটার এবং ফেরিরেঞ্জ ১,০০০ কিলোমিটার। এটি যে কোন প্রতিকূল আবহাওয়ায় ও পরিবেশে আকাশে সর্বোচ্চ ১৫ হাজার ফিট উচ্চতায় উঠতে পারে এবং এটি একটানা ৩ ঘন্টা পর্যন্ত আকাশে কমব্যাট মিশন পরিচালনা করতে সক্ষম। তাছাড়া আকাশে সাবলীলভাবে উড্ডয়ন করার জন্য এই হেলিকপ্টারে ২টি অত্যন্ত শক্তিশালী হানিওয়েল টি-৮০০-৪এ টার্বোশেফট মাউন্টেন্ড ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয়েছে।
এর প্রধান অস্ত্র হিসেবে একটি ২০ এমএম রোটারি ক্যানন ইনস্টলেশন করা হয়েছে। যা কিনা তিনটি ব্যারেলে মোট ৫০০ রাউন্ড গুলি ফায়ার করতে পারে। তাছাড়া এর ৪টি হার্ড পয়েন্টে সর্বোচ্চ ১,২০০ কেজি পর্যন্ত বিভিন্ন ধরণের আনগাইডেড রকেট ও মিসাইল বহণ করতে পারে। এটি ৪টি পডে মোট ৭৬টি আনগাইডেড রকেট বহণ করার পাশাপাশি ৮টি গাইডেড এন্টি ট্যাংক মিসাইল, ১৬টি রকেটসানের তৈরি সিরিট গাইডেড মিসাইল এবং ৮টি সর্ট রেঞ্জের এয়ার টু এয়ার স্টিংগার মিসাইল বহণ করতে পারে। তাছাড়া এটি প্রতি ২৯৪ কেজি ওজনের ২টি ড্রপ ট্যাংক বহণ করে।
এই এ্যাটাক হেলিকপ্টারের এডভান্স এভিয়নিক্স সিস্টেম হিসেবে তার্কিস এ্যাসেলসান কোম্পানির তৈরি এএসইএলএফএলআইআর-৩০০টি ইলেক্ট্রো অপটিক্যাল এফএলআইআর সিস্টেম ইন্সটল করা হয়েছে। তাছাড়া কাউন্টারমেজারস হিসেবে এটিতে কাউন্টারমেজার ডিসপেন্সিং সিস্টেম, একটি মিসাইল ওয়ার্নিং সিস্টেম, একটি লেজার ওয়ার্নিং সিস্টেম, একটি রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি জ্যামার, একটি রাডার ওয়ার্নিং রিসিভার (আরডাব্লিউআর), ইনফ্রা-রেড কাউন্টারমেজারসবং একটি সুইট কন্ট্রোল প্রোসেসিং সিস্টেম (এসসিপিএস) ইনস্টল করা হয়েছে। তাছাড়া সর্বোশেষ সংযোজন হিসাবে এতে ১২ কিলোমিটার রেঞ্জের মিলডার মিলিমিটার ওয়েব রাডার ব্যবহার করা হচ্ছে।
বর্তমানে তুরস্ক টি-১২৯ ট্যাকটিক্যাল কমব্যাট হেলকপ্টারের এর একমাত্র ব্যবহারকারী দেশ হলেও আল্প কিছু দিনের মধ্যেই দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশ ফিলিপিন্স এর অন্যতম ব্যবহারকারী দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে। তাছাড়া অদূর ভবিষ্যতে পাকিস্তান ৩০টি এই জাতীয় চপার তাদের বহরে সংযুক্ত করতে পারে। অন্যদিকে বাহারাইন, মালয়েশিয়া, মরক্কো, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত টি-১২৯ কমব্যাট হেলিকপ্টার সংগ্রহের ব্যাপারে প্রবল আগ্রহ দেখিয়েছে।#